লেখক দিবাকর দাস এ সময়কার একজন উদীয়মান লেখক। তার প্রায় ৭ টার মত বই বেড়িয়েছে। যার প্রত্যেকটাই কম বেশি পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সব থেকে বেশি যে বইটা জনপ্রিয় হয়েছে সেটা হলো ‘হরবোলা’। বেশ ভালোই জনপ্রিয়তা পায় বইটা। দেশিয় প্লটে মূলত এসপিওনাজ থ্রিলার। যেটা নিয়ে কাজ হয়েছে খুব কম। সেটা নিয়েই কাজ করেছেন লেখক। দারুণ এই বইটা না পড়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
আর্মির গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ শাখার এক জুনিয়র অফিসার মাহতাবকে দেওয়া হলো ড্রাগ ডিলিঙের জটিল এক কেস ফাইল। সেই সাথে দেওয়া হয় তার তিন সিনিয়র ও দুই জুনিয়রদের সংমিশ্রণের পাঁচজনের অদ্ভুত টিম। যাদের নেতৃত্ব দিবে মাহাতাব। শুরুতেই দুইজন সিনিয়র কেসটির সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে না পেয়ে সুক্ষ্মভাবে নিজেদের সরিয়ে নিলেও সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
বাকিদের নিয়ে কেস স্টাডির পরে দাঁড় করানো একোটি হাইপোথিসিসের ভিত্তিতে ফিল্ডে নেমে যায় মাহাতাব ও তার দুই জুনিয়র। এরপরেই ঢাকা শহরে একের পর এক ঘটতে থাকে বিভিন্ন ঘটনা। যেগুলোর ঘটানোর জন্য দীর্ঘ কয়েকটি বছর অপেক্ষায় ছিল পাহাড়ের বুক থেকে উঠে আসা আতঙ্কবাদী নেতা বিজন সাহু।
আমাদের দেশে এসপিওনাজ থ্রিলার নিয়ে যা দুই একটা কাজ হয়েছে তা সবই বিদেশি প্লটে। এই দেশিয় প্লটে এমন বই নাই বললেই চলে। বইটা শেষ করে বলতেই হচ্ছে অসাধারণ একটা প্লট। শুরু থেকেই চুম্বকের মতো আকর্ষণ করেছে উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ এবং লেখকের লেখনী। শুরুতে উপনাসের প্লটটাকে দূর্বল মনে হলেও শেষের দিকে যতো এগিয়েছি ততোই শক্তিশালী হয়েছে উপন্যাসের প্লট। যার ফলে চাইলেও বই সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
লেখনীর ব্যাপারে বললে দেখা যাবে, লেখক চেষ্টা করেছেন গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে নতুন একটা ধারা আনতে। খুত খুতে পাঠকরা বিরক্ত হবেন, কিন্তু এখানে লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। বইয়ের তেত্রিশটি অধ্যায়ের প্রতিটিতেই কম বেশি ঘটনা ও পরিস্থিতির যে বর্ণনা রয়েছে তা কোনোভাবেই বিরক্তির উদ্রেক করেনি। বরং পুরো সময়টা চোখের সামনে ঘটনা প্রবাহ স্বচ্ছভাবে ভেসে উঠেছে।
উপন্যাসটির বড় একটা বিষয় ঘটনা প্রবাহের সময়ের উল্লেখ না করা। লেখক এখানে চেষ্টা করেছিলেন, ঘটনা প্রবাহের সময়ের ব্যাপারটা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে উপন্যাসের একদম শেষে এসে সেটি উন্মোচন করতে। যা গতানুগতিক ধারার বাইরেই বলা যায়। তবে সময় উল্লেখ করা প্রয়োজনে ছিল লেখকের। কেননা, সেটা প্রথমে উল্লেখ না করায় মনে হয়েছে এই ঘটনাটা মনে হয় অতীতের!
শেষে এসে ক্লিয়ার করেছেন যদিও কিন্তু লেখনীর কারণে বর্ণনাভঙ্গি ও ঘটনা বা পরিস্থিতির ডিটেইলিঙের ব্যাপারে সফল হলেও এই ক্ষেত্রে সফল হতে পারেননি। সুনির্দিষ্ট সময়টা উল্লেখ না থাকায় প্রায় একশ পৃষ্ঠা পড়ার পরে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। যেগুলো শুরুতে বেশ অস্পষ্ট ছিল। কিন্তু আমি মনে করি, থ্রিলার উপন্যাসের থ্রিলটাই হচ্ছে অস্পষ্ট বিষয়গুলোর স্পষ্টতা খুঁজতে কাহিনির শেষের দিকে এগিয়ে যাওয়া। লেখক এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করেই আগাতে চেয়েছিলেন বলে মনে হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য তিনি পুরোপুরি সফলই বলা চলে।
বইটা ছোট এই ১৬০ পৃষ্ঠার মত হবে কিন্তু চরিত্র বিল্ড আপ করতে লেখকের তেমন সমস্যা হয় নি। লেখক সুনিপুণ ভাবে চরিত্র গুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এই চরিত্রের ব্যাপারটা লেখকের অন্যান্য বইয়েও দেখেছি। তিনি দারুণ ভাবে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেন।
সবশেষে বলবো, সম্পূর্ণ নতুন ধারার একদম অন্যরকম কোনো বই পড়তে চাই এই বইটা অবশ্যই সুখপাঠ্য হবে