বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত অসাধারণ একটি উপন্যাস হল ‘ হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’। অসাধারণ এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। বইটির প্রকাশক হল দিব্যপ্রকাশ এবং বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২ টি। এই উপন্যাসটি হিমু ধারাবাহিকের ৬ষ্ঠ উপন্যাস।
হিমু হল হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি জনপ্রিয় চরিত্র। হিমু সিরিজের সবগুলো বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিমু। হিমু সব সময় চেয়েছে মহাপুরুষ হতে। তার কাজকর্ম গুলো সব অদ্ভুত ধরনের, যেমন- রাত বিরাতে রাস্তায় হাটাহাটি করা, কারণ ছাড়া নানা রকম ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া, উদ্ভট রকমের চিন্তা ভাবনা করা ইত্যাদি। এক বার বই মেলায় গিয়ে তার সাথে পরিচয় হয় আসাদুল্লাহ সাহেবের সাথে।
আসাদুল্লাহ সাহেব একজন বই প্রেমি মানুষ। তিনি মনে করেন প্রত্যেকটা মানুষের কাছে ৫টি করে নীলপদ্ম রয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে এই নীলপদ্ম একটি অথবা সব কয়েকটি যে কাওকেই দিতে পারে। যদি সব পদ্ম গুলো একজন কেই দিয়ে দেয় তাহলে সে আর অন্য কাওকে ভালো বাসতে পারে না। অনেকেই তার কথা বিশ্বাস করে আবার কেউবা করেনা। হিমুর সাথেও তার এই বিষয়ে কথা হয়।
আসাদুল্লাহ সাহেবের সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাদে হিমু তার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে তার পরিচয় হয় আসাদুল্লাহ সাহেবের মেয়ে মিতুর সাথে। হিমুকে দেখেই কিশোরী মিতুর মনে হিমুর জন্য ভালোবাসা জাগে। মিতু হিমুকে সাংকেতিক ভাষায় চিঠি লেখে। সেই চিঠির রহস্য খুঁজে বের করে হিমুর একনিষ্ঠ ভক্ত তার খালাতো ভাই বাদল। কিন্তু হিমু সেই চিঠির রহস্য শুনতে চায় না।
পাঁচ বছর পর আবার হিমুর সাথে মিতুর রাস্তায় দেখা হয়ে যায়। হিমু সেই চিঠির উত্তর দিতে চাইলে মিতু চিঠি ফিরিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারে এটা তার কিশোরী বয়সে মনের আবেগ ছিল। তারপর হিমুর আজগর আলির সাথে দেখা হয়ে যায়। আজগর আলি হাসপাতালে বসে হিমুর জন্য অপেক্ষা করে৷ এরপর হিমু তাকে একটি সাংকেতিক ভাষায় চিঠি লিখতে বলে।
যেখানে লিখা থাকে একটা তারা, চারটি তারা এবং তিনটি তারা। কিন্তু হিমু সেই চিঠি না নিয়েই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর আর কখনো আজগর আলির সাথে তার দেখা হয় না। এরপর হিমু নানা ধরণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার হিমু আজগর আলির পরিবার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে পুলিশ তাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম’ এই উপন্যাসে লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার অসাধারণ উপন্যাস লেখনীর ধরণ দেখিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রতিটি উপন্যাসে সুনিপুণ দক্ষতা ও শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন। তার উপন্যাসের মূল অভিযাত্রী হল হিমু। হিমুর মাধ্যমে তিনি প্রকাশ করেছেন সমাজের বাধা, বিপত্তি, সীমাবদ্ধতা, অসহায়তা, মায়া, মমতা কাটিয়ে কীভাবে জীবন পরিচালিত করতে হয়।
আলাদা মানুষ হিসেবে কীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তিনি ভিন্ন ভাবে হিমুকে উপস্থাপন করেছেন মানুষের সামনে যা মন জয় করেছে। তাই ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম’ অসাধারণ এই বইটি সকলের পড়া উচিত।