চৌরঙ্গী PDF Download শংকর

‘মণিশংকর মুখোপাধ্যায়’ কিন্তু পাঠক মাত্রই তাঁকে সবাই ‘শংকর’ নামে চিনে। এই একটা নামেই অনেক অনেক মাস্টার পিস গ্রন্থ আমাদের বাঙালি পাঠকদের জন্য রেখে গেছেন যিনি। তার বই পড়ে ভক্ত বনে যায়নি এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর! একেকটা বই যেন একেক বাস্তবতা, একেক জীবনের কথা বলে। তেমনই একটি অসাধারণ বই হলো ‘চৌরঙ্গী’। এ যেন আরেক জীবন! দারুণ বইটা থেকে এখনও বঞ্চিত হয়ে থাকলে, আর দেরি না করে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

কলকাতার শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার মারা যাওয়ায় পর চাকরি হারিয়ে যখন পথে পথে ঘুরছিলো শংকর নামের এক যুবক, তখন পূর্ব পরিচিত এক প্রাইভেট ডিটেকটিভ এর মাধ্যমে চাকরি পান তখনকার সময়ের বিখ্যাত হোটেল শাহজাহান এ। শংকরের জীবনে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। নানা রকমের মানুষের পদচারণায় চব্বিশ ঘণ্টাই মুখর থাকে শাহজাহান, যেখানে প্রতিদিন তৈরি হয় নতুন নতুন সব গল্প।

সেসব গল্পের প্রধান চরিত্র কোনো বিদেশি সাংবাদিক, কোনো ক্যাবার গার্ল, বড়লোক বাড়ির বউ কখনো বা বিশিষ্ট কোনো ব্যবসায়ী। শুধু অতিথিরাই নয় হোটেলের কর্মচারীরাও প্রত্যেকেই নিজেরাও একেকটা আলাদা গল্প নিয়ে ঘুরছে। ম্যানেজার মার্কোপোলো, রিসিপশন টাইপিস্ট রোজি, ন্যাটাহরি, গোমেজ, স্যাটা বোস, গুড়বেড়িয়া। পুরো উপন্যাস জুড়েই মুখর ছিলেন যিনি, তিনি হচ্ছেন রিসিপশনিস্ট সত্যসুন্দর বোস অর্থাৎ স্যাটা বোস। বইয়ের প্রধান চরিত্রের চেয়ে এই চরিত্রটা বেশি ভালো লেগেছে, চৌরঙ্গী পড়ে আপনি স্যাটা বোসের প্রেমে পড়তে বাধ্য।

জীবন বোধকে তুলে ধরতে লেখকের কোনো তুলনা হয় না। বই থেকে লেখকের কয়েকটা লাইন তুলে ধরছি। পড়লেই বুঝতে পারবেন!

‘পৃথিবীর এই সরাইখানায় আমরা সবাই কিছুক্ষণের জন্য আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্রেকফাস্ট খেয়েই বিদায় নেবে,কয়েকজন লাঞ্চ শেষ হওয়া মাত্রই বেরিয়ে পড়বে। প্রদোষের অন্ধকার পেরিয়ে,রাতে যখন আমরা ডিনার টেবিলে এসে জড়ো হবো তখন অনেক পরিচিতজনকেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না; আমাদের মধ্যে অতি সামান্য কয়েকজন সেখানে হাজির থাকবে। কিন্তু দুঃখ কোরো না,যে যত আগে যাবে তাকে তত কম বিল দিতে হবে।’

‘মণিশংকর মুখোপাধ্যায়’ অর্থাৎ শংকর এর লেখার ভক্ত হয়ে যাবেন বইটা পড়ে। শুধু এই বই কেন? তার বেশির ভাগ বইই পাঠকের কাছ খুবই সমাদৃত। আমি চৌরঙ্গী ছাড়া আরও তিনটা বই পড়েছি উনার, সবগুলোই ভীষণ ভালো লেগেছে। চারটে বইয়েই গতানুগতিক ধারার বাইরে ব্যতিক্রমী একটা বিষয়বস্তুকে খুব চমৎকার ভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। একদম সহজ সাবলিল লেখনী, কিন্তু তাতেই পাঠককে কিভাবে মুগ্ধ করতে হয় উনি বেশ ভালো করেই জানেন।

বইয়ের টপিক গুলো যে খুবই আশ্চর্যজনক তা কিন্তু মোটেই না। তবু পড়ে আশ্চর্য লাগে! শংকরের বইগুলোর মধ্যে চৌরঙ্গী ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি। আসলে সত্যি বলতে কি এই বইটার ভাব, বইটার রিভিউ মাত্র ক’টা লাইনে তুলে ধরা যায় না। সব বইয়ের রিভিউ হয়না কিনা! কিন্তু বইটা সম্পর্কে নতুন পাঠক অনেকেই অবগত নয়৷ অনেকে শংকর নামে কাউকে চিনেও না। কিন্তু চেনা উচিত। জীবনের অসংখ্য অলি গলি দেখেই তিনি বই লিখেছেন। না পড়লে আসলেই মিস।

চৌরঙ্গী, স্যাটা বোস, শংকর, মার্কোপোলো, বায়রন, করবী গুহ, ন্যাটাহরি, গোমেজ, সাদারল্যান্ড, এয়ার হোস্টেস সুজাতা সর্বোপরি হোটেল শাহজাহান এই নামগুলো একদম মাথায় গেথে গেছে। পঞ্চাশের দশকের কলকাতার চৌরঙ্গী মোড়ের হোটেল শাহজাহান এ আপনাকে স্বাগতম। না পড়ে ফিরে যাবেন না!

সবশেষে বলবো, কিছুই বলার নাই! বইটা পড়ুন। একটু ভাবনা যোগাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top