উপন্যাস

আরোগ্য নিকেতন PDF Download তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

আরোগ্য নিকেতন হল তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার ও ১৯৫৬ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কারে ভূষিত হন। ১৩৫৯ সালে আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়’ সন্জীবন ফার্মেসী ‘নামে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংস্করণ এ পরিবর্তন পরিমার্জনা করে নাম দেন আরোগ্য নিকেতন। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩১০টি এবং এটি একটি নাটক।

আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসে তারাশঙ্কর এক চিকিৎসকের গল্প লিখতে বসেছেন, মানুষের রোগ আরোগ্য মৃত্যুর কাহিনী লিখেছেন। দেবীগ্রাম নবগ্রাম এমন কয়েকটি সন্নিহিত গ্রামকে ভিত্তি করে গল্প লিখেছেন। পুরোনো দিনের গ্রামাঞ্চলে সন্ন্যাসীদের টোটকা, বৃদ্ধ লোকের চিকিৎসা, বিশুদ্ধ কবিরাজি চিকিৎসা প্রচলিত ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে মানুষের মনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ঝোঁক বাড়তে থাকলো।

এই পরিবর্তনে শামিল হতে চেয়েছিলেন জীআন মশায়। কবিরাজের ছেলে কবিরাজিতে অন্ঞ্চলের সেরা তা স্বত্বেও রঙ্গলাল ডাক্তারের কাছে পড়ে অ্যালোপ্যাথিও রপ্ত করেছিল। নিপুনতা যথেষ্ট দেখালেও জীবন মশায় ডিগ্রি ধারী ডাক্তারের কাছে নিতান্ত হাতুড়ে। তাই গ্রামে যখন হেলথ সেন্টার ্ সরকারি হাসপাতাল তৈরি হল, ডিগ্রি ডাক্তাররা আসতে থাকল তখন জীবন মশায়ের পসার নিষ্প্রভ হতে থাকল।

কিন্তু আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসে জীবন দত্ত অনেক বাস্তববাদী। যুগের সাথে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও নতুন ঔষধের গুরুত্ব মেনে নিয়েছেন। যেসব ক্ষেত্রে কবিরাজির তুলনায় অ্যালোপ্যাথি কার্যকর তখন তা প্রয়োগ করছেন। জীবন মহাশয় দক্ষ কবিরাজ, একজন পাশ না করা ডাক্তার। তার চেয়ে বড় কথা জীবন মৃত্যুর যে খেলা চলে হারজিতের সেখানে জীবন মশায় এক উজ্জ্বল প্রতিভা।

যন কোন অলৌকিক ক্ষমতায় অতিমানবিক। বিপিনের মৃত্যুতে জীবন মশায়ের বাণী সত্যি হয়েছে আর কলকাতার ডাক্তারের চিকিৎসা ব্যর্থ হয়েছে। মতির মায়ের নাড়িতে মৃত্যুর পদধ্বনি শুনেছিল জীবন মশায় আর সময় দিয়ছিল ছয় মাস। রামহরি মৃতুকে স্বীকার করে জ্ঞান গঙ্গায় যেতে চায় কিন্তু জীবন মশায় বলেন মৃত্যু এখনো অনেক দূরে।

আবার জীবন মশায়ের ছেলে অবিরাম অত্যাচারে মৃত্যুকে ডেকে আনছে। জীবন মশায় বুঝতে পারে নাড়ি টেপার আগেই। কিন্তু মৃত্যুর নিয়তিকে রোধ করতে পারে না। জীবন মশায় তাই বিশ্বাস করে মৃত্যু অনিবার্য যখন কালব্যধি মানুষ তা রোধ করতে পারে না। আবার বহু কঠিন ব্যাধি যদি কালব্যাধি না হয় তা রোধ করা সম্ভব। এই প্রত্যয় নিয়েই জীবন মশায় দেখছে রূপহীন জীবন মৃত্যুর খেলা।

বহুবিচিত্র মৃত্যু, তারাশঙ্কর মৃত্যুর রূপ এঁকেছেন পুরো উপন্যাস জুড়ে। ফলে ‘ আরোগ্য নিকেতন ‘ উপন্যাস কেবল প্রাচীন ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বন্দ্বতে সীমাবদ্ধ থাকলো না এগিয়ে গেল জীবন মৃত্যুর দ্বন্দ্বে। এই উপন্যাসে তারাশঙ্কর মৃত্যুর প্রশান্ত রূপটাই এঁকেছেন। এই উপন্যাসে মৃত্যু প্রাসঙ্গিক নয়, মৃত্যু আধিকারিক।

জীবন থেকে শুরু করে মৃত্যুতে পৌঁছানো নয়, মৃত্যু থেকে জীবনে যাওয়ার গল্প, এ গল্প জীবনে যাওয়ার গল্প। মৃত্যুর আলোকেই জীবনের সত্যের উদ্ভাস হয়। এই উপন্যাসের মূল কথা হল, মৃত্যুর পরিনামেই জীবনের সূচনা। আর এভাবেই মৃত্যুর সূত্রে গাঁথা পড়ে জন্ম জন্মান্তর। অসাধারণ এই বইটি পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *