অনিল বাগচীর একদিন PDF Download হুমায়ূন আহমেদ

অনিল বাগচীর একদিন PDF Download হুমায়ূন আহমেদ, “অনিল বাগচীর একদিন” বইটি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের একটি হৃদয়স্পর্শী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই। বইটি শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা 63 এবং বইটির মুদ্রিত মূল্য 100 টাকা। অনিল বাগচীর বয়স 25। সে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে। কয়েকদিন ধরে সে তার বাবাকে চিঠি দিচ্ছে কিন্তু তার উত্তর পাচ্ছিল না।
সে একটি মেসে থাকে এবং প্রত্যেকদিন সকালে পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গে। তবে উপন্যাসটির যেখানে শুরু সেখানে অনিল বাগচীর ঘুম ভাঙ্গে এক কর্কশ শব্দে। মেসের প্রতিবেশী গফুর সাহেব এসে জানায় যে তার বাবার একটি চিঠি এসেছে। সেই চিঠি পাঠিয়েছেন রুপেস্বর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার উদ্দিন খাঁ। সেই চিঠিতে অনিল বাগচী জানতে পাই তার বাবা যিনি একজন হাইস্কুলের শিক্ষক তিনি 8 এপ্রিল গ্রামে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
অনিল বাগচীর একদিন
এখানে আমরা একটি বিষয় দেখতে পাই যে মেসের প্রতিবেশী গফুর সাহেব একজন মুসলিম হয়েও বলেন যে, আমি তোমার বাবার জন্য খাস দিলে দোয়া করব। তার জন্য নফল নামাজ পড়বো। অনিল বাগচী তার বোনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পাড়ি জমাই পরেরদিন ভোরে। তার বোন রূপেস্বর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে আছেন।
পথিমধ্যে দেখা হয় বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে যারা পথচারীদের থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপরে এবং সেখানে উপস্থিত থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অনিল বাগচী তার বাবার সততাই এবং সত্য কথা বলার অভ্যাস শেখানোর মাধ্যমে সেখানে সে সঠিক উত্তর দেয় যে দেশের অবস্থা ভালো না। এমনকি তার বাবাকেও মেরে ফেলেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তার বাবার ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দেওয়া সাহসের কথাটা তার মনে বাজতে থাকে।
“cowards die many times before their death”। সাংবাদিকরা তাকে যেখানে ধরে সেখানেই হয়তো অনিল বাগচীর অন্তিম যাত্রা মুহূর্তেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মিলিটারিরা তাকে কিছু বলতে পারেনি। সে একটি বাসে চড়ে বসে এবং সেখানে পরিচিত হয় একজন মানুষের সাথে যার নাম আইয়ুব।
আইয়ুব তার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সাথে নিয়ে শ্যালকের বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছে। তিনি একজন চমৎকার চরিত্র। কখনো হাসিয়েছেন কখনোবা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি তার শালকের বিয়ে এই সময়ে হওয়ার কারণে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। শেষে তার বউয়ের সাথে অনিলের পরিচয় হয়। অনিলকে তিনি তার ভাই মনে করে এবং তার আপন ভাইয়ের স্ত্রীর ছবি অনিল বাগচীকে দেখাই।
তাদের কয়েক ঘণ্টার জন্য এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট গড়ে ওঠে সেই সময়। অনিল বাগচী এবং অন্যান্য পথচারীকে সে চেকপোষ্টে নামানো হয়। সবাইকে একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনিল বাগচী তার বাবার শেখানো সেই সততা অনুসারে সত্যি উত্তর দেয় যে সে একজন হিন্দু। কিনতু তাকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য আইউব সাহসিকতার সাথে বলে যে তার নাম মহসিন। সে হিন্দু নয়। তার এই সত্য বলার মধ্য দিয়ে যে কি ঘটে তা বুঝতেই পারছেন।
কিন্তু তাকে প্রাণ প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং অনিলকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তার বোন যেখানেই থাকুক তার দায়িত্ব আইয়ুব নেবে। আরো বলেন “আল্লাহর কসম করে বলতেছি যে আপনার বোন আমার বোন ,আপনার বোনের দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আপনার যদি কিছু হয় তাহলে আপনার বোনকে আমি দেখব। আমি যতদিন বেঁচে থাকব আপনার বোনকে দেখব। এভাবেই অনিল বাগচীর জীবন সমাপ্তি ঘটে।
প্রিয় পাঠক বুঝতে পারছেন কি সে সময়কার ঘটনা। এমন একটি সময় গিয়েছে যে সময়ে ভীতু মানুষ হয়েছে সাহসী এবং সাহসী মানুষ হয়েছে ভীতু। অনিল বাগচী ঠিক তেমনই একটি চরিত্র যে ছোটবেলায় বাবার আদর্শ বড় হয়েছে। অনিল ছোটকাল থেকেই একটু ভীতু স্বভাবের ছেলে ছিল।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তার ভেতরে এমন একটি পরিবর্তন এনেছে যার মাধ্যমে সে ভীরুতা প্রকাশ করেনি। কিন্তু সে তার বাবার আদর্শ কে কখনো ভুলতে পারেনি। বাবার চিঠি তার বুকপকেটের ভেতরে এক অসীম শক্তির সঞ্চার করেছে যা তাকে সত্য প্রকাশে নির্ভিক করেছে। লেখক বলেছেন অনিল অসম্ভব ভীতু কিন্তু বাবার চিঠি পকেটে নিয়ে সে মিথ্যে বলতে পারছে না, সত্যি তাকে বলতেই হবে।
অনিল বাগচীর একদিন PDF
আমরা উপন্যাসটিতে দেখতে পাই সেই সময়কার চিত্র এবং সততার মধ্যে বেড়ে ওঠা একটি যুবকের। বইটি হয়তো মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র কিন্তু এমনটি ঘটেছে সেই সময়। বইটি পড়ে অনিলের জন্য মন খারাপ হয়েছে। একজন সত্যবাদী হিসেবে মুক্তিপাক সেই আশায় পাঠকের মনে জেগে উঠবে। বইটি পড়ুন, ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং।