“পরিণীতা” শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের একটি রোমান্টিক উপন্যাস। এটি আমার পড়া শরৎচন্দ্রের একটি সেরা উপন্যাস বলব আমি। শরৎচন্দ্রের বেশিরভাগ উপন্যাসের চরিত্র গুলো গ্রামীণ সাধারণ মানুষরা কিন্তু এ উপন্যাসে একটু ব্যতিক্রম।
শেখর ও ললিতা হলো উপন্যাসের নায়ক নায়িকা, এছাড়াও গিরীন, কালী, গুরুচরণ, মনোরমা অবিনাস উপন্যাসের পার্শ চরিত্রগুলো।শরৎচন্দ্রের নারী চরিত্রগুলো বরাবরই শক্তিশালী হয়ে থাকে তবে বেশির ভাগ পুরুষ চরিত্রগুলো কিছুটা নিঃপ্রভ হয়ে থাকে।
পরিণীতা উপন্যাস
শেখর পরিবারের ছোট সন্তান হলো শেখর রায়। সে পিতা নবীন রয়ের খুবই বাধ্যগত সন্তান। তার বড় ভাই অবিনাশ হল পেশায় একজন আইনজীবী। শেখরের পিতা বেশ অবস্থাশালী মানুষ বা বেশ ধনী কিন্তু তিনি সন্তানদের প্রতি চরম আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
অপরদিকে ললিতার পরিবারে ললিতা মামার বাড়িতে থেকে মানুষ হয়েছে।তার মামা গুরুচরণ পাঁচ কন্যার জনক তার ওপরে আবার ললিতার দায়িত্ব তবে তিনি যেন কন্যাদের চেয়ে ললিতাকেই বেশি ভালবাসে। কালী হলো গুরুচরণের দশ বছর বয়সী কন্যা।ললিতার মামার সাথে রায় পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠতা।
পরিণীতা উপন্যাস রিভিউ
ললিতা তের বছরের এক কিশোরী, অপরদিকে শেখরের বয়স চব্বিশ, ললিতা তাকে শেখর দা বলেই সম্মোধন করে।ললিতার মামা শেখরকেই বলে যে ললিতার জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান দিতে কিন্তু শেখর যে মনে মনে ললিতাকে মনে মনে ভালবাসে সেটা সয়ং ললিতাও অবগত নয়। ললিতা শেখরের খুব কাছের, শেখরও ললিতাকে নিজের অভিভাবক কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু মনে করে।
অপরদিকে ললিতাদের আরেক প্রতিবেশী চারুদের পরিবার। চারু ললিতার বন্ধু ও খেলার সাথী। চারুর এক মামা রয়েছে নাম গিরীন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং অন্যত্র বসবাস করে। মনোরমা হল চারুর মা ও গিরীনের বোন।ললিতাকে খুব ভালবাসে মনোরমা।
পরিণীতা উপন্যাসের চরিত্র
ললিতা শেখরকে ভালবাস, শেখর আরও বেশি ভালবাসলেও সে পিতার ভয়ে বলতে পারে না। গুরুচরণ প্রায়ই কর্য করে নবীন রায়ের কাছে। সুতরাং এরুপ দরিদ্র ও পিতামাতা হীন কন্যাকে কিছুতেই শেখরের পিতা মেনে নেবে না। এভাবেই চলতে থাকে। চারুর মামা গিরীন আসার পর ললিতার সাথে চারুর পরিবারের সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। একসময় গিরীন চারুকে পছন্দ করে ফেলে এবং বিয়ে করতে চায়।
একদিন গোপনে শেখর চারুকে মালা পরিয়ে দিয়ে মাকে নিয়ে কাশী চলে যায়। ভাবখানা এমন যে সে ললিতাকে মালা পরিয়ে নিজের করে নিয়েছে। কিন্তু ভালবাসলেও মেরুদণ্ড হীন শেখর পিতার ভয়ে বলতে পারে না তার ললিতার প্রতি ভালবাসার কথা। কাশী যাবার পর সে শুনতে পায় গিরীনের সাথে ললিতার বিবাহ এতে সে চরম হতাশও মর্মাহত হয়।
পরিণীতা উপন্যাসের উক্তি
কারণ এটা সে কখনই চায়নি। মনে মনে সে খুবই কষ্ট পায়। ললিতার জন্য শোকে বিহ্ববল হয় সে। তার ওপরে সে শোনে যে ললিতার মামা গুরুচরণ বাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। এতে এটা আরও প্রকট হয় যে ললিতাকে সে কখনই পাবে না, আগে তার পিতা এমনিতেই রাজি হত না কিন্তু এবার তার মাতাও কিছুতেও জাতহীন ঘরের মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মানবে না।
বহুদিন পর ফিরে আসে শেখর তার আগের বাড়িতে। সে জানত যে বহুদিন আগেই গিরীনের সাথে ললিতার বিবাহ হয়ে গেছে। কিন্তু মনে মনে সে ললিতাকে ভোলেনি। সে বহুদিন পর ললিতার সাক্ষাৎ পায়। এর মধ্যে শেখকের বিবাহ স্থির হয় কিন্তু ললিতার সাথে দেখা হওয়ার পর তার মনে হতে থাকে যে ললিতার হয়ত বিয়ে হয়নি।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস
কারণ তার সাজসজ্জা বিবাহিত মেয়েদের মত নয়। তারপর সে জানতে পারে যে ললিতার তখন গিরীনের সাথে তার বিয়ে ভেঙে দেয় কারণ সেই যে শেখর তাকে মালা পরিয়েছে, সে নিজেকে শেখকের পরিণতি ভাবে। মনে মনে শেখরকেই স্বামী মেনেছিল সে। সে আজও শেখরের প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছে। সে ললিতাকে গ্রহণ করে নেয় তখন কারণ ততদিনে তার পিতার মৃত্যু হয়েছে।
আসলে সেখর ছিল অনেকটা মেরুদণ্ড হীন। সে পিতার মৃত্যুর পর ললিতাকে স্বীকার করে নেয় যা তার পূর্বেপিতা জীবিত থাকতে পারেনি। ললিতা এমন একজনকেই ভালবেসেছিল। সব মিলিয়ে একটি বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস হলো! পরিনীতা! এবং অবশ্য পঠনীয় একটি উপন্যাস।
পরিণীতা PDF
শেষ প্রশ্ন উপন্যাস
পরিণীতা অর্থ