বিষবৃক্ষ PDF Download বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

“বিষবৃক্ষ” বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি সামাজিক উপন্যাস। পূর্বে তিনি যে তিনটি উপন্যাস লিখেছেন সেগুলো অনেকটা রোমান্টিক ধরণের কিন্তু বিষবৃক্ষবঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের প্রথম সামজিক উপন্যাস হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। উপন্যাসটি উদ্দেশ্য অনেকটা সতর্কীকরণ বলা চলে।

একজন পুরুষের কেবল রুপের মোহের কারণে কিভাবে একটি সুন্দর পরিবার, দাম্পত্য জীবন, কলহ ও অশান্তির কারণ হতে পারে এটিই উপন্যাসের মুল কাহিনি। সংযম যে কতবড় সামজিক সুস্থতা এবং নিছকই মোহের কারণে কখনও কারও মুল্যবান জীবনও নষ্ট হতে পারে। 

বিষবৃক্ষ রিভিউ

উপন্যাসের শুরুতেই, কলকতা যাওয়ার পথে নাগেন্দ্রনাথ এক ধনবান জমিদার,একদুঃখী রমনীর বাড়ি যায় এবং কুন্দন্দিনীর দেখা পায়, বিপদগ্রস্ত কুন্দকে প্রথমে নিতে না চাইলেও গ্রামবাসীর চাপে বাধ্য হয়ে নিয়ে আসে সে, কুন্দর কাকার অনেক জায়গায় খোঁজ করলেও না পেয়ে নিজে নিয়ে যায় তাকে এবং নিজের বোন কমলমনির কাছে রেখে দেয়। পরে সে তার বউ সুর্যমুখীকে জানায় কুন্দর কথা।

সব শুনে সে তার ভাই তারাচরণের সাথে সুন্দরী কুন্দর বিয়ে ঠিক করে, এসে সবার মতেই বিয়ে হয় কুন্দ আর তারাচরণের।তারা সুখে দিন অতিবাহিত করতে শুরু করে। এদিকে নাগেন্দ্রথাথ আর সুর্যমুখীরও সুখী দাম্পত্য জীবন চলতে থাকে। হটাৎ তারাচরণের মৃত্যুতে মাত্র তিনবছরের বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটে কুন্দর।

সুর্যমখী আর নাগেদ্র তাকে নিজের গৃহে নিয়ে আসে। গল্পের বিষবৃক্ষের প্রথম চারাটি এতেই রোপিত হয়ে যায়। যদি তারা কুন্দকে না নিয়ে আসত নিজ গৃহে তাদের জীবনে বিষবৃক্ষের বিষ ছড়িয়ে পড়ত না। ধীরে ধীরে নাগেদ্র কুন্দর রুপে বিমোহিত হয়ে যায়। এদিকে দেবীপুরের জমিদার দেবেদ্র, কুন্দকে নাগেদ্রর বাড়িতে দেখে মোহগ্রস্ত হয়ে যায়।

বিষবৃক্ষ উপন্যাসের নামকরণ

সে হরিদাসীকে ভেক ধরে ঐ বাড়িতে পাঠায়। সে কুন্দকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। হীরা দাসীর থেকে এটা জানতে পেরে হরিদাসী কে তাড়িয়ে দেয় সুর্যমুখী। এদিকে কুন্দ ও নাগেদ্র একে অপরের প্রতি প্রণয় আসক্ত হয়ে পড়ে।এর মাঝে একদিন কুন্দ আত্মাহত্যা করে সবার থেকে দুরে চলে যেতে চায়।

নাগেদ্র তার সুখী জীবন, প্রেমময়ী বধু, জমিদারি সব কিছু ছেড়ে কুন্দর জন্য পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে। সুর্যমুখী সবকিছু টের পেয়ে যায়। সে কোনদিনও ভাবতে পারেনি তার স্বামী এরুপ করতে পারে। বিরহে বেদনার দগ্ধ হতে থাকে সে প্রাণপ্রিয় মানুষের এরুপ আচরণে। সে প্রাণের অধিক ভালবাসত স্বামীর, তাদের বিশ্বাসের ভীত এভাবে ভেঙে যাবে তা ভাবতেও পারেনি। এর জন্য সবচেয়ে দায়ী নাগেদ্র।

সে এমন প্রমেময়ী অর্ধাঙ্গীকে রেখে যে এক বিধবার প্রতি আসক্ত হবে তা কে জানত।সে সব কিছু কলমণিকে জানায়। এ আসক্ত কেবল কুন্দ নন্দিনীর রুপের প্রতি। কিন্তু সে তো সুর্যমুখী কে খুব ভালবাসত। সুর্যমুখী যখন হরিদাসীর জন্য কুন্দকে অপমাণ করে তার প্রতি প্রচন্ড রুষ্ট হয় নাগেদ্র। সে সয়ং বিধবা কুন্দর সাথে তার স্বামীর বিবাহ দেন।

বিষবৃক্ষ উপন্যাসের প্রশ্ন উত্তর

সব অধিকার ছেড়ে দিয়ে সে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কুন্দকে পাওয়ার পর মোহগ্রস্ত নাগেদ্রর মোহ দুর হয়ে যায়। পুরুষের মন, নাগেদ্র পুনরায় সুর্যমুখীর জন্য বিরহে কারত হয়ে পড়ে। নানা জায়গায় সন্ধানের পরেও তাকে না পেয়ে তখন কুন্দর প্রতি তার সব মোহ কেটে যায়। ভাল লাগে না তাকে আর।

সুর্যমুখী এরি মাঝে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এক আস্রমের এক সাধু তাকে সুস্থ করে তোলে, সেই নাগেদ্রকে সুর্যমুখীর সন্ধান দেয়। সে ফিরিয়ে আসে সুর্যমুখী কে।তারপর পরিত্যক্ত কুন্দ বিষপান করে আত্মহত্যা করে। মুলত হীরা দাসী তাকে গোপনে বিষপান করে হত্যা করে। এইভাবেই অসহায় কুন্দনন্দিনীর জীবনটা শেষ হয়ে যায়।একটা সে স্বপ্নে দেখে তার জীবনবাসান হবে নাগেদ্রর জন্য এবং বাস্তবিক তাই ঘটে তার ভাগ্যে। 

বিষবৃক্ষ উপন্যাস PDF

মুলত বিষবৃক্ষ একটি সামাজিক ও পারিবারিক উপন্যাস কেননা বিধবা বিবাহ নিয়ে লেখক বলেছেন, তবে তিনি মুলত পুরুষের আত্নসংযম এর কথা তুলে ধরেছেন। এরুপ অবৈধ, অনাকাঙ্ক্ষিত মোহের কারণে কিভাবে পরিবার তথা সমাজে বিষ ছড়িয়ে পড়ে আর সবকিছু অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় তাই তুলে ধরেছেন লেখক তার শক্তিশালী উপন্যাস বিষবৃক্ষ।

এ প্রসঙ্গে লেখক সয়ং বলেন যে “আশা করি এই উপন্যাসের মাধ্যমে ঘরে ঘরে অমৃত ফলিবে” । তাই বিষবৃক্ষ একটি অবশ্য পাঠ্য উপন্যাস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top