Site icon Book PDF Down.com

অলাতচক্র PDF Download আহমদ ছফা

“অলাতচক্র” উপন্যাসটি একটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। এ উপনাসটির লেখক আহমেদ ছফা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখনো পর্যন্ত যত উপন্যাস রচিত হয়েছে ‘অলাতচক্র’ তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক নিপুন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই বইটির প্রকাশক মুক্তধারা।

এই উপন্যাসটিতে আহমেদ ছফা মুক্তিযুদ্ধের চিরাচেনা রুপের বাইরেও আরো বেশি কিছু দেখিয়েছেন।

উপন্যাসের মূল চরিত্র দানিয়েল নামের একজন তরুণ লেখক। তার জবানীতেই লেখা পুরো উপন্যাসটি। মূলত তার আত্মকাহিনী বলা যেতে পারে। দানিয়েল ছিলেন রাজনীতি তে সম্পৃক্ত একজন মানুষ৷ এছাড়াও লেখালিখিও করতেন।

অলাতচক্র আহমদ ছফা

লেখালিখির সুত্র ধরেই তায়েবার সাথে তার পরিচয় গড়ে ওঠে৷ তায়েবা একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমতি এবং প্রগতিশীল নারী। তার বিচারবুদ্ধি এবং বিশ্লেষন ক্ষমতা অসাধারণ। পরিচয়ের মাধ্যমেই বন্ধুত্ব।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শরনার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় দানিয়েল কে। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার খুব ইচ্ছা থাকলেও তাকে যোগ দিতে দেওয়া হয় না। বলা হয় যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী তে যোগ দেওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই দানিয়েলের।

এভাবে নিরুৎসাহিত করা হলে দানিয়েল বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন এভাবে–“আমার যুদ্ধে যাওয়া হয়নি। যুদ্ধকে ভয় করি বলে নয়। যে সকল মানুষের যুদ্ধের দায়িত্ব, তারা আমাকে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠাবার উপযুক্ত বিবেচনা করতে পারেন নি।”

এদিকে তায়েবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকেও ভর্তি করা হয় কলকাতায় হাসপাতালে। দানিয়েল ও রাজনৈতিক কারণে মিশতে থাকেন বিপ্লবী নেতাদের সাথে। কখনো কখনো আবার একটি চাকরির আশায় ঘুরে বেড়ান মানুষের কাছে।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে কিংবদন্তি সব কাহিনির।

কিন্তু এই সকল গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা সমূহের আড়ালে যেসকল কদাকার কাহিনী লুকিয়ে ছিলো সেসবই ছফা তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসটি তে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের অপরিসীম অবদানের কথা আমরা সবাই জানি৷ কিন্তু এই বইটি পড়লে পাঠক জানতে পারবেন কিছু কিছু কথিত সাংবাদিক কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দিনের পর দিন মিথ্যাচার করে গেছে৷

একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফিল্ড ওয়ার্ক না করেই লিখে যেতেন মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা নিয়ে৷ ছফা শুধু এসব সাংবাদিকদের মুখোশই খুলে দেননি। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে নেতাদের দ্বারাও অপকর্ম সংগঠিত হয়েছে এই সময়ে৷ বাংলাদেশের মানুষ যখন যুদ্ধের ভয়াবহতায়

আর আতঙ্কে দিন যাপন করছে,শরনার্থী শিবিরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে ঠিক সেই সময় কিছু কিছু নেতা কলকাতায় ঘাপটি মেরে বসে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলেন। এমনকি এক নেতাকে কলকাতার নিষিদ্ধপল্লীতেও যাতায়াত করতে দেখা যায়।

এছাড়াও বাংলাদেশের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাও তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে। তারা সবসময় নিজের স্বার্থের পক্ষে যে কাজটি ভালো সেটাই করেছেন। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথাই ছিলো না। এছাড়াও এই উপন্যাসে লেখক আরো অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন।

তিনি দেখিয়েছেন ভারতের মানুষ সেই সময় বাংলাদেশের শরনার্থীদের প্রতি কি ধরণের মনোভাব পোষণ করতো।

অলাতচক্র PDF

এসকল বিষয় ছাড়াও লেখক এই উপন্যাসটিতে কঠিন সময়েও মানুষের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। নিজের কাজ এবং যুদ্ধের এই ডামাডোলের মাঝেও দানিয়েল অসুস্থ তায়েবা কে নিয়মিত হাসপাতালে দেখতে গেছেন, তায়েবার আবদারে তার জন্য মশলাযুক্ত খাবার নিয়ে গেছেন, হাসপাতলের নিয়ম ভেঙে তার কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছেন, তায়েবার শারিরীক অবস্থা নিয়ে ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করেছেন।

এভাবে লেখক দানিয়েল এবং তায়েবার সম্পর্কের গাঢ়তা প্রকাশ করেছেন। পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখক যুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন দানিয়েল এর জীবনকাহিনীর মাধ্যমে।

অলাতচক্র PDF

কিন্তু শেষের দিকে এসে মূলত যুদ্ধ নিয়ে লেখকের নিজস্ব চিন্তা এবং মতামতেরি প্রকাশ দেখতে পাবেন পাঠক৷ ইতিহাস, রাজনীতি এসব বিষয় নিয়ে যে সকল পাঠকের আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্য এই উপন্যাসটি আকর্ষনীয় একটি বই। আর নিজ দেশের ইতিহাস নিয়ে রচিত বই হলে তো কথাই নেই। পাঠকের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই ই বলা চলে।

Exit mobile version