কিন্নর দেশে PDF Download রাহুল সাংকৃত্যায়ন

কিন্নর দেশে’ ভ্রমণ উপন্যাসটির লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়ন। বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এবং বইটির প্রকাশক ছিলো ‘কিতাব মহল’। লেখকের অন্যান্য বইয়ের মত এই বইটিও হিন্দি ভাষায় রচিত হয়েছে। বইটি প্রকাশের পর পাঠক সমাজে সমাদৃত হলে বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় বাংলা ভাষাও বইটি অনূদিত হয়েছে, আমাদের দেশে বইটির বাংলা সংস্করণের প্রকাশক হলো ‘চিরায়ত প্রকাশন’।

রাহুল যে শুধু মাত্র একজন লেখক ছিলেন তা না, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ভারতবর্ষের নামকরা একজন পর্যটক ছিলেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে কাটিয়ে দিয়েছেন। আর এই ভ্রমনের ফলে তিনি যেই অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করেছেন সেগুলাই ব্যক্ত করেছেন তার গ্রন্থগুলোতে।

কোন কোন বইতে স্থান পেয়েছে ইউরোপের কাহিনী আবার কোন কোন বইয়ে ভারতের কাহিনী। তার গ্রন্থগুলোর অন্যতম দিক হলো পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করলেও অনেক দর্শনীয় স্থানের পরিচয় পেলেও নিজের দেশমাতৃকার কথা তিনি ভুলে যান নাই।

উপন্যাসের কাহিনী যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তাতে লেখক উল্লেখ করেছেন প্রথমত তার এই ভ্রমণকাহিনী নিয়ে বই প্রকাশের তেমন কোন ইচ্ছা ছিল না, তিনি তার যাত্রায় যা কিছু দেখেছেন সবকিছুই ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাই গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

এই কাহিনীটি যতটা না ভ্রমণকাহিনী তার চেয়ে বেশি হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি উপেক্ষিত এলাকার পরিচিতি কাহিনীও বলা চলে। অবহেলিত হিমালয় সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে, তাদের জীবনযাপনের সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে বইটি সহায়ক হবে। লেখক কিন্নর দেশ বলতে যেই স্থানটিকে বুঝিয়েছেন তা মূলত হিমাচল প্রদেশের একটি রাজ্য, তিব্বত লাগোয়া কনৌরের একটি স্থান।

সেই স্থানটিকে লেখক তুলনা করেছেন স্বর্গের সাথে। তবে আমরা স্বর্গ বলতে সাধারণত যেই ভাবার্থ বুঝি লেখক তা বোঝাতে চাননি। বরং, তিনি বুঝিয়েছেন একসময় যে স্থানে দেবতারা বসবাস করতো বা যে স্থানের সাথে দেবতাদের যোগাযোগ ছিল বা আছে সেই জায়গাকেই লেখক স্বর্গের সাথে তুলনা করেছেন।

যারা রাহুল সাংকৃত্যায়নের বই পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পেরেছেন শুধু মাত্র ভ্রমণকাহিনী লেখা আর অন্য কোন লেখকের পক্ষে সম্ভব হলেও রাহুলের পক্ষে তা অসম্ভব। আর এই কাহিনীতেও আমরা দেখতে পাই গল্পের একটি বড় অংশ জুড়ে জায়া করে নিয়েছে সমাজের অনাচারের চিত্র।

লেখক যখন তার এই ভ্রমণ শুরু করেন, তখন সবে মাত্র দেশ ভাগ হয়েছে, দেশ ভাগের চিহ্ন এখনো সর্বত্রই বিরাজমান। কিন্নর দেশে ভ্রমণকালে লেখক লক্ষ্য করেন এই দুর্গম এলাকার জনগণ সবসময়েই অবহেলিত। সাম্রাজ্যবাদী থেকে শুরু করে স্বাধীন ভারতের সরকার পর্যন্ত কারওই তাদেরকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

লেখক যতই এক একটি এলাকা পাড়ি দিয়ে ভেতরে গিয়েছেন তিনি এই প্রবঞ্চনা দেখে শিহরিত হয়েছেন। এসব দেখে তিনি ভেবেছেন তাহলে স্বাধীনতার মূল্য কোথায়, কী দরকার ছিল এই মেকি স্বাধীনতার! একটি ভ্রমণকাহিনীর মধ্য দিয়ে সমাজের বাস্তবিকদিক ফুটিয়ে তোলা শুধু মাত্র রাহুল সাংকৃত্যায়নের পক্ষেই সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top