জন অরণ্য PDF Download শংকর

বইপ্রেমিদের কাছে ‘শংকর’ নামটা অবশ্যই পরিচিত। দুই বাংলাতেই খুব জনপ্রিয় লেখক তিনি। বাবার মৃত্যুর পর কোলকাতায় স্থায়ী বাস গাড়েন। কিন্তু জীবন চালানোর তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এককালে ফেরিওয়ালাও ছিলেন। সমাজের নানা অলিগলি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁর অনেক। সেরকমই এক বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে লেখা তার বই ‘জন অরণ্য’।

যা ব্যাপক সাড়া ফেলে দেই প্রকাশের পরপরই। স্বয়ং সত্যজিৎ বাবু বইটা পড়েই সিদ্ধান্ত নেন ফিল্ম বানানোর। বইটার প্রকাশকাল ১৯৭৩। ঠিক ছ’বছর বাদে ১৯৭৬ সালেই সত্যজিৎ রায় ফিল্ম বানিয়েছেন। যারা এই অসাধারণ বইটা পড়েন নি, তারা অবশ্যই বইটা পড়বেন। চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ ফাইল পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

‘আজ পয়লা আষাঢ়। কলকাতার চিৎপুর রোড ও সিআইটি রোডের মোড়ে একটা বিবর্ণ হতশ্রী ল্যাম্পপোস্টের খুব কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোমনাথ। পুরো নাম – সোমনাথ ব্যানার্জি।’

সত্তরের দশকের কলকাতা। সমগ্র ভারতে প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষিত বেকার। তবে তাদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সোমনাথের। পরিবারের তৃতীয় সন্তান সোমনাথ বড় দুই ভাইয়ের মত স্ট্যান্ড করতে পারেনি, যার ফলে বড় কোনো চাকরিও বাগিয়ে নিতে পারেনি। কোনোমতে পাস কোর্সে বিএ পাশ করে গত আড়াই বছর ধরে চাকরির পেছনে ছুটে চলছে। বিসিএস দিয়ে চাকরি পাওয়া বাবার সন্তান সোমনাথ নিজেকে খুব একটা বাবার সামনে দাঁড় করান না। তবে তার সকল কাজের ক্ষেত্রে বৌদি কমলার প্রশ্রয় এবং উৎসাহ রয়েছে।

সোমনাথের বন্ধু সুকুমার। কলেজে একসাথে পড়লেও তেমন কথা হয়নি। একদিন চাকরি খুঁজতে গিয়ে ফের পরিচয় এবং দুইজন একই নৌকার মাঝি হওয়াতে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে যায়। সুকুমারের বাবা সামনেই রিটায়ার্ড করবেন। তারপর পুরো সংসারের ভার এসে পড়বে সুকুমারের ঘাড়ে। তাই এমুহূর্তে তার একটি চাকরির খুব দরকার।

সোমনাথের একটি প্রেমিকাও আছে। তপতী নাম। কলেজ জীবনে পরিচয়। কবি সোমনাথের সাথে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া তপতীর পরিচয় এবং তারপর মন দেয়া-নেয়া। এদিকে যখন সোমনাথ চাকরির পেছনে ঘুরে জুতোর তলা খুইয়ে চলেছে, ওদিকে তপতী বরাবর ভালো ফলাফল করে রিসার্স স্কলারশিপ বাগিয়ে নিয়েছে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত না হতে পারে তপতীর থেকেও মুখ লুকিয়ে বেড়ায় সোমনাথ। যা নিয়ে বেজায় অভিমান মেয়েটির।

যদি বলি, বইটির মূল থিমটা অনেকটা নীরস। তবে লেখকের কলমের জাদুতে হয়ে উঠেছে অসাধারণ। বেকারত্ব অনেকের কাছে অভিশাপ স্বরূপ। লেখাপড়া শেষ করে সবাইই একটি স্থায়ী জীবন চায় যেখানে আর্থিক নিশ্চয়তা রয়েছে। সোমনাথ কিংবা সুকুমারও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ।

যেখানে দশটি পদের জন্য দশ লক্ষাধিক আবেদন পড়ে সেখানে চাকরির আশা করা নিতান্তই সময় ও শ্রম নষ্ট। তবুও মানুষ আশায় বেঁচে থাকে। কেউ চায় পরিবারের হাল ধরতে আবার কেউ চায় পরিবারের বাকি সবার মতই কিছু একটা করতে অথবা প্রেমিকাকে আর্থিক নির্ভরতার নিশ্চয়তা দিতে। বইটা পড়ার সময় নিজেই ভাবছিলাম, আমরা যখন পড়ালেখা শেষ করে সোমনাথের জায়গায় যাব, তখন আমাদের জি হবে? আমরা যারা সাধারণ ছাত্র?

নৈতিকতার সাথে উচ্চাকাঙ্ক্ষার চিরকালীন দ্বন্দ্ব এবং বেকার তরুণদের হতাশা ও দুর্দশার এই প্রতিচ্ছবি বর্তমান সময়ে এসেও অতিমাত্রায় প্রাসঙ্গিক। ‘সোমনাথ’ তাই আর বইয়ের কোনো চরিত্র রূপে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না, বরং সে হয়ে ওঠে আমাদের সকলের প্রতিনিধি। লেখক নিজেই শেষে অনেক কথা বলেছেন। সেসব না হয় বইটা পড়েই জানুন।

সবশেষে বলবো, এই অসাধারণ বইটা মিস করা একটা বোকামি হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top