‘পলাশ পুরকায়স্থ’ বেশ স্বনামধন্য একজন থ্রিলার লেখক। সম্প্রতি তার নতুন একটা প্যারাসাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘কাগজের জাদুকর’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কিছুটা অন্যরকম বইটা। এটাকে একটা সিরিজ হিসেবেও করার ইচ্ছা আছে হয়তো। সে হিসেবে ‘কাগজের জাদুকর’ সিরিজের প্রথম বই। যাই হোক, যারা বইটা পড়তে চান, আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটার পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
‘কাগজের জাদুকর’ নামের মধ্যেই প্রকাশ পায় যে সব কাগজের খেলা! আসলেই তাই।
রেবতী নামের ছোট্ট রহস্যময় একটা মেয়ে। যে অদ্ভুতভাবে অনেক কিছুই জানে! চোখের দৃষ্টি দিয়েই সে একজন মানুষের ভিতর দেখে নিতে পারে!
রেবতী পড়ে ‘আমরিকান কারিক্যুলাম’ নামের একটা ইংলিশ স্কুলে। সেই স্কুলেরউ একজন ছাত্র তুতুল। সেও ছোট। ক্লাস ফোরে। তার বাব-মা, আসিফ এবং রেশমা দু’জনেই চাকরিজীবী। তুতুল সারাদিন থাকে কাজের বুয়া রাশেদার হাতে। বাব-মা’র অনুপস্থিতিতে এই বুয়া তুতুল’কে শারিরীক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে। অদ্ভুত উপায়ে তা জেনে যায় রেবতী।
সে একদিন তুতুলকে একটা কাগজের হর্সম্যান দেয়। বলে এটা এখন থেকে রাশেদা’কেই ভয় দেখাবে। তুতুল সেটা বাসায় নিয়ে যায়, আর তারপরেই শুরু হয় অদ্ভুত সব ঘটনা! অদ্ভুতভাবে রাশেদা খুন হয়ে যায়! ওদিকে এক্সিডেন্ট হয় একটা টোকাই ছেলের। এসবের সাথে সম্পর্ক কিসের? ঐ কাগজের জাদুকরের…?
লেখকের এর আগে কোনো বই পড়া হয় নি তবে এই বইয়ের কিছু অংশ লেখকের প্রোফাইলে পড়ে আর নামের মোহে পরে বইটা কিনি। কিনে অবশ্য লাভই হয়েছে, সব লেখকেরই আলাদা আলাদা লেখার স্টাইল। পলাশ ভাইয়ের স্টাইলও আলাদা। লেখার মাঝেই তিনি ‘পুনশ্চ’ কিংবা ব্র্যাকেট () দিয়ে কিছু জিনিস ব্যাখ্যা করে দেন যা ভালোই লাগে। তবে কিছু জিনিস আমার চোখে লেগেছে।
যেমন– লেখার শেষে কিংবা কোনো কনভারসেশনের শেষে তিনি ‘…’ জিনিসটা ব্যাবহার করেছেন যা মাঝে মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করে। আর কিছু কথা আছে যেগুলো বইয়ে উল্লেখ না করলেও চলে। যেমন- শিবলি নামের একটা চরিত্র, যাকে তার বন্ধু বিদেশ থেকে একটা ফোন উপহার পাঠায়। বিষয়টা এমন জায়গায় বলা হয়েছে যেখানে এটা না বললেও চলতো।
এসব জিনিস ঠিক থাকলে বইটা আরও পারফেক্ট লাগতো।
বইটা পড়ে অনুভুতি কিছুটা মিশ্র। লেখকের বর্ণনা ভঙ্গী ভালো লেগেছে। একটু আলাদা। তবে কিছু কিছু জায়গায় এমন জিনিস বর্ণনা করেছেন যে, সেটা সেখানে না করে পরে যদি আরও বিস্তারিত করা হতো তাহলে আরও ভালো লাগতো। তারপরও কিছু জিনিস বাদ দিয়ে পাঠ অনুভুতি দারুণ। আর প্যারাসাইকোলজিক্যাল বলা হলেও আমি একটু হররের স্বাদও পেয়েছি!
প্লটঃ প্লট বলতে বলতে কি বুঝায়? কাহিনী কোন জায়গায় ঘটছে সেসবের বিস্তারিত। বইতে এই জিনিসটা অস্পষ্ট। থানা কিংবা অফিসের ঠিকানা দিয়ে আরও একটু বিস্তারিত বর্ণনা করলে ভালো লাগতো। পরে অবশ্য কাহিনী পুরান ঢাকার দিকে যায় সেটা বুঝেছি।
চরিত্রঃ বইয়ের মূল চরিত্রে আছে বেশ কয়েকজন। প্রথমেই, রেবতী। সে কঙ্কা’র মেয়ে। আছে তুতুল। তুতুলের বাবা-মা, আসিফ এবং রেশমা। আর্মি পার্সন শিবলি। গোয়েন্দা অফিসার সাজ্জাদ। এই সাজ্জাদ কে লেখক একটু ভিন্ন করতে চেয়েছেন। আমার মনে হয় তিনি সেটা পেরেছেনও। অদ্ভুতভাবে এই চরিত্রটা কে আমার ভালো লাগে। সাজ্জাদকে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
এক’জন ছাড়াও একজন আছে। তার নাম রুদ্র। তবে তার ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না।
সব বইয়ে কিছু বানান ভুল থাকেই। এই বইয়েও ছিল, বেশ ভালোই ছিল। কয়েকটা এড়িয়ে যাওয়া যায় তবে কিছু চোখেও লেগেছে। সবশেষে বলবো, মোটামুটি ভালো লাগার একটা বই। পড়ে কিছুটা ভালো সমস্যা নিশ্চয়ই কাটবে।