লেখক শরীফুল হাসান বর্তমানের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক। বেশ কিছু অসাধারণ বই লিখে পাঠকেএ মন জয় করেছেন বহু আগেই। তার জনপ্রিয় সিরিজগুলোর একটা আহমেদ করিম সিরিজ। এই সিরিজের তৃত্বীয় বই ‘প্রতিচ্ছায়ারা জেগে থাকে’। সিরিজ হলেও প্রত্যেকটা গল্প আলাদা আলাদা সুতরাং কোনো সমস্যাই হয় না। যারা বইটা এখনো পড়তে পারেন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ মিরপুরের একটা বাড়ির নাম তন্দ্রাবিলাস। সেই বাড়ির বেশ পুরনো এক ফ্ল্যাট কিনেছেন ফরিদ আহমেদ। সেই ফ্ল্যাটের এক গল্প আছে। গোপন সেই কথা কেউ জানে না। পরিবার নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে উঠলেন ফরিদ আহমেদ। সময় ভালোই কাটছিল। হঠাৎ ঘটল বিপত্তি। বড়ো মেয়ে লাবনীর যেন কী হয়েছে। একা একা হাঁটে, মাঝরাতে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। কি হয়েছে লাবনীর? দিনে দিনে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ফরিদ আহমেদ লাবনীকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লাবনী কী তবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে? না-কি এর পেছনে অন্যরকম কারণ আছে?
একটি পোড়োবাড়িতে রাত কাটাতে গিয়েছে চার বন্ধু। রাহুল, সৌরভ, জিশান, সিমিন। সেই বাড়ির পেছনের এক অতীত ইতিহাস তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য। সাথে প্যারানরমাল কিছু থাকলে তাও ক্যামেরায় বন্দী করতে চায় ওরা। কাজ শুরু করতে গিয়ে এমন কিছুর মুখোমুখি হলো, যা সেখানে থাকার কথা না। ভয়ে অবশ হয়ে যাওয়া ওরা চারজন জীবন নিয়ে পালাতে চাইছে। কিন্তু এতই কি সহজ? সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো তিন বন্ধুর। বেঁচে রইল কেবল রাহুল। তিন মাস কোমায় থাকার পর যখন রাহুলের জ্ঞান ফিরল, সে আর তখন রাহুল নেই। রাহুলের মাঝে অন্য কারো বসবাস। কে সে? রাহুল-ই কেন তার শিকার হলো? সত্যিই কি এমন কেউ আছে? না-কি রাহুলের মনের ভুল?
লাবনীর বাবা এলেন আহমেদ করিমের কাছে। নিজের মেয়েকে ভালো করতে এরচেয়ে ভালো উপায় আর নেই বলে তার বিশ্বাস। ওদিকে সোহেলের স্মরণাপন্ন হলেন রাহুলের বাবা। একমাত্র ছেলেকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। আহমেদ করিম কিংবা সোহেল আহমেদ; দুইজনই কাজ শুরু করলেন। দৃশ্যমান কোনোকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে তারা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আহমেদ করিম অথৈ সাগরে পড়লেন। বুঝতে পারছেন, তার বিপদ আসন্ন। সোহেল বুঝতে পারছে না তার কী করা উচিত। দুইজনেই যেন অন্ধকার থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছেন। তারা বুঝেছে, প্রতিচ্ছায়ারা সবসময় জেগে থাকে। কখনো ঘুমায় না। শান্ত হয় না। এই প্রতিচ্ছায়াদের সাথে এ লড়াইয়ে জিতবে কী দুইজন?
এক কথায় দারুণ লেগেছে প্রতিচ্ছায়ারা জেগে থাকে বইটি। লেখক শরীফুল হাসান লেখা দিয়ে নিজের যে অবস্থান তৈরি করেছেন। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে খুব তাড়াহুড়ো করে লেখা ও শেষ করা হয়েছে। তবে আহমেদ করিম চরিত্র তৈরি করতে লেখককে যে বেশ পড়াশোনা করতে হয়েছে তা বেশ স্পষ্ট।
গল্পের প্লট ভালো ছিল। গল্পের লেখনীও বেশ সাবলীল। বইয়ে থাকা ভয়ের দৃশ্যগুলো বেশ স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্যি-ই ভয় লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছেন। সেটা লেখকের কৃতিত্ব। তবে শেষটা খুব সাদামাটা ছিল। আরও ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ আসা করেছিলাম। হুট করেই যেন শেষ হয়ে গেল! লেখক পুরো বই জুড়ে যেই সাসপেন্স তৈরি করতে পেরেছিলেন, শেষটা আরও ভালো করে সাজাতে পারতেন বলে মনে হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাইনি। কিন্তু যদি আরও একটু গুছিয়ে শেষ করতেন তবে একটা অসাধারণ বই হতে পারত। এবার অসাধারণ হয়নি কিন্তু দারুন উপভোগ্য হয়েছে।
বাকি সব দিক দিয়ে বইটি বেশ ভালো। লেখকের লেখা শক্তিশালী। তা দিয়ে ওই ছোটখাটো দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠেছেন ভালোভাবেই।
সবশেষে বলবো, উপভোগ্য একটা কাহিনী। নির্দ্বিধায় পড়া যায়। হতেশ হবেন না অন্তত।