‘দ্য স্পাই’ একটি আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস যার রচয়িতা হলেন পাওলো কোয়েলহো। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৬ সালে। লেখকের অন্যান্য কাজের মত এটিও বিপুলভাবে সমাদৃত হলে, এই উপন্যাসটিও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। বাংলা ভাষাও বইটি অনূদিত হয়েছে।
আমাদের দেশে অনূদিত বইটির প্রকাশক হলো ‘আদী প্রকাশন’ আর অনুবাদ করেছেন ‘ওয়াসি আহমেদ’। ২০১৭ সালে বাংলায় বইটির প্রথম অনূদিত সংখ্যা বের হয়। উপন্যাসটির মূল প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে স্বাধীনচেতা উচ্চাভিলাষী মাতা হারির বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প নিয়ে।
মাতা হারির প্রকৃতনাম ছিল মার্গারিতা জেল্যে। রুডলফ নামক এক ডাচ আর্মি অফিসারের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর মাতা হারি তার স্বামীর সাথে জাভাতে চলে যান। তৎকালীন সময়ে ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচ কলোনি। জাভায় যাওয়ার পর থেকেই স্বামীর আচরেণের পরিবর্তন ও স্বামীর প্রতারণামূলক আচার-আচরণ মাতা হারির জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলে।
তাই তিনি আর স্বামীকে ছেড়ে হল্যান্ডে ফিরে যেতে উদ্যত হলেন এবং কিছুদিনের মাঝেই স্বামীকে ছেড়ে হল্যান্ডে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু বাবার নতুন স্ত্রী, স্বামীর অত্যাচারমূলক আচরণের স্মৃতি, অনবরত ক্রন্দনরত শিশু তাকে বেশিদিন হল্যান্ডে স্থায়ী হতে দেয়নি।
মাতা হারি হল্যান্ড ছেড়ে এবার পাড়ি জমালেন প্যারিসে। প্যারিসে এসে প্যারিসের শিল্পকলা, জীবন আচরণের প্রেমে পড়ে যান মাতা হারি। একজন সুদর্শনা নারী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে গেলে মাতা হারি নৃত্যশিল্পী হিসেবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে শহরের সকল উচ্চ স্তরের ব্যক্তিদের সাথে মাতা হারির উঠাবসা শুরু হয়।
শহরের চারদিকে একজন ভালোমানের নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে। সমাজের প্রভাবশালী উচ্চবিত্তদের সাথে মেলামেশার এক পর্যায়ে মাতা হারি দেহ ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়েন। যার ফলে সমাজের উচ্চমার্গীয় অনেক পুরুষের সাথেই তার মেলামেশা আরো বেড়ে যায় এবং মাতা হারি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী একজন নারী হয়ে উঠেন।
তার জীবনযাত্রা ব্যাপক রূপে পরিবর্তন হয়। এক জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের চাদরে নিজেকে মুড়ে ফেলেন মাতা হারি। এই সময়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর সাথেও মাতা হারির সখ্যতা গড়ে ওঠে এমন এক আভাস গল্পে পাওয়া যায়। কিন্তু মাতা হারির এই চাকচিক্যময় জীবনই তার জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে।
প্যারিসের লোকজন মনে করতে শুরু করে মাতা হারি গুপ্তচরবৃত্তির সাথে জড়িত আর গুপ্তচরবৃত্তির কারণেই এতো ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন মাতা হারি৷ এক হোটেলের ঘর থেকে এক রাতে মাতা হারিকে গ্রেফতার করা হয় এবং শেষে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করানো হয়।
মাতা হারি কী আসলেও গুপ্তচর ছিলেন, আর যদি হয়েও থাকেন তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কার পক্ষে তিনি এসব কাজ করেছেন তা জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। পাওলোর বইয়ে সাধারণত বাস্তবতার যেই প্রতিরূপটি ফুটে ওঠে তা এই উপন্যাসটিতে আরো জোড়ালোভাবে ফুটে উঠেছে। বইটি যে পাঠককে মনোমুগ্ধ করতে বাধ্য তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।