বর্তমান যুগের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বই হলো ‘সেপিয়েন্স’। বইটি প্রকাশিত হবার পর থেকেই এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নতুন ধরনের এক দৃষ্টিভঙ্গিমায় পুরাতন ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই বইটিতে, যা মানব ইতিহাসকে নিয়ে, মানুষের বিশ্বাসগুলোকে নতুন করে ভাবতে উৎসাহ দেয়।
বইটির লেখক হলেন ইউভাল নোয়াহ হারিরি, যিনি কিনা হলেন জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করা এই লেখক যে সাহিত্যের এক সুনিপুণ কারিগর তিনি তা সেপিয়েন্সের মাধ্যমেই পাঠক সমাজকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে হিব্রু ভাষায়, বইটির প্রকাশনা সংস্থা ছিল ‘ডিভির পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড’। পরে ২০১৪ সালে বইটি ইংরেজিতে ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় ও বইটির বেশ কিছু অনূদিত সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে।
বইটির প্রেক্ষাপটের মূলে মানব জাতির বিবর্তনের যেই ইতিহাস ফুটে উঠেছে তা অন্য সকল বই থেকে আলাদা। সেপিয়েন্সে যেভাবে ইতিহাসের সাথে জীববিজ্ঞান ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ধারাকে একিভূত করা হয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক।
সেপিয়েন্স একটি সুবিন্যস্ত গ্রন্থ। লেখক বইটি ক্রমান্বয়ে যেভাবে সাজিয়ে তুলেছেন তা প্রসংশার যোগ্য। বইটি মূলত চারভাগে বিভক্ত এবং এই চারটি ভাগের মাঝেও আবার অভ্যন্তরীণ কিছু ভাগ রয়েছে। মূল চারটি ভাগ হলো: ১.বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ২.কৃষি বিপ্লব ৩.মানবজাতির একত্রীকরণ ৪.বৈজ্ঞানিক বিপ্লব।
সেপিয়েন্স বইটিতে আমাদেরকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কীভাবে এক সময়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত একদল মানবগোষ্ঠী আজ গোটা পৃথিবীকে শাসন করছে, কীভাবে গুহায় বসবাস শুরু করার পর থেকে মানব জাতি ধীরে ধীরে গ্রাম তারপর শহরের ভিত্তি স্থাপন করলো, আমাদের অতীত, বর্তমান এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা আছে বইটিতে।
অথচ আজ থেকে কয়েক হাজার বছর পূর্বেও হোমো সেপিয়েন্স ছাড়াও এই পৃথিবীতে আরো অন্তত ছয়টি মানবগোষ্ঠী বসবাস করতো কিন্তু তারা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও একটি জাতি টিকে আছে আর সর্বত্রই তার জয় জয়কার। বইটির পাতায় পাতায় ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধাপকে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আর এতোসব কিছু তুলে ধরা হয়েছে রীতিমতো গল্পের মত করে, তাই তো ৪০০ পৃষ্ঠার বইটিকে খুব একটা দীর্ঘ মনে হয় না। বইটিতে চমকের শেষ নেই। কিছুক্ষণ পরপরই এমন কিছু তথ্য বা এমন কোন বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা যে কোন পাঠককে তাক লাগিয়ে দিতে পারে।
আর যেকোন বিষয় ব্যাখ্যা করার যেসব নতুন দৃষ্টিকোণ লেখক ব্যক্ত করেছেন তা একেবারেই নতুন। ইতিহাস বিষয়ক কোন বই এতো চমকপ্রদ হতে পারে তা সেপিয়েন্স না পাঠ করলে কোন দিনই বোঝা সম্ভব না। ইতিহাস বিষয়ক বই পাঠকেরা তথ্য-উপাত্তের ঠাসাঠাসিতে যেই অস্বস্তি বোধ করেন তা এই বইতে নেই বরং পাতায় পাতায় চমকপ্রদ সকল আলোচনা বইটিকে নিমিষেই পড়ে ফেলার যোগ্য করে তুলেছে।