ক্রাচের কর্ণেল PDF Download শাহাদুজ্জামান

‘ক্রাচের কর্ণেল’ বইটির লেখক শাহাদুজ্জামান। কর্ণেল তাহের এর জীবনি নিয়ে এই বইটি ২০০৯ সালে প্রথমবার প্রকাশিত হয়। বইটির প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স। শাহাদুজ্জামান মূলত একজন কথাসাহিত্যিক হলেও প্রবন্ধ এবং গবেষনাধর্মী রচনাতেও তিনি সমানভাবে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।

ক্রাচের কর্ণেল বইটিতেও লেখক অত্যন্ত দক্ষতা এবং সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। বইটি ইতিহাসধর্মী হলেও পাঠক বইটিতে বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনায় সাহিত্যকর্মের মতোই নাটকীয়তা খুঁজে পাবেন৷ সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মহান মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক সেনানি কর্ণেল তাহের এর জীবনিই এই বইটির মূল বিষয়বস্তু।

ক্রাচের কর্নেল রিভিউ

তাহের এর শৈশব থেকে শুরু করে করুণ মৃত্যু পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সকল ঘটনার বর্ণনাই এই বইটিতে রয়েছে। বইটির শুরুতেই পাঠক লক্ষ্য করবেন তাহের এর স্ত্রী লুৎফা এবং তাঁর ছেলে মিশুর কথা দিয়েই বইটির যাত্রা শুরু৷ লেখক অত্যন্ত চমৎকার করে একটি নাটকীয়তা নিয়ে এসেছেন প্রথম অংশের বর্ণনায়। লুৎফা মিশুর অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।

ঠিক এই সময় থেকে লেখক শুরু করেন অতীতের বর্ণনা। তাহের এর শৈশবের চিত্র থেকে আমরা দেখতে পাই তিনি সম্পূর্ণ এক অন্যরকম পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন। বাবা মহিউদ্দিন এবং মা আশরাফুন্নেসা ছিলেন গতানুগতিক ধারার বাংলাদেশি বাবা মায়ের চেয়ে অনেকটাই আলাদা এবং প্রগতিশীল।

ক্রাচের কর্নেল সমালোচনা

দশটি সন্তানের সংসার কে মা আশরাফুন্নেসা পরিচালিত করেছেন সূচারুরুপে। তার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ছেলেমেয়েকেই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠতে হতো খুব ভোরে৷ এরপর প্রত্যেকের ভাগের বরাদ্দ কাজ সম্পন্ন করে স্কুলে যেতে হতো। এরকম একটু সুশৃঙ্খল পরিবেশে বড় হওয়ার ফলেই তাহের এর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলার অভ্যাস তৈরী হতে থাকে। তাদের পিতা মহিউদ্দিনের ছিলো গাছপালার প্রতি অগাধ ভালোবাসা।

চাকরিসূত্রে তাঁকে বহুবার বহু জায়গায় বদলি হতে হয়েছে। তিনি প্রতিটা নতুন জায়গায় গিয়েই গড়ে তুলেছেন নিজের একটি বাগান। এভাবেই পিতার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তাঁর মা আশরাফুন্নেসার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি না থাকলেও বই পড়ার প্রতি ঝোঁক ছিলো। তিনি সব কাজ শেষ করে রাতে হারিকেনের আলোয় পড়তেন বিভিন্ন ধরনের বই। মায়ের এই অভ্যাস থেকেও তাহের অর্জন করেন জানার তৃষ্ণা।

শাহাদুজ্জামানের বই PDF

মা আশরাফুন্নেসার কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি। সেটা হলো-“আমাদের জীবন শুধু আমাদের নিজেদের জন্য নয়,এ জীবনের ওপর দাবী আশেপাশের চেনা অচেনা মানুষের।” এই শিক্ষাটি তাহের কতটা ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলেন সেটা তাঁর সারাজীবনের ওপর দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। ছোটবেলা থেকেই তাহের ছিলেন অসম সাহসী।

কোন অবিচারের সামনে তিনি নিজেকে ছোট মনে করেননি, এগিয়ে গেছেন তার প্রতিকারে। একবার তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনকে বহনকারী ট্রেনের বগিতে ঢিল ছুড়েছিলেন। ম্যাট্রিকে যখন ছাত্র ছাত্রীদের বিষয় হিসেবে উর্দু নাহয় আরবি নিতে হতো সেই সময় তাহের সংষ্কৃত নিয়েছিলেন। অন্যায় মনে হলে তিনি প্রচলিত নিয়ম ভাঙতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

স্কুলের এক শিক্ষক যিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে তাহের শুনতেন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের গল্প আর মনে মনে দেখতেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। পরবর্তীতে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ এবং ‘এন্টিডুরিং’ পাঠ তার মনে বিপ্লবের আগুনকে আরো উস্কে দিয়েছিলো।

পড়াশুনার গন্ডি শেষ করে তাহের শুধুমাত্র জীবিকানির্বাহের জন্যই সেনাবাহিনীতে যোগদান করেননি। এটা ছিলো তাঁর পরিকল্পনার অংশ। তিনি জানতেন যে একটি বিপ্লব গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই তাঁকে ওয়ার ফেয়ার শিখে নিতে হবে৷ এজন্যই সেনাবাহিনী তে যোগদান করে প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিলেন খুব ভালোভাবে৷ সামরিক বাহিনী থেকে তাঁকে যতগুলো প্রশিক্ষণ এবং মিশনে পাঠানো হয়েছে তার প্রত্যেকটিই তিনি সম্পন্ন করেছেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে।

এসব চলাকালীন একসময় পারিবারিক ভাবেই তাঁর বিয়ে হয় ইডেন কলেজের ছাত্রী লুৎফার। লুৎফাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে তাহের যেন তাঁর স্বপ্নের যাত্রায় একজন সঙ্গী পেলেন। লুৎফা কখনো তাঁর স্বামীকে সংসারের মায়ায় বেঁধে স্বপ্ন যাত্রা থেকে পথচ্যুত করতে চাননি৷ বরং বন্ধুর মতো সাহস যুগিয়ে, ভরসা দিয়ে পাশে থেকেছেন সবসময়।

কঠিন সময়ে একাই হাল ধরে সংসারটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। বিয়ের দুদিন পরে যখন তাঁরা ঢাকায় রওনা দেন তখন ট্রেনে তাঁদের সাথে দেখা হয় তুখোড় ছাত্রনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং মোজাফফর আহমেদ এর সাথে। তখন তাহের জানতে পারেন লুৎফাও ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এভাবেই কেটে যায় অনেকগুলো দিন।

এরপর শুরু হয় মুক্তিযু্দ্ধ৷ তাহের আরো দুজন সহযোগী যোদ্ধার সাথে পাকিস্তান আর্মি থেকে পালিয়ে চলে আসেন। সেই পালিয়ে আসার বর্ণনা যে কোনো এ্যাডভেঞ্চার কাহিনীকেও হার মানায়। পালিয়ে এসে তিনি ১১নং সেক্টরের দায়িত্ব নেন। অসম সাহসের সাথে যুদ্ধ করেন। এই অংশে পাঠক শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন সহ আরো অনেক মহান নেতার ভুমিকার সাথেও পরিচিত হবেন, দেখা পাবেন অনেক রকম অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের।

ক্রাচের কর্ণেল PDF

একসময় দেশ স্বাধীন হয়। সেই থেকে শুরু হয় একজন স্বপ্নচারীর স্বপ্নযাত্রাকে বাস্তবায়ন করার কাজ। এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের। জয়,আশা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে স্বপ্নভঙ্গ ও প্রতারণায় কালো দিক। শুধু কর্ণেল তাহের এর জীবনি জানতেই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অংশের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পেতেও পাঠকের কাছে বইটি হয়ে উঠতে পারে অবশ্যপাঠ্য একটি বই।

শাহাদুজ্জামান pdf download

বিসর্গতে দুঃখ pdf

ভাষান্তর সমগ্র pdf

ক্রাচের কর্নেল rokomari

ক্রাচের কর্নেল দাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top