খোয়াবনামা PDF Download আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

‘খোয়াবনামা’ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস। উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশকাল ১৯৯৬ সাল। প্রকাশিত হয়েছিল মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী থেকে। একই বছর পশ্চিমবঙ্গের ‘নয়া উদ্যোগ’ প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। ১৯৯৬ সালেই উপন্যাসটি প্রফুল্ল কুমার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার লাভ করেছিল।

উপন্যাসটির মূল প্রেক্ষাপট মূলত ভারতবর্ষ বিভাজন ও এর পরবর্তী সময়কাল নিয়ে গড়ে উঠেছে। কাহিনীটি বিস্তৃতি লাভ করেছে বগুড়া জেলার একটি প্রত্যন্ত ও ক্ষুদ্রাকার জনপদকে কেন্দ্রবিন্দু করে। উপন্যাসে যেই অঞ্চলটির কথা বর্ণিত হয়েছে তার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিল যার নাম ‘কাৎলাহার’।

কাৎলাহার ও এর আশেপাশের গ্রাম গিরিরডাঙা, নিজ গিরির ডাঙ্গা ও গোলাবাড়ি হাট প্রভৃতি স্থান সমূহের জনপদের সাথে তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সংযোগ উপন্যাসটিতে চিত্রিত হয়েছে। দেশ বিভাগ জনিত নানান ঘটনা, উপ-ঘটনা, রাজনীতির মার-প্যাঁচ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, গ্রামীন জীবন, অজ্ঞতা-কুসংস্কার, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এসব কিছুই উপন্যাসটি মূল উপজীব্য।

যা উপন্যাসটির প্রেক্ষাপটকে বেশ বিস্তৃত করেছে। সাহিত্যের সবচেয়ে জীবন ঘনিষ্ঠ শিল্পমাধ্যম উপন্যাস। খোয়াবনামা উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে সমকালের তমিজের পাঁচ পুরুষ আগে। পাঁচ পুরুষ আগের প্রজন্ম কাৎলাহারের বিলের চারিপাশ পরিস্কার করে বসবাস শুরু করে। সেই সকল পূর্ব পুরুষের মধ্যে একজন ছিলেন মুনশি যে কিনা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সৈন্যের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।

কাৎলাহারের আশেপাশের মানুষ বিশ্বাস করে মুনশির অশরীরী আত্মা এখনো রাতের বেলা বিল শাসন করে, বিলের ধারের পাকুড় গাছের ডালে বসে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে পাকুড় গাছটাও এক সময়ে কাটা পড়ে, ইট খোলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আশেপাশের সব জংগল পরিস্কার করে জনবসতি গড়ে ওঠে।

একসময় বিল শুকিয়ে গেলে, শুকনো বিলে চাষাবাদ শুরু হয়, বিলের মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। বিলের মালিকানা জমিদারের হাতে চলে যাওয়ার পর জেলে পাড়ার বেশিরভাগ জেলে চাষায় পরিণত হয়। কিছুকাল অতিবাহিত হলে কাৎলাহারের পাড়ের ওই গ্রামে একটি অয়েল মিল স্থাপিত হলে গ্রামের অধিকাংশ কলু গ্রাম ছেড়ে যমুনার তীরে বসতি গড়ে তুলে, নিজেদের পেশা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাদ করয়ে শুরু করে।

বিলের মালিকানা জমিদারের হাতে যাওয়ার পর অনেক মাঝি আবার কামলা খাটতে শুরু করে। কোন এক আকালের সময় এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গ্রামের প্রভূত জমির মালিক হয়ে ওঠে শরাফত মন্ডল। জমির মালিকেরা জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে শহরে গিয়ে শ্রমজীবী হিসেবে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে শুরু করে।

ব্রিটিশ শাসন আমল খোয়াবনামার পটভূমির একটি বড় অংশ জুড়ে স্থান করে নিয়েছে। ইংরেজদের তাড়িয়ে দেওয়া আর জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ও উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে। দেশ থেকে জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার অনেকদিন পরেও যে দেশ জমিদারদের আইনেই চলেছিল তাও উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে।

দেশত্যাগী হিন্দুদের জমি কেনার মাধ্যমে শরাফত মন্ডলের প্রতিপত্তিশালী হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ বিভাগের কথাও গল্পে স্থান পেয়েছে। দেশ বিভাগের আগে ও পরে যেসব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল লেখক সেসব উপন্যাসে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে ইতিহাসকে ধারণ করতে চেয়েছেন।

উপন্যাসে দেখানো হয়েছে এক সময় হিন্দু মুসলিম সকলে এ মহাদেশে একসাথে মিলেমিশে বসবাস করতো কোন সমস্যা ছিল না। তাহলে হঠাৎ কেন এই বিভাজন? লেখক এই প্রশ্নের ও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসে যে শুধু ঐতিহাসিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে তা নয়।

আআখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় মানুষের জীবনের সাধারণ দিকগুলো অসাধারণ ভঙ্গিমায় প্রকাশ পাবে না তা কী করে হয়! এই উপন্যাস ও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের প্রত্যেকের গল্প সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়েছে গল্পে। এই উপন্যাসের স্বরূপ অনুধাবনে উপন্যাসটি পাঠ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। ঐতিহাসিক ঘটনা আর জনজীবনের বাস্তবতার এরূপ মেলবন্ধন খুব কমই লক্ষ্য করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top