মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলামের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে নারীদের অবস্থান, দারিদ্র, ক্ষুধা, মৃত্যু এসব বিষয় নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। এই কালজয়ী উপন্যাস উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মেজ বউ। তার নাম রুবি।
যে বিবাহের কিছুকাল পরেই বিধবা হয় এবং দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে নিজের সন্তানের মৃত্যু অবলোকন করতে হয়। মেজ বউ এর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর অসহায় নারীদের চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে। তবে নিম্ন শ্রেণীর অসহায় বলে মনে হলেও তার চরিত্রের কিছু শক্তিশালী দিক ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসটিতে।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রুবি আনসার নামে একজন যুবককে ভালোবাসতো কিন্তু সমাজের বিভিন্ন বাধানিষেধ ও পিতার আমাদের কারণে সে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। তার এক অর্থলোলুপ যুবকের সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পরেই বিধবা হতে হয় রুবিকে।
নিজের সন্তান নিয়ে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে থাকে। সন্তানের মুখে সামান্য আহার যোগাড় করতে ব্যর্থ হয় সে। রোগীর প্রতি বেশিরভাগ চরিত্র হলেও তার সংগ্রামী জীবনের কষ্ট কোনোভাবেই কম হয়নি। তারপরেও সময়ের সাথে প্রাণপনে এগিয়ে যায় সে।
সমাজের নিচু শ্রেনীর এক অসহায় মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও চারপাশের কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টি থেকে নিজেকে সে বরাবরই অত্যন্ত কৌশলে আগলে রাখে। কিন্তু সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য রুবি হঠাৎই ধর্মান্তরিত হয়। সে খ্রিস্টান হয় তারপর একদিন হুট করে চলে যায় বরিশালেএবং পুনরায় ফিরে আসে এবং সন্তানের মৃত্যু স্বচক্ষে দেখতে হয় তাকে।
মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ক্ষুধা ও অসুস্থতা। সুন্দরী সদ একজন ভালো মা হওয়া সত্বেও জীবনযুদ্ধে হেরে যায় রবি উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশে আমরা রুবির পুরনো প্রেমিক আনসারের দেখা পাই সে দেশের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করে এবং কৃষ্ণনগরের তাদের বাড়িতে অবস্থান নেয়। আনসারের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ হয় রুবির।
তাদের মাঝখানের বিচ্ছেদ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে ভালোবাসা কোন অংশে কম ছিলনা একে-অপরকে ভালোবাসতো হঠাৎই রাজবন্দীর আনসার কে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে বন্দি অবস্থায় তার যক্ষা হয় চিকিৎসার জন্য সে ফিরে আসে ওয়াল্টেয়ারে। এ সবকিছু জানতে পেরে রুবি সেবা করার জন্য ছুটে যায় আনসারের কাছে নিজেকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে ফেলেদিতে সামান্য কুন্ঠিত বোধ করেনা সে।
অনেক চেষ্টা করেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে না আনসারকে। তাই একপর্যায়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয় আনসার কে এবং উপন্যাসের শেষে আমাদের সংগ্রামী চরিত্র রুবি ও মারা যায়। রবি শুধু কোন সামান্যা নারী চরিত্র নয় বরং সে সমাজের নিপীড়িত, সমাজ প্রথার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত এক নারী চরিত্র। শত চেষ্টা করেও সে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে হেরে যায় এবং পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
উপন্যাসটিতে লেখক কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে চরিত্র অঙ্গন করেছেন এবং প্রধান চরিত্র কিভাবে তার ট্রাজেডির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন তা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। তাই এত সুন্দর একটি উপন্যাস অবশ্যই প্রতিটি পাঠক পাঠিকার অধ্যায়ন করা উচিত।