ওপার বাংলার একজন জনপ্রিয় লেখিকা হলেন ‘সায়ন্তনী পূততুন্ড’। কঠিন নাম! শুধু ওপার বাংলাতেই না, আমাদের এই বাংলায় অনেকেই তার ভক্ত! তিনি যে অসাধারণ লিখেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত থ্রিলার লিখেন। এই থ্রিলারের মধ্যেই তার একটা থ্রিলার ‘চুপি চুপি আসছে’। বইটি প্রকাশ হওয়ার পর পরই দুই বাংলাতেই সাড়া ফেলেছে। এবং এখনও সেটা চলছে! এমন বইটি যারা এখনো পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
সময়টা ১৯৮৬ সাল।কলকাতা শহরে একই দিনে বিভৎসভাবে খুন হয়ে যায় পাঁচটি মানুষ। সবগুলো লাশকে ডাম্প করা হয় পাঁচটি পুলিশ স্টেশনের সামনে। লাশগুলো ছিল ছিন্নভিন্ন, মনে হয় কোন প্রাণী নখের আঁচড়ে তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। কিন্তু কোন লাশের মাথা ছিল না। সে জায়গায় বসানো ছিল একটি করে হাড়ি যেখানে লেখা ছিল ‘গেস হু?’
স্বাভাবিকভাবেই পুরো কলকাতা শহরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পুলিশের এক অফিসার তদন্তের নামলে তাকেও ঠিক একই ভাবে খুন করে পুলিশ স্টেশনের সামনে তার লাশটাকে ডাম্প করা হয়। ফরেনসিক থেকে সেই একই রিপোর্ট, আর্টারি কেটে খুন, যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু; পেরিমর্টেম সেক্সুয়াল অ্যাসাউল্ট এবং সার্জিক্যাল স দিয়ে মাথা কেটে ফেলা।
দ্বিতীয় ইনভেস্টিগেটিং অফিসার চার্জ বুঝে নিলে তারও ঠিক এরকম লাশ পাওয়া যায় পুলিশ স্টেশনের সামনে। এইবার পুরোপুরি দমে যায় গোয়েন্দা বিভাগ। কেউই এই কেসটাকে নিয়ে আর এগোতে চায়না। ফাইল কিছুদিনের জন্য ক্লোজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ডাকসাইটে নামকরা এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট রথীন দাশ গুপ্ত এই কেসটি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। স্বভাবতই অনেক ঝামেলার পরে কেসটি হাতে পেয়ে রথীন দাশ গুপ্ত তার সহকারি শিশির সেনকে নিয়ে এই কেস সলভের কাজে নেমে পড়ে।
ফলে খুনির পক্ষ থেকে শুরু হয়ে যায় রথীন দাশ গুপ্তের জন্য কাউন্টডাউন। একদিন ভোরে রথীন দাশগুপ্তের ঠিক এরকম হাড়ি বসানো মাথা কাটা লাশ পাওয়ার পরে কেসটি পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
প্রিয় স্যারের মৃত্যুর ঠিক ৩২ বছর পরে শিশির সেন আবার এই কেস ফাইল ওপেন করেন। এইবার কেসটি দেওয়া হয় গোয়েন্দা বিভাগের তরুণ তুখোড় অফিসার অধিরাজ ব্যানার্জীর হাতে। অধিরাজ ব্যানার্জি তার সহকারীর অর্ণব কে নিয়ে এই কেসটির শেষ খুঁজতে নেমে পড়ে। একেতো ৩২ বছর আগের কেস তার উপর যেই খুনি ধরা পড়েছিল সে একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ার। মিথ্যা ভাষণ দেয়া এই মানুষগুলোর জন্য নির্লিপ্ত মিথ্যায় বুঝাও যাচ্ছে না যে, আসল খুনি কে?
এদিকে অধিরাজ ব্যানার্জির কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। কাউন্টডাউন লেখার জন্য তার আশেপাশের যারাই থাকছে তাদেরকে খুন করে তাদের বুকেই কাউন্টডাউন এর সংখ্যা গুলো লিখে দিচ্ছে খুনি। একদিকে সময় কম অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবেই ঘোলাটে হচ্ছে সবকিছু। কিভাবে খুঁজে বের করা সম্ভব এই ভয়ঙ্কর খুনি কে?
প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে বইটি!
একদম এক বসায় পড়ে ফেলার মত একটি বই। কোন অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার নিয়ে লেখিকা বাড়াবাড়ি করেন নি। এমনকি গল্পটিকে বড় করার জন্য কোনো অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার লেখিকা টেনে আনেন নি। গল্পের মূল ডিটেইলিং এ নজর দেওয়া হয়েছে।
লেখিকা লিখনী ও লেখার ভাষাও বেশ সাবলীল।
তবে চরিত্রের কথা যদি বলি, তবে বলতে হয় মূল চরিত্রগুলোকে খুব যত্নের সাথেই গড়েছেন। পার্শ্বচরিত্র যেগুলো আছে সেগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু লেখিকা তার লিখনী দিয়ে সবকিছু ভুল মুছে ফেলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। এবং সেটা হয়েছেও। আর বইয়ের প্লটটা একদম অসাধারণ।
সবশেষে বলবো, এক বসায় কোনো রোমাঞ্চকর থ্রিলারে ডুবে যেতে বইটি পড়ে ফেলতে পারেন।