আরশিনগর PDF Download সাদাত হোসাইন

আরশিনগর’ উপন্যাসটির রচয়িতা ‘সাদাত হোসাইন’। বাংলাদেশের বর্তমান সাহিত্য অঙ্গনে এক উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠেছেন সাদাত হোসাইন তার লেখার মধ্য দিয়ে। বড় বড় উপন্যাস, চমৎকার উপস্থাপন ও প্রচুর বর্ণনার সমাগমে তার রচিত উপন্যাসগুলো পাঠকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
 
শুধু মাত্র কাগজে কলমে কিছু শব্দ লেখলেই সাহিত্যের সৃষ্টি হয় না, তার জন্য প্রয়োজন সঠিক উপাদানগুলোর সংমিশ্রণ। আর এই সংমিশ্রণ ঘটাতে সাদাত হোসাইন কতটা পটু তা এই উপন্যাস থেকেই বোঝা যায়। লেখক বরাবরই তার লেখায় অতি সরল ও সাধারণ গল্পকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করে থাকেন।
 
মানুষের জীবনে সম্পর্কগুলোর রঙ সাদাত হোসাইন যেভাবে তুলে ধরেন তা সত্যিই অনবদ্য। এই উপন্যাসটি ২০১৬ সালে ‘ভাষাচিত্র প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসটির প্রেক্ষাপটের মূলে ‘আরশি’ নামক একটি চরিত্র থাকলেও, উপন্যাসটি শুধু একটি চরিত্রের উপর ভিত্তি করে রচনা করা, এটি ভাবলে পাঠক ভুল করবেন।
 
উপন্যাসটিতে লেখক অনেকগুলো চরিত্রের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। প্রত্যেকটি চরিত্রকে দিয়েছেন অন্যন্যতা। আবার প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথে প্রত্যেকটি চরিত্রের কোন না কোন সংযোগ রয়েছে। উপন্যাসটিতে যেমন রয়েছে আরশির কাহিনী, যার মা তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়লে তার বাবা মজিবর আরেকটি বিয়ে করে।
 
মজিবরের দ্বিতীয় বউয়ের নাম হলো লাইলি। দুশ্চরিত্রা লাইলিকেই কেন বা মজিবর বিয়ে করেছিলো তাও একটি রহস্য বটে। এসবের মাঝেই আরশির একটি সৎ বোন পৃথিবীতে আসলে লাইলি তার আসল চরিত্র দেখাতে শুরু করে। মা হারানো আরশির জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কিন্তু আরশির জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে যখন লতু হাওলাদার মজিবরের পা কেটে দেয়।
 
লতু আবার নিজে মজিবরের পা কাটে না, সে ষড়যন্ত্র করে কমিউনিস্ট পার্টিকে দিয়ে এই কাজ করায়। কমিউনিস্ট পার্টির উপনেতা লোকমান ও তার দলবল এই ঘৃণ্য কাজটি করেছিলো। এসব ঝামেলার মধ্যে নতুন ঝামেলা হয়ে ওঠে লাইলি ও লোকমানের পরকীয়া। এই পরকীয়া একদিন আরশি দেখে ফেললে লোকমান তাকে ধাওয়া করে, তখন আরশির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন ইমাম সাহেব।
 
উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হলেন শুকরঞ্জন ডাক্তার, তার স্ত্রী এবং তাদের একমাত্র ছেলে আশিষ। শুকরঞ্জন একজন দেশপ্রেমিক মানুষ, দেশ ও দেশের মানুষের সেবাকেই তিনি তার জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে মেনে চলেন। অন্যদিকে আশিষ আবার বিয়ে করে একটি মুসলিম মেয়ে মিলির সাথে।
 
শুকরঞ্জন ডাক্তার তা মেনে নিলেও তার স্ত্রী তা মেনে নেননি। এরকম আরো বহু চরিত্র তাদের জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাস। উপন্যাসটির অন্যতম বিষয় হলো ট্র্যাজেডি, প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথেই কোন না কোন ট্র্যাজেডি সম্পর্কযুক্ত যা পাঠকদের মনকে উদ্বেলিত করবে।
 
উপন্যাসটি আমাদের বর্তমান সমাজের প্রতিরূপ ও বটে, বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও দুর্গতি লেখক তার উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। ২৭২ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি পড়তে শুরু করলে কখন শেষ হয়ে যায় তা বোঝাই যায় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top