ঝড়ে বক মরে PDF Download ফারহানা হোসেন তিথী

‘ফারহানা হোসেন’। জানি অনেকেই তার নাম পর্যন্ত শুনেননি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই তিনি এই সময়কার একজন আন্ডাররেটেড লেখিকা। নারীদের আর গ্রাম্য কুসংস্কার নিয়ে তিনি লিখে চলেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তার একটা উপন্যাস ‘ঝড়ে বক মরে’ বেশ আলোচিত। বইটি না পড়ে থাকলে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে।
কাহিনী সংক্ষেপ
গ্রামের নাম হুরমতিগঞ্জ। ছোট্ট একটা গ্রাম। বাংলাদেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম বলতে যা বুঝায় সেটাই হলো হুরমতিগঞ্জ। নানা কুসংস্কারে আবৃত। গ্রামের হুজুরকে সবাই মানে। গ্রামের মানুষগুলো সহজ সরল। তাদের দিয়ে ধর্মের নামে সব কিছুই করা যায় বলতে গেলে!
আবার নারীদের জন্য কঠিন পর্দা কিন্তু পুরুষের সাত খুন মাফ!
এছাড়া গ্রমে পুরুষ ডাক্তার প্রবেশ নিষেধ! ফাহমিদা নামের এক মহিলা ডাক্তার আসে গ্রামে। সে বুঝতে পারে এই মানুষগুলোকে অন্ধকার থেকে বের করা দরকার। সাথে আরও একজন আছে। গ্রামের মাতব্বরের ছেলে ওয়াহিদ। মাতব্বর যেমনি ধুরন্ধর, ঠগবাজ। ঠিক তার উল্টো তার ছেলে ওয়াহিদ। এই গ্রামের মানুষের কুসংস্কারকে ভেঙে একটা আদর্শ গ্রামে পরিনত করা ওয়াহিদের স্বপ্ন। সেটা সফল হয়েছিল কি-না সেটা বইটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’। প্রবাদ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে তা বুঝতেই পারছেন। তাই ‘ঝড়ে বক মরে’ বইয়ের নাম শুনে কাহিনী আন্দাজ করেছিলাম। লেখিকার কবিতা পড়া হলেও তাঁর গল্প পড়া হয়নি। লেখিকার লিখনশৈলী দারুণ। গল্পে ডুবতে সময় লাগেনি। কিন্তু আফসোস হচ্ছে গল্পে মজতে না মজতেই কাহিনী শেষ! আসলে বইটা লেখাই হয়েছে গ্রামের সেই কঠিন বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে। শুধুমাত্র নিছক কোনো গল্প বলতে চাননি লেখিকা। একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। সেটা ক’জন নিতে পারে সেটাই দেখার।
এছাড়া গ্রামের পঞ্চায়েত এর ব্যাপারটা দেখে খুবই কষ্ট লেগেছিল। কি সমস্যায় না ভুগে গ্রামের সাধারণ মানুষরা! ন্যায় বিচারের ধার ধারে না! আইন বলে কিছু নেই! বড় কিছু না হলে পুলিশও নাক গলাই না। সেই বিষয়টাকেই লেখিকা ফুটাতে চেয়েছেন। বলাই বাহুল্য তিনি সফল। বইটা শেষ করার পরও বইয়ের একটা লাইন মাথায় গেঁথে আছে— ‘মেয়ে মানুষ হলো গায়ে দেওয়া কাঁথার মতো। ছিড়ে গেলে নতুন কাপর দিয়ে ফের সেলাই করে ব্যাবহার করা যায়। কিন্তু জিনিস ঐ একই’!
বইয়ের শেষটা বেশি ভালো লেগেছে। যদিও লেখিকা কাহিনী খুব একটা বাড়ান নি। আমি আসলে চেয়েছিলাম। কাহিনী আরও একটু বিস্তার করুক। যাই হোক, বইটা আমার আশা পুরোন করতে পেরেছে। আমি সন্তুষ্ট। আমার মতে শেষে পাঠকের মনে একটা আফসোস রেখে যেতে পেরেছেন তিনি। এইখানেই তাঁর সার্থকতা! কি ব্যাপারে আফসোস সেটা যারা পড়েছেনে তারা বুঝবেন আশা করি।
চরিত্র বিশ্লেষণ
এই বইয়ের একটা ভালো ব্যাপার হলো চরিত্রায়ন। যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তুলার ব্যাপারটা সবাই পারে না।
প্রথমেই যার কথা বলবো সে হলো, হুজুর। একজন ভন্ড হুজুর। যার অতীত নিয়ে ধোঁয়াশায় ভরা।
তারপর আছে ইলিয়াস খাঁ। সে গ্রামের মাতব্বর। ধর্মের নামে যা-তা করে বেড়ায়! মাতব্বরের ছেলে ওয়াহিদ। গ্রামকে নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক। একটা আদর্শ গ্রানে পরিনত করা যার ব্রত। ডাক্তার ফাহমিদা। কঠিন স্ট্রাগল করে পড়ালেখা করেছে সে। ডাক্তারের যা গুণাগুণ থাকা উচিত সবই তার আছে।
আছে একজন জসীম। কালো, সহজসরল, আর ভালোবাসায় পূর্ণ তার মন। লেখিকা এই চরিত্রটা একেবারে খাসা করে গড়েছেন।
জসীমের বউ জুলেখা। এই চরিত্রটাকে দেখে যেমন কষ্ট হয় তেমনি কিছুটা রাগও হয়!
এছাড়া আরও একজন আছে ইলিয়াস খাঁ এর বিবি ‘জয়তুন’। এই চরিত্রটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেমন জানি ঠিক ফুটেনি! মানে প্রভাব বিস্তার হয় নি!
সবশেষে বলবো, গ্রাম্য কুসংস্কার আর আর তার প্রতিবাদ নিয়ে কোনো বই পড়তে চাইলে বইটা আপনার জন্যই।