Site icon Book PDF Down.com

ক্রীতদাসের হাসি PDF Download শওকত ওসমান

ক্রীতদাসের হাসি PDF Download শওকত ওসমান

ক্রীতদাসের হাসি PDF Download শওকত ওসমান, ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটির রচয়িতা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান। এই উপন্যাসটি ১৯৬২ সালে রচনা করা হয় এবং প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। এর প্রথম প্রকাশক ছিলো ওয়ার্সী বুক সেন্টার। এই বইটিকে অনেকে আরব্যরজনীর ‘আলিফ লায়লা ওয়া লায়লানে’ বইটির সর্বশেষ গল্প ‘জাহাকুল আবদ’ এর অনুবাদ মনে করলেও লেখক এই ভ্রান্তি দূর করেছেন।

ক্রীতদাসের হাসি রিভিউ

এই বইটি আসলে ১৯৫৮ এর আইয়ুব খানের জারী করা সামরিক শাসন এবং তার একনায়কতান্ত্রীকতার পটভূমিতে রচিত একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হিসেবে পাঠক দেখতে পাবেন একজন হাবসী গোলাম তাতারী কে। এছাড়া খলিফা হারুণ অর রশিদ এবং বাঁদী মেহেরজানকেও পাঠক উপন্যাসের অন্যতম মূল চরিত্র হিসেবে দেখতে পাবেন।

উপন্যাসের শুরুতে দেখা যাবে বাগদাদের খলিফা হারুণ অর রশীদকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক রুপেই লেখক অঙ্কন করেছেন। তাঁর স্বেচ্ছাচারী, অত্যাচারী মনোভাবের কারণে প্রজারা সর্বক্ষণ ভয়ে তটস্থ থাকে। তাঁর এই অত্যাচারী মনোভাবের থেকে নিস্তার পায়নি তাঁর বোন আব্বাসাও। এর জন্য অবশ্য তিনি পরে অনুতপ্তও হন।

ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের উপজীব্য

নিজের কৃতকর্মের জন্যে মানসিক অশান্তি কে ভুগতে থাকেন। যাদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করেছেন তাদের স্মৃতি খলিফাকে শান্তি পেতে দেয় না। জীবন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে খলিফা হারুণ অর রশিদ এর। এত বিত্ত এত বৈভব, শান-শওকত দাস-দাসী দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকেও খলিফা কিসের যেন অভাববোধ করেন সারাক্ষণ।

তিনি বুঝতে পারেন এই অভাবটি একমাত্র পূরণ হতে পারে মানসিক শান্তি লাভের দ্বারা। কিন্তু তিনি তো মানসিক শান্তি ভুলতে বসেছেন দীর্ঘদিন ধরে, ভুলে গিয়েছেন হাসি কী জিনিস। তাই তিনি অন্তর্জ্বালায় জ্বলতে থাকেন সর্বক্ষণ।একদিন রাতে বাদশাহ তার অধীনস্থ জল্লাদ মশরুর এর সাথে বাগানে হাঁটছিলেন৷ হঠাৎই তিনি শুনতে পান মনোহর হাসি।

এত আশ্চর্য সুন্দর হাসি তিনি আগে কখনো শোনেননি। তিনি মুগ্ধ হয়ে যান আর ভাবতে থাকেন এত চমৎকার হাসির উৎপত্তি কোথায়। তখন বাদশাহ জানতে পারেন এই হাসি ভেসে আসছে গোলাম তাতারী এবং বাঁদী মেহেরজানের কাছ থেকে। তাতারী এবং মেহেরজান পরস্পরকে ভালোবাসতো। বাদশাহর অনুমতি ছাড়া কোন গোলাম বিয়ে করতে পারতো না কিন্তু তারা বাদশাহর অগোচরেই বিয়ে করে নেয়।

ক্রীতদাসের হাসি নামকরণ

সারাদিন কাজের ক্লান্তির পর তারা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একে অপরের সাথে দেখা করতে আসে। সেই সময় তারা দুইজন জগতের সব দুঃখ,বেদনা,পাওয়া-না পাওয়া ভুলে মেতে ওঠে আনন্দে। স্থান-কাল ভুলে হাসির ফোয়ারা ছোটায়। সেই হাসিই একদিন হারুণ অর রশিদের কর্ণগোচর হয়। বাদশাহ তখন তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলেন।

তাতারী এবং মেহেরজান এই ঘটনার আকস্মিকতায় অত্যন্ত ভীত হয়ে পরে। কিন্তু বাদশাহ তাদের ভয় পেতে না করেন এবং তখনই তাদের আজাদ ঘোষণা করে দেন। কিন্তু এর কারণ কী ছিলো? এর কারণ হিসেবে জানা যায় বাদশাহর অভিপ্রায় ছিলো তাতারীকে তিনি গোলামী থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে হাসি শোনানোর কাজ দেবেন ৷

ক্রীতদাসের হাসি Rokomari

শুনতে খুবই অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি যে বাদশাহ তাতারীকে তখনই গোলামর হতে অব্যাহতি দেন এবং বাগদাদ শহরের পশ্চিমে একটি বাগিচার মালিক করে দেন। অজস্র ধনসম্পদে তিনি তাতারীকে ভরিয়ে দেন৷ তবে শর্ত থাকে বাদশাহ যখনই চাইবেন তখনই তাঁকে তাতারীর হাসি শোনাতে হবে এবং মেহেরজানের অতুলনীয় রুপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের বেগম বানিয়ে নেন।

এভাবে নিজের জীবনে হাসি আনতে তিনি চিরতরের মতো তাতারীর জীবন থেকে হাসি কেড়ে নেন। অঢেল ধন সম্পদ আর বাদশাহী পুরস্কার পেলেও তাতারী তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটিই হারিয়ে ফেলে। সেটা হলো মেহেরজানের ভালোবাসা। এরপর বাদশাহ বহুবার তাতারীর হাসি শুনতে চাইলেও তাতারী তাঁকে হাসি শোনায়নি ৷

পুরস্কার, অত্যাচার কোনকিছুর বিনিময়েই আর হাসানো যায় নি তাতারীকে৷ এরমধ্যেই ঘটে যায় আরো কিছু চমকপ্রদ কাহিনী। ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটিতে তাতারী-মেহেরজান এর কাহিনীর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে চরম এক সত্য। টাকা- পয়সা,ধন-দৌলত কোন কিছু দিয়েই যে পৃথিবীতে সুখ কেনা যায় না সে কথাই উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে।

আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান যখন মার্শাল ল জারি করেন তখন তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ শুধু তার কথাতেই কথা বলবে, তার ইচ্ছাতেই কলের পুতুলের মতো পরিচালিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেননি।

Krito Faser Hasi PDF

তারা এই উপন্যাসের নায়ক তাতারীর মতোই প্রতিবাদে অনড় থেকেছে। শাসকের অত্যাচারকে ভয় পায়নি। কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই শাসনামল কেই ব্যঙ্গ করেছেন ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটির মাধ্যমে যা পাঠকদের আকর্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম রয়েছে আজও ৷

Exit mobile version