আগুনপাখি PDF Download হাসান আজিজুল হক

‘আগুনপাখি’ উপন্যাসটির রচয়িতা বাংলাদেশের ছোটগল্পের রাজপুত্র খ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তিনি মুলত ছোটগল্প রচনার মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যে পোক্ত আসন তৈরি করেছেন। ‘আগুনপাখি’ রচনার সময় লেখকের বয়স ছিলো ছিষট্টি বছর। এই সময়ে এসেও তিনি এরকম একটি ঝাঁঝালো উপন্যাস পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন।

২০০৫ সালে প্রথম এই উপন্যাসটির অর্ধেকাংশ প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে একুশে বইমেলায় বই আকারে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘আগুনপাখি’। বইটির প্রকাশক সন্ধানী প্রকাশনি। বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।

হাসান আজিজুল হকের ছোট গল্প pdf download

প্রকাশিত হওয়ার পর পরই বইটি পাঠক সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলে৷ পাঠকের ব্যাপক চাহিদার কারণে মাত্র চারমাসের মাথায় দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়। বাংলা ১৪১২ সনের বর্ষসেরা বইয়ের স্বীকৃতি পায় উপন্যাসটি। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসটি মূলত দেশভাগের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কাহিনীকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে।

উপন্যাসটির পুরো গল্প পাঠক শুনবেন এক নারীর মুখ থেকে। এখানে লেখক গল্প কথক হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এক গৃহবধু কে। বিশাল একান্নবর্তী সংসারের বউ এই গল্পকথক। শাশুড়ি,স্বামী, জা এবং তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সাধারণ সব গ্রাম্যবধুদের মতোই তার জীবনযাপন। সদ্য বিবাহিত এই মেয়েটির সংসার জীবন নিয়ে যেন কৌতুহলের শেষ নেই।

আগুন পাখি উপন্যাস

চারদিকে যা দেখে তাতেই সে মুগ্ধ। স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে যেমন আপ্লুত তেমনই সে শাশুড়ির ব্যক্তিত্ব এবং সূচারুরুপে সংসার পরিচালনার দক্ষতা দেখেও মুগ্ধ। ধীরে ধীরে পরিবারটির সমৃদ্ধিও বাড়তে থাকে। সাংসারিক জীবন যে কখনো কখনো তাকে পীড়া দেয় না এমনটা নয় তবে অন্নে-বস্ত্রে, সুখে-দুঃখে ভালোই ছিলো তারা।

ঠিক এমন সময় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। পরিপূর্ণ সংসারটিতে টান পরতে থাকে। এই দুর্দশার মধ্যে আবার দেখা দেয় বসন্ত আর কলেরার প্রাদুর্ভাব। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নাজেহাল হয়ে পরে। সৃষ্টিকর্তার খেয়ালে এক বছর খরা এবং আরেক বছর অতিবৃষ্টির কারণে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। পরপর এতগুলো দুর্যোগ নেমে আসায় সাজানো গোছানো ভরা সংসারটি দুমড়ে মুঁচড়ে যেতে থাকে।

হাসান আজিজুল হক PDF Download

দুর্ভিক্ষ তাদের বন্ধন কে আলগা করে দেয়। শুরু হয় স্বার্থের খেলা। এই স্বার্থ স্বার্থ খেলায় দোষ দেওয়া যায় না উপন্যাসের কোন চরিত্র কেই। জীবন ধারণ করতে গিয়ে যখন একের পর এক প্রাকৃতিক-মনুষ্যসৃষ্ট বিপদ আসতে থাকে তখন মানুষের স্বাভাবিক সত্তাই তাকে উদ্বুদ্ধ করে নিজের স্বার্থকে আগলে রাখতে। এভাবে চলতে থাকে তাদের দিন।

ঠিক কিছুদিনের মধ্যেই আবার শুরু হয় নতুন সংকট। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাগ হয়ে যেতে থাকে একটি অখন্ড রাষ্ট্র। স্বাধীনতার নেশায় একটি জাতি দুইটি জাতিতে পরিণত হয়। দেশের উঁচুস্তরের মানুষেরা যখন কথা বলছেন মানচিত্রের ব্যবচ্ছেদ নিয়ে ঠিক সে সময় বসে নেই গ্রামের লোকেরাও। গল্প কথক লক্ষ্য করে এতদিন যারা প্রতিবেশি পরিচয়ে একে অপরের সুখে দুঃখে মিলেমিশে ছিলো তারাই আজ সংঘাত করছে হিন্দু মুসলমান পরিচয়ে।

হাসান আজিজুল হকের উপন্যাস

দাঙ্গা ভয়াবহ রুপ নিতে থাকে। অবশেষে সাম্প্রদায়িকতারই জয় হয়। বিচিত্র ঐতিহ্যের ধারক বাহক দেশটি খন্ডিত হয়ে যায়। উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ শুরু হয় এই সময় থেকেই। দেশ বিভাগের পর সবাই তখন ব্যস্ত বাড়িঘর ছেড়ে নতুন ভুখন্ডে আশ্রয় নিতে। হিন্দুরা চলে যাচ্ছে পশ্চিম বাংলায় এদিকে মুসলমান জনগোষ্ঠী পাড়ি জমাচ্ছে পাকিস্তানে। সেই সময় গল্প কথকের বাড়ির পুরুষেরাও সিদ্ধান্ত নেয় তারা পাকিস্তানে চলে যাবে৷ নতুন আশ্রয় গড়বে।

কিন্তু বেঁকে বসে আমাদের উপন্যাসের কথক। সে জানায় সারাজীবন সে শ্বশুরের ভিটেতেই থেকে যাবে। কেউ তাকে সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারে না। এখানে এসে লেখক একজন সাধারণ গ্রাম্য গৃহবধুর হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরেছেন। তার এই প্রতিবাদ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধের প্রতিবাদকেই প্রতিনিধিত্ব করে।

এই উপন্যাসটি যেমন তার কাহিনীর দিক থেকে অনন্য তেমনই ভাষারীতির দিক থেকেও আলাদা। হাসান আজিজুল হক পুরো উপন্যাসটি লিখতে ব্যবহার করেছন রাঢ়বঙ্গের ভাষা যা উপন্যাসটিকে আলাদা একটি মাত্রা দিয়েছে। অনেকেই মনে করে থাকেন এই উপন্যাসের গল্পে লেখকের নিজের জীবনেরও ছাপ রয়েছে।

আগুনপাখি PDF

যেহেতু লেখকের জন্ম ভারতে এবং তাঁর পরিবারকে চলে আসতে হয়েছিলো এপার বাংলায় সেহেতু দেশভাগকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে। লেখকের নিজের জীবনের সরাসরি কোন যোগ থাক আর নাই থাক দেশভাগের সময়টা কেমন ছিলো, মানুষের জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন এসেছিলো তা জানতে এই বইটির পড়ার কোন বিকল্প নেই। হাসান আজিজুল হকের মতো প্রাজ্ঞজনের বর্ণনায় সেই সময়কে জেনে নেওয়ার সুযোগ হয়তো পাঠক হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top