জলকুঠুরি মুশফিক উস সালেহীন PDF download (সামাজিক উপন্যাস)

মুশফিক উস সালেহীন বর্তমানের একজন জনপ্রিয় উঠতি লেখক। বেশ কয়েকটা বই ইতোমধ্যে বেড়িয়েছে তার। মূলত থ্রিলার লিখেই লেখালিখির যাত্রা শুরু করেন। তবে শুধু থ্রিলার না একটু সামাজিক ঘরনার লেখাও লিখতে চেয়েছেন, লিখেছেনও। তেমনই একটি সামাজিক উপন্যাস জলকুঠুরি। ছোটখাটো দারুণ একটা বই। যারা পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপঃ ছেড়ে দেওয়ার স্বভাবটা আরিফ সাহেবের বংশে আছে। তার বংশের লোকেরা তাকে ছাড়লো,সে তাদের ছাড়লো। আরিফ সাহেব মনে করে যে একবার সম্পর্ক ভাঙতে শেখে, সে আর কখনও গড়তে পারে না। সব সম্পর্কেই সে ভাঙন দেখে। ভবিষ্যতে একাকিত্ব দেখে। সম্পর্ক গড়া এবং ধরে রাখার চেষ্টায় অপ্রয়োজনীয়তা দেখে। তিনিও দেখেছিলেন। তাই আর কখনও সেই সম্পর্ক জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করেননি। ভবিষ্যতেও যেন সেই চেষ্টা না করতে হয়, সেজন্যই চল্লিশ বছর পর আমেরিকা থেকে কমলপাড়া গ্রামে তার নিজের বাড়িতে এসেছেন তার নামে যত সম্পত্তি আছে সেগুলো তার ছোট ভাই জহির রহমানের নামে লিখে দিতে। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না তার রানু ফুফু বেঁচে আছেন।

জানার পর সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনলেন তার সম্পত্তির কিছু ভাগ ফুফুকেও দিবেন। আরিফ সাহেবের বয়স এখন ৬০ বছর। আমেরিকা থেকে তিনি গ্রামে এসে প্রথমে ভেবেছিলেন সম্পত্তির ঝামেলা শেষ করেই ফিরে যাবেন কিন্তু গ্রামে প্রচুর বৃষ্টিতে বন্যা হওয়ায় কিছুদিন থাকার সিদ্ধান্ত নেয় সে। তখন তাকে ঘিড়ে ধরে সেই চল্লিশ বছর আগের অতীত। তার শৈশব মনে পড়তে থাকে দুই হাতে নাটাই নিয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দেয়া, জানালার পাশে চুড়ুই পাখিটার জন্য চুরি করে চাল এনে রাখাসহ আরও কত কিছু!

চল্লিশ বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে রানু বলে যাকে ডাকতো যে ছিল খেলার সাথী তাকে এখন ডাকতে হচ্ছে রানু ফুফু সে এখন তার সামনে আসে আঁচল পুরোপুরি টেনে দিয়ে। আরিফ সাহেবের অতীত যখন ডানা মেলেছে তখন তা উড়ার ব্যবস্থা হয় তার ভাতিজা হারুনের মাধ্যমে ছোট বেলার বন্ধু করিম মজুমদারের সাথে দেখা হয়ে। গল্পে গল্পে উঠে আসে সেই কলেজ জীবনের প্রেম ফেলে আসা ভালোবাসার মানুষ ততুশ্রী যাকে ‘শ্রী’ বলে ডাকতো তিনি,বন্ধু পল্লব,করিম মজুমদারের ভালোবাসার মানুষ রুপা,তাদের কলেজ জীবনের শত্রু সতীনাথ। আরিফ সাহেব জানতে পারে ততুশ্রীদের বাড়ি সরকারবাড়িসহ,হিন্দুপাড়া করিম মজুমদারদের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাক-মিলিটারিরা। একেকজনের জীবন কিভাবে পাল্টে যায়। তারপর সে ফেলে আসা অতীত ঘাটতে শুরু করে আরিফ সাহেব। দেখা করে সে চল্লিশ বছর আগের পরিচিত মানুষগুলোর সাথে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে আদতে চল্লিশ বছর আগে কি হয়েছিল? সরকারবাড়িতে আগুন দেওয়ার পিছনে কি কারন ছিল? তাকে কেন আমেরিকা যেতে হয়েছিল? তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার জন্য কেনইনা মিলিটারিরা তার আব্বাকে হত্যা করেছিল? তার ভালোবাসার মানুষ শ্রী এখন কোথায়? এতদিন পরে এত এত প্রশ্নের উত্তর সে কি পাবে? জানতে হলে পড়ে ফেলুন দারুন এই বইটা।

দারুণ একটা বই। সামাজিক উপন্যাসে দেখা যায় সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় সেটা ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। সেইদিক থেকে বইটা স্বার্থক। বইটায় সমাজের অনেকগুলো অসঙ্গতি উঠে এসেছে,সমাজের বিভিন্ন সময়ের কথা বলা হয়েছে। একটা ৬০ বছরের ব্যক্তির অতীতকে ঘিড়ে পুরো একটা উপন্যাস অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রথমদিকে গল্প অনেক ধীর গতিতে আগানোর কারনে কিছুটা বিরক্তি লেগেছিল কিন্তু একটু ধৈর্য ধরে গল্পের গভীরে যেতে থাকলে আপনার ভালো লাগবেই বইটা। বিশেষ করে গল্পে যখন অতীতের রহস্য টেনে আনা শুরু করেছে তখন শেষটা না পড়া পর্যন্ত মনের ভিতর একটা খসখসানি শুরু হওয়ারই কথা যেটা আমার হয়েছে।

আর লেখকের লিখনশৈলী বরাবরের মতই বেশ ভালো। যার ফলে বইটা আপনাকে আরও বেশি টেনে ধরে রাখবে।

সবশেষে বলবো, ছোটখাটো দারুণ একটা উপন্যাস। ভালো কিছু উপভোগ করতে চাইলে বইটা পড়ে ফেলুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top