ক্রিস কার্টার এর সিরিয়াল কিলিং এর উপর লেখা ‘ক্রুসিফিক্স কিলার’ বইটা অনুবাদ হওয়ার পরপরই বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে। সিরিয়াল কিলিং আর পুলিস প্রসিডিউআল টাইপের বই মৌলিক থাকলেও বিদেশি রাইটার দের গুলো যেন এক অনন্য মাত্রা জুড়ে দিয়েছে। বইটার অনুবাদ করেছেন ‘ডিউক জন’ নাম শুনে বাংলাদেশি মনে হবে না ঠিক। কিন্তু সে ধারনা ভুল। অনুবাদ সাহিত্যের সাথে যারা পরিচিত তারা ডিউক জন’কে ভালোমতোই চিনে। এ ব্যাপারে পরে বলছি। দারুন বইটা পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটার পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
লস অ্যাঞ্জেলসের পরিত্যাক্ত কটেজে পাওয়া গেলো এক তরুনীর মৃতদেহ। মেয়েটিকে খুন করার আগে খুনি নৃশংসতার চরম পর্যায় বেঁছে নিয়েছে। জ্যান্ত অবস্থায় মেয়েটির মুখের চামড়া তুলে ফেলা হয়েছে। আর তরুনীর মুখের সামনে রাখা হয়েছে আয়না!
সারা শরীরে বিভৎস অত্যাচার চালানের পরেও খুনি ক্ষান্ত হয়নি,মেয়েটির মৃত্যুর আগেই ঘাড়ে বিশেষ ভয়ংঙ্কর চিহ্ন খোদাই করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে…. আর ঠিক একই ভাবে দুই বছর আগে খুন করতো উন্মাদ খুনি ‘ক্রুসিফিক্স কিলার’। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? দুই বছর আগেই ধরা পড়ে উন্মাদ ক্রসিফিক্স কিলার। সবার সামনেই যাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় তাহলে খুনি কে?
অসংখ্য রহস্য আর গা হিম করা বর্ণনা পড়তে হলে পড়ে ফেলুন বইটি।
সিরিয়াল কিলিং এর উপর লেখা আমার পড়া প্রথম বই এটা। সিরিয়াল কিলিং এর বই আগে পড়া হয় নি। তাই এই বইটা বেশ আগ্রহ করেই পড়েছি। এক বসায় বইয়ের অনেকটা অংশ পড়ার ফলে কাহিনীটাকে আর ভালোভাবে ফিল করা সম্ভব হয়েছে।বইটা শেষ করার পরে জাস্ট থ হয়ে বসেছিলাম। বইয়ের শুরু দিকে ‘প্রারম্ভ’ অংশ থেকেই শুরু রোলার কোস্টার রাইড,আর শেষ হয় একদম বইয়ের শেষ পাতায় গিয়ে।শুরুর ঐ অংশটুকুই যথেষ্ট বইটাকে পড়ার জন্য বাধ্য করতে।
সম্পূর্ণ বই জুড়েই কাহিনী গতিময়তার সাথে এগিয়ে গেছে,তবে শেষের দিকে কাহিনী যেন নিজেই নিজের গতিকে ওভারটেক করার জন্য মেতে ওঠে।পাশাপাশি বইয়ে সব কিছুর এতো বিস্তারিত বর্ণনা, বিশেষ করে প্রতিটা খুনের, ক্রাইম সিনের এতো ডিটেইলড বর্ণনা এর আগে আমি কোনো বইয়ে দেখিনি।বর্ণনা গুলো রীতিমতো ভয়ংকর এবং প্রচণ্ড রকমের নৃশংস, গায়ের লোম খাঁড়া করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কিছু কিছু বর্ণনা।
পাশাপাশি তদন্ত প্রক্রিয়ারও খুঁটিনাটি বিষয় থেকে প্রায় সবকিছু বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা বেশ উপভোগ্য। একদম নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে সব কিছু। যথেষ্ট মেধাবী দুই হমিসাইড ডিটেক্টিভ রবার্ট হান্টার ও কার্লোস গার্সিয়া,তবে ভিলেনও কম যায় না, এক কথায় বলতে গেলে দুর্ধর্ষ। বইয়ে নৃশংসতা, বিভৎসতা, বিকৃত যৌনতার পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য টুইস্ট। আর ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে যে কথোপকথন গুলো হয়েছে সেগুলোও বেশ উপভোগ্য হবে।
সবথেকে বড় টুইস্টগুলো আন্দাজ করার চেষ্টা করেও পারিনি। তবে যখন জানতে পারবেন কে এই সিরিয়াল কিলার? কেনই বা এত নিষ্ঠুরভাবে খুন করছে নিরপরাধ মানুষ গুলোকে, যখন সমাপ্তি ঘটল এই কেসের যখন আশা করিনি আরো টুইস্ট বাকি আছে, ঠিক তখনই একদম অপ্রত্যাশিতভাবে দেওয়া হয় এই বইয়ের সর্বশেষ এবং সবথেকে নিষ্ঠুর, হৃদয়বিদারক টুইস্ট!ডাক্তারের অটোপসি রিপোর্ট! একজনকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, বিপর্যস্ত করার জন্য, মানুষ যে কি করতে পারে? পুরো বইটা জুড়েই নিশৃঃসতা আর ঘাত প্রতিঘাত এ যেন মেতে উঠেছিলাম।
অনুবাদ প্রসঙ্গে কিছু বলি, ডিউক জনকে চিনে না এমন মানুষ কমই আছে। অনুবাদ তো বটেই পাশাপাশি মাসুদ রানার ঘোস্ট রাইটার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। আর অনুবাদের কাজ তো করে আসছে সে বছর খানেক আগ থেকে। তাই তার অনুবাদকে প্রশ্ন বিদ্ধ করাই যায় না। বরং চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়। এর বেশি কিছু বলার নেই এ সম্পর্কে।
সবশেষে বলবো, দারুন সিরিয়াল কিলিং আর মগজের খেলা খেলতে বইটা পড়ুন!