বর্তমানের অন্যতম একজন সেরা লেখক হচ্ছেন ‘দিবাকর দাস’। যদিও অনেকে তাকে চিনেন না কিন্তু পাঠক মহলে তার বেশ সুনাম আছে। এই পর্যন্ত তার সাতটা বই বেড়িয়েছে। আর সবথেকে মজার ব্যাপার হলো তার পাঁচ নম্বর বইটির নাম ‘পঞ্চম’। বিষয়টা কতটা কাকতালীয় বুঝতে পারছি না, কিন্তু খুব অবাক হয়েছিলাম ব্যাপারটা জেনে
সে যাই হোক, বইটা মূলত মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার। খুব একটা বড় বই না। কিন্তু বেশ বুদ্ধিদীপ্ত! পড়লেই বুঝবেন। বইটা যারা পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ ফাইল পড়ে ফেলতে পারেন অনায়েসে।
কাহিনী সংক্ষেপ
ঢাকার এক অভিজাত এলকায় বসবাস করেন কামরুল হাসান। সমাজ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এবং আত্মকেন্দ্রিক কামরুল হাসান একদিন মধ্যরাতে নিজ বাসায় নিঃসংশ ভাবে খুন হন। পুলিশ ঘঠনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় আটক করে এক কিশোর কে। পুলিশের সন্দেহ কাজ টা কিশোরের।
কিন্তু পাশার দানা পুরোপুরি উল্টে গেলো যখন ফরেন্সিক রিপোর্টে দেখা যায় মার্ডার ওয়েপেনে আংগুলের ছাপ কামরুল হাসানের বাসার দারোয়ান বাদশা মিয়ার! কিন্তু…নিজের মনিব কে কেনই বা খুন করতে যাবে বাদশা মিয়া??
ব্যক্তিগত কোন আক্রশ থেকে ? পরবর্তিতে পুলিশ বাদশা মিয়া কে আটক করে কিশোর কে ছেড়ে দেয়।
এইদিকে আবার পুলিশ খুনের কোন কুল কিনারা করে উঠার আগেই কেস টি হ্যান্ড ওভার করা হল ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস বা এনএসআই এর উপর। তদন্তে নেমে গেলো এনএসআই এর দুই ডিটেকটিভ সোহেল এবং তার সহকারী সোহান।
কিন্তু তদন্তে নেমে ধন্দে পড়ে গেলো দুই ডিটেকটিভ। সহজ সরল মনে হওয়া মার্ডার কেস টি যেন সময়ের সাথে হয়ে উঠে এক গোলক ধাঁধায়।
বাদশা মিয়াকে প্রাইম সাস্পেক্ট ধরা হলেও সূত্র মিলছে নাহ অনেক কিছুরই। তাহলে?
কেন খুন হতে হলো কামরুল হাসানকে? কে খুন করলো?
সোহেল আর তার সহযোগী সোহান কি পারবে এই গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে কেস টা সমাধান করতে নাকি আনসলভ কেসের তালিকায় থেকেই কেস টা বন্ধ হয়ে যাবে? রহস্যের জট কি খুলনে আদেও? কিছুই তো বলা যাচ্ছে না! বাকিটা জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে জমজমাট এই মার্ডার মিস্ট্রি বইটি ‘পঞ্চম’।
আগেই দিবাকর দাসের পঞ্চম বই টির নাম হচ্ছে ‘পঞ্চম’! হতে পারে কাকতালীয় ব্যাপার। যারা নিয়মিত থ্রিলার পাঠক তাদের কাছে প্রাথমিক ভাবে সাধারণ একটা মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার বলেই মনে হবে ‘পঞ্চম’ কিন্তু এখানেই লেখক বেশ ভালই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।একটা সাধারন প্লট কে কিভাবে জটিল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বইটা না পড়লে বোঝা কঠিন! এখানেই মূলত তার সার্থকতা। আর এজন্যই পাঠকদের কাছে সমাদৃত।
এক বসাতেই শেষ করার মতো একটা বই। এই বই তে টান টান উত্তেজনা কর তেমন কিছুই নেই তবে লেখক সাবলীল ভাবে লিখে যাবার কারনে পাতার পর পাতা চোখ বুলিও ক্লান্ত লাগে নি আমার। আর আগেও বলেছি বইটা বেশ বুদ্ধিপ্ত। এই বইটা পড়ে উপলব্ধি করলাম এ পৃথিবীতে তথ্যই সব। যার কাছে রয়েছে তথ্য তার রয়েছে অর্থ ও ক্ষমতা।
লেখকের এর আগে আরও তিনটা বই পড়া হয়েছে। সবগুলো বইয়েই তিনি চরিত্রগুলোকে বেশ ভালোভাবে ফুটিয়েছেন। কিন্তু ‘পঞ্চম’ বইয়ে চরিত্রে কিছুটা ঘাপলা রয়েছে। যদিও তেমন কোনো একটা সমস্যা হয় নি। কারণ লেখক তার লিখনশৈলী আর তথ্য দিয়ে ওই জায়গাটা পুরোন করেছেন! কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়, এই চরিত্রে তিনি যদি আর একটু নজর দিতেন তাহলেই হয়তো বইটা মাস্টারপিস হতে পারতো।
সবশেষে বলবো, মাস্টারপিস হয়তো হয় নি। কিন্তু মস্তিষ্কের খোরাক আর ভালো একটু সময় কাটাতে বইটা পড়তে পারেন।