অসম্পূর্ণ সত্তা PDF Download আদেল পারভেজ

আদেল পারভেজকে আমি খুব বেশি চিনি না। তিনি লেখা লেখির জগতে মোটামুটি পরিচিতই বলা যায়। তার একটি জীবনধর্মী উপন্যাস ‘অসম্পূর্ণ সত্তা’ পড়েই তার সাথে পরিচয়। খুব একটা খারাপ লিখেন না তিনি। তার এই ১১২ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি যারা পড়তে চান তারা খুব সহজে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রে তিমির ও কৃপা। বড় বিজন্যাসম্যান বাবার একমাত্র সন্তান কৃপা। তার জীবনটা সাধারণ অন্য সব মেয়ের মতো না। বলতে গেলে ছোট থেকে বন্দিজীবন কৃপার। বয়স আঠারো পেরিয়ে গেলেও তার মাঝে যেনো স্বাধীনতা নেই। তার বাবা মা তাকে কারও সাথে মিশতে দেয় না, বাইরেও যেতে দেয় না। তার পড়াশোনাটুকুও হয় ঘরে থেকে।
চার দেয়ালে বন্দি বাবা মায়ের কাছে তার জীবনের সীমাবদ্ধতা। সেই জীবন তার কাছে একসময় তিক্ত হয়ে ওঠে। সেও স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায়, মানুষের ভীড়ে হাঁটতে চায়, মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াতে চায়,এই পৃথিবীটাকে দেখতে চায়। ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে চায় না। এই তিক্ততার মাঝে একটা ডায়েরির মাধ্যমে পরিচয় ঘটে তিমিরের সাথে।
তিমির বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ডায়েরিতে দেয়া মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন হয়। একসময় সেটা বন্ধুত্বে পরিণত হয়। বন্ধুত্ব থেকে হয় প্রেমে। এদিকে তিমিরের প্রেমে পড়ে তার ফুফাত বোন তনু। কিন্তু মুখ ফুটে সেটা বলতে চায় না। তিমিরের মা তনুকে তাদের পুত্রবধূ করার স্বপ্ন দেখে। এভাবে উপন্যাসের গল্প এগিয়ে যায়।
তপু তিমিরের খুব ভালো বন্ধু। স্কুলজীবন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব৷ তপুর মা মারা যান তপুর জন্মের সময়। ছয় বছরে বাবাও না ফেরার দেশে চলে যান। চাচা জয়নাল মিয়া তাকে লালন পালন করে এত বড় করেছেন।জনমদুঃখি হলেও এই তপুটাই বন্ধুদের অাড্ডায় হাসি আমোদে মাতিয়ে রাখে সকলকে। অদ্ভুত অদ্ভুত নানান রকম গল্পকথায়। ফাল্গুনীর সাথে তপুর প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও সেটা বিচ্ছেদে রূপ নেয়। তারা চাচাও অসুস্থ হয়ে যায়। তপুর জীবনে পুনরায় শ্রাবণের মেঘ এসে ভিড় করতে থাকে।
উপন্যাসটা শুরু হয়েছে নবর্ষার সৌন্দর্য বর্ণনা দিয়ে৷ উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গায় প্রকৃতির সুন্দর বর্ণনা রয়েছে, যেন প্রকৃতির সাথে মানুষের মেলবন্ধনের যোগসূত্র। লেখক বেশ অকপটে সেটা তুলে ধরেছেন।
ভাই বোনের মধ্যেে একটা মধুর সম্পর্ক থাকে। যেটা এই উপন্যাসে তিমিরের বাবা ও ফুফুর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলেও পরস্পরের মধ্যে ভাইবোনের টানটুকু রয়েই গেছে যেটা একটা পজিটিভ দিক। খুনসুটি রাগ অভিমানের পর যেন অতুলনীয় ভালোবাসাটুকু ঠিকই বিদ্যমান থাকে তাদের মাঝে। এছাড়া উপন্যাসে ভাবি ও ননদের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধার দিকটুকুও বেশ দারুণভাবে ফুটে ওঠেছে।
ভালো বন্ধুত্ব এখন নেই বললেই চলে। কিন্তু উপন্যাসে তিমির ও তপুর মধ্যে সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু সুসময়ে নয় দুর্দিনেও তারা একে অপরের পাশে থাকার বদ্ধ পরিকর। উপন্যাসে তপু দুর্দিনে তিমিরের পাশে থেকে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷
উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্রে তিমির ও কৃপা পরস্পরের সাথে দেখা হয় না কিন্তু দু’জনের মাঝে গভীর ভালোবাসা বিদ্যমান। লেখক সেই গভীর ভালোবাসার দিকগুলো কতই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। পাঠক তা পড়ে এক রাশ মুগ্ধতায় বিভোর হবেন। অপরদিকে, তনু কাছে থেকেও তিমিরের প্রতি তার ভালোবাসা মুখ ফুটে বলতে পারে না। প্রেমময় এই দিকও লেখক বেশ প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করেছেন।
কৃপার বাবা মা সব কিছু থেকেও মনের মাঝে চাপা একটা দুঃখবোধ তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কিন্তু কৃপা তাদেরকে একসময় প্রশ্নবিদ্ধ করে। মনস্তাত্ত্বিক এই দিকগুলোও বেশ দক্ষ নাবিকের মতো সুশৃঙ্খলভাবে গল্পের ছলে লেখক উপস্থাপন করেছেন উপন্যাসে।
উপন্যাসের ভাষা সহজ সরল, কঠিন শব্দের ব্যবহার নেই বললেই চলে৷ উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গায় উপমা ও রূপকের ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাক্যকে আরো সুন্দর ও সমৃদ্ধ করেছে। গল্পের প্লট ও কাহিনি বেশ দারুণ। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সূক্ষ্ম বিষয়গুলো অসাধারণভাবে লেখক উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে বইটি সুখ পাঠ্যই হবে।