চৌথুপীর চর্যাপদ PDF Download প্রীতম বসু

প্রীতম বসু ওপার বাংলার একজন অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। থ্রিলার লেখক বলা যায়। তার বইগুলো ইতিহাস মিথ, আর থ্রিলের মিশেল! বলাই বাহুল্য অসাধারণ লিখেন তিনি। তার দীর্ঘ কলেবরের একটা ঐতিহাসিক থ্রিলার হলো ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’। বেশ বড়সড় হলেও বইটা অসাধারণ! যারা তার লেখা পড়েন নি তারা বুঝবেন না। যাই হোক, এ বই যারা এখনও পড়েন নি তারা দেরি না করে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

গন্ধকালী ছিলেন উত্তর বাংলার এক গ্রাম্য জেলের কন্যা। তৎকালীন সময়কালটা ছিল বাংলায় তুর্কি আক্রমণের প্রথম পর্ব। তুর্কি বাহিনী তখন একের পর এক মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করছে, সেখানকার পুঁথিপত্র জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নির্মমভাবে হত্যা করছে সেখানকার মানুষকে। অশান্ত সময়েই গন্ধকালী নদীর বুক থেকে উদ্ধার করেন আচার্য শ্রীধর পণ্ডিতকে। মৃতপ্রায় শ্রীধর আচার্যকে সুস্থ করে তোলেন গন্ধকালী ও তার বাবা চন্দর মাঝি। গন্ধকালীদের গ্রাম তালপটকেই টোলে পড়ানোর কাজে যুক্ত হন শ্রীধর।

গন্ধকালী বিদ্যাশিক্ষায় যুক্ত হয় আচার্যের সহায়তায়। গ্রাম্য রাজনীতির শিকার হয়ে শেষপর্যন্ত গন্ধকালী গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়। ঘটনার বিচিত্র আবর্ত পেরিয়ে শেষমেষ গন্ধকালী নানা বাধা অতিক্রম করে এসে হাজির হয় চৌথুপী বিহারে, যা ছোট হলেও জ্ঞানচর্চার এক প্রশংসনীয় কেন্দ্র ছিল। জ্যোতিবিজ্ঞান বিষয়ে পারঙ্গম সদ্য তরুণী গন্ধকালী, যিনি ততদিনে রূপান্তরিত হয়েছেন থেরী সঞ্জীবনীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মহান অধ্যাপিকা।

গ্রন্থটি নানা ঘটনা বা আখ্যান কেন্দ্র করে গড়ে উঠায়, যুক্ত হয়েছে তিব্বতের কাহিনি। কুষ্ঠের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিয়েছে রাজপুত্র খু স্তোন এর। তিব্বতে এর চিকিৎসা নেই, কিন্তু ভারতে আছে। হাজার হাজার তিব্বতবাসীও এতে আক্রান্ত। রোগ মুক্তির উপায় খুঁজতে বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে খু স্তোন হাজির হন ভারতে।

চৌথুপীও তখন মহাবিপদের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। যে কোনও মুহূর্তে তুর্কিরা এসে ধ্বংস করতে পারে বিহার ও তার পুঁথিশালা যেখানে রয়েছে বিভিন্ন পণ্ডিতদের লেখা মহামূল্যবান পুঁথি। আশেপাশের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিহারগুলি থেকেও পুঁথি গোপনে এসে পৌঁছেছে চৌথুপীতে। চৌথুপী বিহার আক্রমণে এগিয়ে আসছে সৈন্যরা। তুর্কি ধ্বংসলীলার হাত থেকে সত্যিই কি বাঁচাতে পেরেছিল পুঁথি? আর গন্ধকালী! সে কি আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিল?

পুঁথিগুলো যদি সত্যিই বেঁচে যায় তবে সেগুলো কোথায়? যোজনগন্ধা কি জানতে পেরে ছিল? যোজনগন্ধা কি মামাজীর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল?

ইতিহাসাশ্রয়ী থ্রিলার উপন্যাসটির জনরা ভাগ করা অনেক কঠিন কাজ। লেখক গন্ধকালীর পুঁথি বর্ণনা করেছেন আত্মজীবনী আকারে। যেখানে গন্ধকালীর জীবন সংগ্রাম ও জ্ঞানের ধারা স্পষ্ট।

খুব কম বই আছে যা পড়তে শুরু করলে আপনাকে বারবার রেফারেন্সের দ্বারে ছুটে যেতে হবে। লেখক গল্পের ফাঁকে ফাঁকে সুকৌশলে ইতিহাস বর্ণনা করেছেন, যা সুখ পাঠ্য যেকোন পাঠকের কাছেই। এই বিষয়টা ভালো লেগেছে বেশি।

উপন্যাসটি পড়লে স্পষ্টত বুঝতে পারা যায় লেখকের বহুদিনের গবেষণালব্ধ রশদের দ্বারা লিখিত বইটি। বইটিতে উঠে এসেছে ভারতের জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা ছাড়াও গণিতশাস্ত্র, ভেষজশাস্ত্রের মহান ঐতিহ্যের কথা। আর্যভট্টের আর্যভট্টীয়, ব্রহ্মগুপ্তের ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত ছাড়াও এসেছে পরাশর সিদ্ধান্ত, অত্রি সিদ্ধান্ত, গর্গ সিদ্ধান্ত, সূর্য সিদ্ধান্ত, মরীচি সিদ্ধান্ত, অঙ্গিরস সিদ্ধান্ত ইত্যাদি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বইগুলির কথা। এসেছে ফলিত জ্যোতিবির্জ্ঞান চর্চায় সেকালের বিহারে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রের প্রসঙ্গ, যার মধ্যে ছিল জলঘড়ি, শঙ্কু, ফলক যন্ত্র, কপাল যন্ত্র, দোলন যন্ত্র ইত্যাদি।

বইটি পাঠককে নতুন করে আমাদের ইতিহাসকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করায়। আমাদের ভারতবর্ষ ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার আঁকড়, তার সামান্য রূপ লেখায় ফুটে উঠেছে। আর লেখক যে পরিমান কষ্ট করে বইটিকে রূপ দান করেছে তা বইটা পড়লেই কিছুটা ধারনা করা যায়।

সবশেষে বলবো, বইটা পড়বেন, শুধু উপভোগ্যই না, আরও অনেক কিছু পাবেন বইটা থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top