নারী PDF Download হুমায়ুন আজাদ

নারী PDF Download হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আজাদের লেখা ‘নারী’ বইটি বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বাধিক আলোচিত-সমালোচিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। ‘নারী’ বইটি মূলত একটি প্রবন্ধ সংকলন। পূর্বাভাস পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে নারীবাদী এই বইটি লিখতে শুরু করেন হুমায়ুন আজাদ। ১৯৯২ সালের একুশে বইমেলা তে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।।

বইটি প্রথমে প্রকাশ করেছিলো নদী প্রকাশনি। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বইটি যেমন মুক্তমনা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত হয় ঠিক তেমনই সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ বইটির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে। প্রকাশের পর পরই বইটি নিন্দিত এবং নন্দিত উভয় তকমাই লাভ করে৷ বইমেলা তে আসার পর পরই বইটির সব কপি বিক্রি হয়ে যেতে থাকে।

তবে বইটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও থেমে থাকে না ৷ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের কারণে এক সময় বইটি বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। হুমায়ুন আজাদ হঠাৎ খবর পান যে তাঁর আলোচিত এই বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুনে তিনি খুবই মর্মাহত হন। এবং এর কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে জানতে পারেন ধর্মীয় অনুভূতি তে আঘাত করার দায়ে নিষিদ্ধ করা হয় নারীবাদী এই বইটি কে। লেখক বইটির জন্য উচ্চবিচারালয়ে রিট করেন এবং ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় কর্তৃক বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করা হয়। বইটি পুনরায় আগামী প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হতে থাকে। নারীবাদের প্রতি হুমায়ুন আজাদের আগ্রহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থা থেকেই৷

নারীদের অধিকারের কথা তিনি তাঁর সারাজীবন ধরেই বলে আসতেন। সেই সুত্র ধরেই রচিত হয় এই বইটি। এই বইতে হুমায়ুন আজাদ শুধু বাংলাদেশের নারীদের কথাই নয় বরং সারা পৃথিবীর নারীদের কথাই বলেছেন, তুলে ধরেছেন তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা। বইটি মোট ২১ টি অধ্যায় নিয়ে রচিত। প্রতিটি অধ্যায়েই পাঠক দেখতে পাবেন পুরুষতান্ত্রিকতার ক্ষতিকর দিকগুলোর কঠোর সমালোচনা।বইটির শুরু হয়েছে ফরাসী লেখিকা সিমোন দে বেভোয়ার এর একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে।

উক্তিটি হলো “কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে।” এই উক্তিটি দিয়ে বই শুরু করার মাধ্যমে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন তিনি নারীদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়েই বইটি শুরু করতে যাচ্ছেন। বইটির প্রথম অধ্যায়ের নাম “নারী ও তার বিধাতা”।নামটির মধ্যে দিয়েই পুরুষতন্ত্রের প্রতি লেখকের চরম ব্যঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন পুরুষ যুগ যুগ ধরে নারীর ওপর বিধাতার মতো আচরণ করে আসছে। যে বিধাতা নারীদের ভাগ্য নির্ধারন করে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী।

নারীও পুরুষের আদেশের অমান্য করাকে বিধাতার আদেশ অমান্য করার মতো পাপ হিসেবেই মনে করে। দ্বিতীয় অধ্যায়টির নাম লৈঙ্গিক রাজনীতি। এই অধ্যায়ে লেখক তুলে ধরেছেন কিভাবে পুরুষ সুপরিকল্পিতভাবে নারীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। লিঙ্গ বৈষম্যের স্পষ্ট রুপই তুলে ধরা হয়েছে এই অধ্যায়ে।

তৃতীয় অধ্যায়টির নাম দেবী ও দানবী৷ এই অধ্যায়টিতে লেখক খুব সুক্ষ্মভাবে পুরুষতন্ত্রের একটি অত্যন্ত বিপদজনক দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন পুরুষ কিভাবে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কখনো নারীকে দেবী বানিয়ে স্তুতি করেছেন কখনো আবার তুলে ধরেছেন দানবী বা ডাইনী হিসেবে। যখন যেভাবে উপস্থাপন করে কাজ হাসিল হয়েছে তখন সেভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। নারীকে আলাদা কোন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।

নারী জাতির ঐতিহাসিক মহাপরাজয় নামের অধ্যায়টিতে তিনি দেখিয়েছেন প্রাচীনকালে ইতিহাসে বর্ণিত নারীদের অবস্থান কেমন ছিলো আর বর্তমানে নারীদের অবস্থান কোথায়৷ যুদ্ধজয়ী,সাহসী নারীরা ধীরে ধীরে কিভাবে জীবনযুদ্ধে পরাজয় বরণ করে সংসার নামক কারাগারে ঠাঁই পেয়েছে সেটা তিনি উল্লেখ করেছেন এই অধ্যায়ে।

পিতৃতন্ত্রের খড়গ নামের অধ্যায়টিতে লেখক দেখান কিভাবে মুসলিম এবং হিন্দু সমাজের নিয়ম গুলো নারীদের মাথার ওপর বলির খাড়া হয়ে ঝুলছে। নারীর শত্রুমিত্র অধ্যায়টি তে এসে অনেক পাঠকেরই হয়তো মনটা একটু ভেঙ্গে যাবে যখন তারা দেখবেন তাদেরই অনেক প্রিয় কিছু ব্যক্তিত্ব নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন বিভিন্নভাবে৷

এদের মধ্যে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, সমাজবিজ্ঞানী রুশো, ইংরেজ সমাজপতি রাসকিন৷ তবে লেখক দার্শনিক স্টুয়ার্ট মিল এর সুনাম করেছেন কারণ তিনি প্রকৃতপক্ষেই ছিলেন একজন নারীবান্ধব ব্যক্তি। এছাড়াও আরো অনেক অধ্যায় রয়েছে এই বইটিতে৷ এই বইটি পাঠকের সামনে অন্য এক জগৎ তুলে ধরবে।

প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার দ্বার খুলে দিবে চোখের সামনে৷ হুমায়ুন আজাদ রচিত অনন্য এই বইটি পড়ার সুযোগ পাঠকে নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবেন না