অ্যাকিলিসের টেন্ডন মালিহা তাবাসসুম PDF download (গ্রিক মিথলজি অবলম্বনে মেডিকেল থ্রিলার)

বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় লেখিকা হলেন মালিহা তাবাসসুম। বেশি না মাত্র দুইটি বই বেড়িয়েছে আর তাতেই পাঠকের মন জয় করে নিয়েছেন। বাংলাদাশের থ্রিলার জনরার সব থেকে অবহেলায় থাকা দিক মেডিকেল থ্রিলার নিয়ে কাজ করছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তার নতুন বই অ্যাকিলিসের টেন্ডন। বইটা মূলত গ্রিক মিথলজি অবলম্বনে। এবং একই সাথে মেডিকেল থ্রিলারও! যারা এই বইটা এখনও পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপঃ সিআইডি ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন কর্মকর্তা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নামক এক সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় পরিত্যক্ত দুটি মৃতদের উদ্ধার করে। এই কেসটিতে ভীষণ ক্ষমতাশালী একজন এমপি ও শিল্পপতির সম্পৃক্ততা এবং হিউম্যান ক্যানিবালিজমের উপস্থিতি খুঁজে পায় ফরেনসিক এক্সমাইনার আবরার ফাহাদ! হিউম্যান ক্যানিবালিজম অর্থ হচ্ছে মানব নরখাদক। কিন্তু কিভাবে? কোনভাবে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা একদল মুখোশ পরিহিত অপহরণকারী ও সংঘবদ্ধ দল গ্রিক মিথোলজির এক কৃত্রিম জগতে আবরার ফাহাদ কে নিয়ে গিয়ে ‘HellMyth’ নামক এক জীবন রক্ষাকারী গেম খেলতে বাধ্য করে। এই গেমের প্রতি লেভেলে পুঁজিবাদের পরাকাষ্ঠায় বলি হওয়া অসহায় কিছু মানুষ অসম্ভব ক্ষমতাশালী অপর কিছু মানুষের নিষ্ঠুরতার ও শোষণের শিকার হয়। আবরার ফাহাদ চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে মোট দশ দশটা লেভেলের মাধ্যমে হেরা, জিউস, আফ্রিদিতি ও পসাইডন রূপীর পুজিঁবাদ আর মৃত্যু ফাঁদের মুহুর্মুহু আক্রমন থেকে অসহায় মানুষগুলোকে কি বাঁচাতে পারবে? শেষ পর্যন্ত সফল হবে কি তারা? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়ে ফেলতে হবে বইটি।

উপন্যাসের মূল বিষয়াবলি ছিল পুঁজিবাদী ও ক্ষমতাশীল নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে রুখে দাঁড়ানো ও এই সম্পর্কে সকলকে অবনত করা। ভিন্ন ভিন্ন থ্রিল চরিত্রের মাধ্যমে লেখিকা পুঁজিবাদী ও ক্ষমতাশীল নেতাদের কূকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ বিষয় নিপুণতার সাথে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। বিষয়টা দারুণ লেগেছে। বর্তমানে যেমন কিছু ধনী মানুষ মধ্যবিত্ত কিংবা গরিবদের উপর বিভিন্ন বিষয় ধামাচাপা দিয়ে নিজেরা খুব আরাম করে, একদম ঠিক সেইম ভাবে গ্রিক দেব দেবিরা জন সাধারনের উপর অহেতুক ভাবে জুলুম করে সুখানুভব করে!

গ্রিক মিথোলজির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অ্যাকিলিস। অ্যাকিলিসের জন্মের পর তার মা থেটিস অ্যাকিলিসকে অমর করার জন্য তার গোড়ালির একটি নির্দিষ্ট অংশ ধরে স্টিক্স নদীতে নিমজ্জিত করেন। অ্যাকিলিসের পুরো শরীর অমর দেখতে গোড়ালির সেই নির্দিষ্ট অংশ, যেখানে ক্যালকেনিয়াস টেন্ডনগ্রাম এক বিশেষ টেন্ডন তৈরি করা হয়েছে। ক্যালকেনিয়াস চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহার বেশি পরিচিত পায়। পুঁজিবাদীরা অর্থ-ভব টেন্ডন কালের মতো অ্যাকিলিসের টেন্ডনক ক্ষমতা বলে বৈকে অজর- অক্ষয় ভাবতে শুরু করে। অ্যাকিলিসের অক্ষয় শরীর তাদের কাছে একটি শক্তি সম্পূর্ণ শক্তিমত্তার প্রতিভূ। মধ্যবিত্তের বিত্তীয় অকারণ আবেগ, অযৌক প্রেম আর পরার্থপ্রবণতাকে তারা অ্যাকিলিসে টেন্ডনের মতো দৌবল্যের প্রতীক হিসেবে আখ্য্যর্ভক্ত করে। ঠিক কি অ্যাকিলিসের টেন্ডন মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা? নাকি আদতে সবচেয়ে বড় শক্তি?

লেখিকা যে অনেক গবেষণা করে সব তথ্য উপাত্য উল্লেখ করেছে সেটা পড়লেই বুঝা যায়। কসরত কম করেন নি।
অনেক সময় একটি উপন্যাসের ভালো প্লট থাকা সত্ত্বেও শেষ অবধি সেটি ভালো হয়ে উঠতে পারে না, যদি-না সেটির স্টোরি টেলিং ভালো হয়। লিখনী যদি খারাপ হয় তাহলে তো পাঠক আরও চটে যায়। আর এই স্টোরি টেলিং পুরোপুরি নির্ভর করে লেখকের দক্ষতার উপর। পাঠকের পড়ার গতি নির্ভর করে স্টোরি টেলিং কতটা ভালো হয়েছে তার উপর। তাই একটি ভালো উপন্যাসের প্লট নির্বাচনের পাশাপাশি স্টোরি টেলিং সুন্দর হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর সেদিক থেকে উপন্যাসটির স্টোরি টেলিং হয়েছে যথাযথ। যা পাঠককে ধরে রাখবে উপন্যাসের শেষ পাতা পর্যন্ত।

সবশেষে বলবো, অসাধারণ একটা মেডিকেল থ্রিলার। অনেক কিছুরই মিশ্রণ আছে। দারুণ এই বইটা একবার তো চেখে দেখতেই হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top