অশনি সংকেত PDF Download বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়

“অশনি সংকেত” বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের এক অসামান্যা উপন্যাস, মুলত এটি কোন কল্প কাহিনি নয় বরং সত্য ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয় উপমহাদেশে যে যুদ্ধের ঝামেলা লেগে যে চরম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এ তারই বর্ণনা।
ভারতীয় উপমহাদেশ এক সময় ফলে, ফসল ভরপুর ছিল, মানুষ যে না খেয়ে মারা যেতে পারে এমন কথা কেউ ভাবতেও পারেনি। অথচ মতি নামের সেই মহিলাটির মৃত্যুেতে উপন্যাসে এক ভয়াবহ অশনি সংকেত দেয়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গঙ্গাচরণ ও তার বউ ও দুটি ছেলে।
ব্রাহ্মণ গঙ্গাচরণ একটি গ্রামে এসে বসবাস শুরু করে যেখানে সে পাঠশালা, কবিরাজি করে বেশ পসার যুগিয়ে নেয়। তার বউ অনঙ্গ যেন বাংলার স্নেহময়ী মাযের মত। মা অন্নপূর্ণার মত সে অনঙ্গ বউ। বিভূতিভূষণের এক অমন সৃষ্টি এই অনঙ্গ বউ।
হটাৎ করে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি হতে শুরু করে। একসময় আর কোথাও পাওয়া যায় না চাল। কেরোসিন পাওয়া যায় না। ফলে, ফসলে ভরা বাংলায় নেমে আসে চরম দুর্ভিক্ষ। এই ভয়াবহ দিনে অনঙ্গ বউ জন্ম দেয় এক শিশু।
ক্ষুধায় তাড়নায় মানুষ বন জঙ্গল থেকে শাকপাতা, কচু তুলে খাওয়া শুরু করে। এমনকি বিলের শাকুম গুগলিও খেতে হয় প্রাঁণ বাঁচানোর জন্য। ভিখারির সংখ্যা বেড়ে যায়। জিনিস পত্রের দাম হয় আকাশ ছোঁয়া। আর যাদের হাতে পয়সা ছিল তারা পয়সা দিয়েও জিনিস পাচ্ছিল না।
যুদ্ধের বাজরে সমস্ত জিনিস তুলে নেয় যুদ্ধের দামামা। এভদই ভয়াবহ যুদ্ধের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারেনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অজো পাড়া গাঁয়ের নীরিহ মানুষ জন। না খেতে পেয়ে, অসুস্থতায় মারা যেতে থাকে লোকজন। এই চরম মাহামারি পৌঁছে যায় প্রতিটি কোনাতে।
গঙ্গাচরণ বাস করা শুরু করে এক অজো পাঁড়াতে। সে সেখান কার বাচ্চাদের নিয়ে পাঠশালা শুরু করে। সকলে তাকে খাতির করে কারণ সে ছিল একমাত্র পড়াশোনা জানা লোক সেই গ্রামে।মানুষ জন যখন বলা শুরু করলো চালের দাম বাড়বে তখন কেউ বিশ্বাস করে নি, টাকা হলে জিনিস মিলবে না এমন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
কিন্তু চালের দাম বেড়ে যায় মাত্রারিক্ত। সমস্ত খাদ্য তুলে নিয়ে যায় যুদ্ধের সৈন্যদের জন্য। বাংলার অফুরন্ত শস্য ভান্ডার খালি হয়ে যায়। কোথাও ভাত নেই, খাবার নেই। শুধু হাহাকার খাবারের জন্য।
একটু ভাতের মাড় ভিক্ষা করার জন্য ভিক্ষুকের দল ছোটাছুটি করে দেয়। কি এক ভয়াবহ অবস্থ। আমরা যারা এ সময়ের পাঠক দুর্ভিক্ষ কি জিনস আমরা জানি না কিন্তু এই উপন্যাস টি আমাদের দুর্ভিক্ষের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে যা পাঠককে সেই ভয়াবহ দিনের ব্যাপরে এক পরিষ্কার ধারণা প্রদান করতে পারে।
১৯৪৩থেকে ১৯৪৪ সালের এই ভয়াবহ মহামারী সৃষ্টি হয়েছিল কেবল ব্রিটিশ সৈন্য দের অতিরিক্ত খাবার যোগান দেবার কারণে। ভয়াবহ সেই থাবা এসে পৌঁছাতে থাকে গ্রামীণ জীবনে। যাদের ছিল না কোন উচ্চাশা। কেবল একমুঠো ভাত, তাও সেটা কেঁড়ে নেয় ইংরেজ শাষণ। এই উপন্যাস টি একটি অসমাপ্ত উপন্যাস।
গল্পের প্রধান চরিত্র গঙ্গাচরণ বা তার অনঙ্গ বই তিনটি সন্তান এর শেষ অবধি কি পরিণতি হয় তা আমরা দেখতে পাইনা। দুই একমুঠো ভাতের জন্য, ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে নিজের ইজ্জর বিলিয়ে দিতে হয় কত সতী পবিত্রা গ্রামের অসহায় কুল বধুদের।
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় কেবল মনুষ্য সৃষ্টি ছিল এই মহামারি। শুধু মাত্র যুদ্ধের কারণে ইংরেজ শাষণ বাংলার শস্য ভান্ডার খালি করে দেয়। এই মানুষ সৃষ্টি বিপর্যয়ে মারা যায় বাংলার কয়েক লক্ষ নীরিহ মানুষ। এই মহামারীকে পঞ্চাশের মন্বন্তর বলা হয়ে থাকে।
এই পটভূমিতেই রচিত হয়েছে বিভূতিভূষণের এক অনবদ্য সৃষ্টি” অশনি সংকেত “।উপন্যাস টি পড়তে পড়দে পাঠক শিওড়ে উঠতে বাধ্য কেননা এক মুঠো ভাতের যে কি মুল্য তা তুলে ধরেছে লেখক।
এই উপন্যাসটি অন্য উপন্যাসগুলোর অনেকটা আড়াল রয়েছে তবে এটি লেখনীতে শক্তিশালী ও হৃদয় গ্রাহী। বিখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় এই অশনি সংকেল উপন্যাসটির চলচিত্রের রুপ দান করেছে ।