থ্রিলার

বেতাল PDF Download মুহম্মদ আলমগীর তৈমুর

‘মোহাম্মদ আলমগীর তৈমুর’ স্যারকে একজন আন্ডাররেটেড লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারন, তাঁকে সোশ্যালমিডিয়ার কোনো জায়গাতেই দেখা যায় না। কিন্তু পাঠকগন তাঁকে ঠিকই চিনে। যারা লেখকের লেখা পড়েছে একবার ফ্যান হয়ে গেছে! আসলেই বর্ণনা ভঙ্গীর এক অসামান্য ক্ষমতা আছে তাঁর। লেখকের আরও একটা দারুণ বই হলো ‘বেতাল’। বরাবরের মতই বেশ জনপ্রিয়। বইটা না পড়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

গল্পের কথক শ্যামল একাত্তরের ডামাডোল পরিস্থিতিতে বোমাবর্ষণে নিজের বাবাকে হারায়, তার আগেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় তার একমাত্র ভাই সমীর। পরিবারের দুজন সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন কথকের মা, এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে এসে হাজির হন কথকের বাবার সহকর্মী ভবতোষ ঘোষ। ইতিমধ্যে গ্রামের এক প্রতিবেশীর কাছে জানা যায় তিনি এপারে অর্থাৎ ভারতবর্ষে থাকাকালীন সময়ে কথকের ভাই সমীরকে দুবার দেখেছেন একবার রিফিউজি ক্যাম্পে, আরেকবার বারাসাতের আমডাঙ্গা করুণাময়ী কালী মন্দিরে। সে নাকি কোন এক ভয়ঙ্করদর্শন তান্ত্রিকের চেলা হয়ে তাঁর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ব্যাস, এটুকুই তথ্য, তার ওপরই ভিত্তি করে আশায় বুক বাঁধে কথক । ‘ওদেশ অনেক বড়’ জেনেও ভবতোষ কাকাকে সঙ্গী করে সে পাড়ি দেয় ভারতবর্ষে। ভারতে এসে কথক ও ভবতোষ কাকার এক অনন্ত যাত্রা শুরু হয়। মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেয় তারা তবু সেই তান্ত্রিকের বা সমীরের খোঁজ মেলে না। মহাবল নামক সেই সিদ্ধ তান্ত্রিক আজ এখানে তো কাল ওখানে।

বারাসাত থেকে শুরু করে প্রথমে রাজস্থানের জয়পুর তারপর শেষে বারাণসীতে এসে পৌঁছয় তারা। তবু মহাবলের টিকির দেখা মেলে না।
তবুও এখানে এসে দানা বাঁধে কিছু অলৌকিক রহস্য। এক এক করে খুলতে থাকে পথ।
শেষমেষ তাদের যাত্রা সফল হয় কিনা , সমীরের খোঁজ পাওয়া যায় কিনা , সব উত্তর পাওয়ার জন্য ‘বেতাল’ এর পাতা উল্টে দেখতে হবে। কি আছে ভেতরে?

যেহেতু বেতালের ভূমিকাতেই বলে দেওয়া হয়েছে এটি, কেবল মাত্র এক অতিপ্রাকৃত উপাখ্যান নয় – এ যেন ভারতীয় ঐতিহ্য, প্রাচীন মন্দির আর পূজার্চনার এক সুবিশাল উপাখ্যান। সুতরাং শুধুমাত্র হাড়হিম করা শিরশিরে প্লটের ভূতুড়ে উপন্যাস ভেবে এটিকে পড়তে বসলে তা মস্ত বড় ভুল হবে এবং আশাহত হতে হবে। কারণ যারা মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূর স্যারের গল্প পড়েন তারা জানেন লেখক মহাশয় ওরকম তিড়িংবিড়িং লাফ দিয়ে পড়া ভূতের গল্প কখনোই লেখেন না। তার বদলে থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক স্বাদ, সুখপাঠ্য ঐতিহাসিক নানা বর্ণনা‌ যা মাধ্যমিকে ইতিহাসে ফেল করা ছাত্রকেও‌ কাহিনী শেষ করে উঠতে বাধ্য করবে। স্যারের গল্পের এটাই স্বতন্ত্রতা।

তবে এটা সবার যে হজম হয় সে কথা বলছি না, অনেকেরই এত ইতিহাসের বর্ণনা পড়ে অম্বলের ঢেঁকুর ওঠে।
আসলে স্যারের গল্পগুলো চিরাচরিত ‘ভৌতিক’ গল্পের থেকে অনেকটাই আলাদা। আর আলাদা যে কোন জিনিসকে আমাদের মেনে নিতে অনেকটা সময় লেগে যায়। কি আর করা!

তাই এই উপন্যাসে সেই ধরনের ঐতিহাসিক বর্ণনা একেবারেই বাদ দিয়েছেন লেখক। জোর দেওয়া হয়েছে গল্পের সমাপ্তিতে, যা মোটামুটি উপন্যাসের মাঝখান থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। স্যারের লেখার আরও যে দিকটা খুব মনে ধরেছে তা হলো, ভ্রমণের এমন পুঙখানু বর্ণনা দিয়েছেন যে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, লেখল বুঝি নিজেই সব ভ্রমণ করে বেড়িয়েছেন! আসলে লেখকের লিখনশৈলীই এমন চমৎকার!

সবশেষে বলবো, তীব্র ভয় কিংবা উত্তেজনাকর থ্রিল হয়তো পাবেন না। কিন্তু পুরোপুরি উপভোগ অবশ্যই করতে পারবেন। এমন একটা অসাধারণ বই মিস করা ঠিক হবে না মোটেও।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *