মণপুরানের জোছনা PDF Download রাশেদ রানা

রাশেদ রানাকে আমি ঠিক ভাবে চিনি না। কিন্তু কোনো লেখক সম্পর্কে কিছু না জেনে তার বই পড়তে পারি না। তাই রাশেদ রানার আগে কয়েকটা কবিতা পড়ে বুঝেছিলাম তিনি শক্ত লেখক তাই এই বই পড়া। ‘মণপুরানের জোছনা’ লেখকের প্রথম উপন্যাস, তবু বেশ ভালো লেগেছে। যারা হালকা চালের জীবনধর্মী উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য সাজেস্ট করাই যায়। বইটি কলেবরে বেশি বড় নয়, ছোট বইটির পিডিএফ ফাইল আমাদের ওয়েবসাইট থেকেই পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
উপন্যাসের মূল নায়ক হলো রুদ্র। সে কল্পনাবিলাসী, কল্পনায় নিজেকে ও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে আঁকিবুঁকি করতে ভালোবাসে।
চাকরির সুবাদে যাযাবর জীবন যাপন করতে হয় তাকে। এ জীবনই তার পছন্দ। একদিকে প্রচণ্ড অভিমানী, আবেগকে লুকিয়ে রাখে সযতনে, অন্যদিকে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালোবাসতেও জানে সে!
উপন্যাসের নায়িকা লামিয়া চটপটে, গুণবতী, মায়াময় মুখশ্রীর অধিকারী। কথায় আছে- ‘মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না।’ কিন্ত এই মেয়ে, সেই নিয়ম ভেঙে নিজের ভালোবাসার কথা পছন্দের মানুষটিকে জানিয়ে দেয় অকপটে। প্রথমে লামিয়ার এই প্রকাশটা একটু বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু লামিয়ার বয়স, সে সময়কার আবেগ, পরিবেশ, পরিস্থিতি মিলিয়ে তা স্বাভাবিক রূপ পেয়েছে।
কী পরিণতি হয় লামিয়া আর রুদ্রের ভালোবাসার? তাদের ভালোবাসা কি নীড় খুঁজে পায়? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে পাঠক শেষে এসে, আর সে প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজে পেয়ে যাবেন। আমি থ্রিলার পাঠক হিসেবে জীবনধর্মী উপন্যাসেও একটু থ্রিল খুঁজার চেষ্টা করি আর কি!
শুনেছি উপন্যসের লেখক একজন কবি। এট তার প্রথম উপন্যাস কিন্তু পুরো উপন্যাসের কোথাও মনে হয়নি এটা তাঁর প্রথম উপন্যাস। গল্পের প্লট, গল্প বুনন খুব বাস্তব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর চিত্রায়নে জীবনের এই রূপায়ণ আমার কাছে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়েছে। রুদ্রের মায়ের মৃত্যু রুদ্রের সাথে সাথে পাঠককেও কাঁদাবে। আর এর জন্য তার নিজেকে দায়ী মনে করাকেও অবাস্তব মনে হয় না। আজাদ স্যারের স্নেহপরায়ণ মনোভাব কিংবা লামিয়ার পরিবারের তাকে আপন করে নেয়া কোনো কিছুই অতিরঞ্জিত মনে হয়নি।
মনে হয়েছে যেন এটাই স্বাভাবিক। এমনই ঘটে থাকে। রুদ্রের নিজেকে গাম্ভীর্যের চাদরে মুড়িয়ে রাখা, লামিয়ার জন্য তার অনুভূতিকে প্রকাশ না করা সবই যথার্থ মনে হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই বরং রুদ্রকে অনন্য করে তুলেছে। অন্যদিকে লামিয়া সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চরিত্রের অধিকারী। মেয়েরা সাধারণত শান্ত দীঘির মতো হয়ে থাকে। কোনো আগন্তুক এসে ঢিল ছুড়লে একটু তরঙ্গায়িত হয় বৈকি, কিন্তু কিছু পরেই আবার স্বাভাবিকভাবে স্থির হয়ে যায়। অথচ লামিয়া যেন উন্মত্ত সমূদ্র।
ভালোবাসাময় ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায় সে লণ্ডভণ্ড করে দেয় রুদ্রের সন্যাসী মন। লামিয়ার সাথে লাজুক নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যের মিল না থাকায় অস্বাভাবিক লাগার কথা। রুদ্রের নির্লিপ্ততার কারণে লামিয়ার চরিত্রটিও মানিয়ে গেছে। অর্থাৎ সোযা কথায় বলা যায় লেখক চরিত্রায়নেও সফল। এবং একটি উপন্যাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক এটি।
উপন্যাসে দুটো চিঠি আছে, আছে একটি ভালোবাসার জাফরানি রঙে রাঙানো চিরকুট। যা চিঠিপ্রেমীদের তৃষিত হৃদয় সিক্ত করে তুলবে। উপন্যাসের শেষ খুবই দারুণ। রুদ্র, লামিয়ার পরিণতি কি হয়েছিল তারা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছিল কিনা তার কিছুই বলবো না। বলা উচিতও হবে না। শুধু এটা বলে শেষ করি, মনপুরাণের জোছনার স্বপ্ন দেখতে দেখতে পাঠক শেষ পৃষ্ঠায় নিয়ে আসতে একপ্রকার বাধ্যই করবে। শেষে এসে উপলব্ধি করতে পারবেন অনেক কিছু।
সবশেষে একটা কথাই বলবো, যারা অন্য জীবনের স্বাদ নিতে চান, একটু রোমান্টিকতা পছন্দ করেন তারা নির্দ্বিধায় বইটি পড়তে পারেন