সাঁতারু ও জলকন্যা PDF Download শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

‘সাঁতারু ও জলকন্যা’ উপন্যাসটির লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। রোমান্টিক ঘরানার এই বইটি কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অন্যান্য রচনার মতোই এই উপন্যাসটিও প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই পাঠকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। বইটির মূল চরিত্র হিসেবে আমরা দেখতে পাবো অলক নামের এক যুবককে,যার ধ্যান-জ্ঞান এবং নেশার জায়গা দখল করে আছে সাঁতার। জলের মাঝেই সে নিজের পৃথিবী খুঁজে পেয়েছে।

ডাঙার কোনো বিষয়ের প্রতি যেন কোনো খেয়ালই নেই তার৷ জলের মাঝেই সে জীবনে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পায়। ছোটবেলা থেকেই তার এই জলের প্রতি নেশা গড়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই সে বাড়ির পাশের পুকুর, একটু দূরের নদী তে ঝাঁপিয়ে পরতো। বাবা-মায়ের নিষেধ, বকুনি কিছুই তাকে মানাতে পারতো না। এভাবেই তার জীবন আর জলের নেশা একই সাথে প্রবাহিত হতে থাকে।

সাঁতারু ও জলকন্যা বুক রিভিউ

অলকের বেড়ে ওঠা একটি সংষ্কৃতিমনা পরিবারে৷ বাবা সত্যকাম এবং মা মনীষা দুজনেই গান এবং অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবা সত্যকামের একসময় একটি নাট্যদলও ছিলো। মা মনীষা ছাত্রজীবনে বহু নৃত্যনাট্য করার মাধ্যমে বেশ প্রশংসিত ছিলেন। এরকম আপাদমস্তক সংষ্কৃতি ঘেঁষা পরিবারে একজন সাঁতারুর জন্ম কিভাবে হলো তা নিয়ে অলোকের বাবা মা বেশ ভাবেন। তবে তারা অলোকের ওপর নিজেদের মতামত কখনো চাপিয়ে দিতে চান নি।

অলোককে তার সাঁতারের জগৎ নিয়ে নিজের মতো থাকেতে দিয়েছেন, অনুপ্রেরণাও যুগিয়েছেন। অলোকও তার স্বপ্ন যাত্রায় ছুটে চলেছে। একে একে ঘরে তুলেছে অসংখ্য মেডেল এবং অর্জন করেছে সুখ্যাতি। তবে ছোটবেলা থেকেই অলোক বেশ আলাদা ধাঁচের। কোনো ধরণের ঝামেলায় না গিয়ে পরিস্থিতিকে নিজের মতো চলতে দেওয়াই তার চিরকালের স্বভাব।

এ বিষয়ে তার ছোটবেলার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একবার তাদের বাড়ির একটা টর্চ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। দোষী কে খুঁজতে গিয়ে তার মায়ের মনে হয় অলোকই করেছে এই কাজটা। এই ভেবে অলোককে বেদম পিটুনি দেন তার মা। কিন্তু অলোক প্রকাশ করে না যে সে এই কাজ করেনি কারণ সে জানে এটা বলেও কোন লাভ হবে না। তাই যা হচ্ছে হোক। অবশেষে কিছুদিন পর জানা যায় টর্চ টা অলোক ভাঙেনি, ভেঙেছে তার দিদি।

সাঁতারু ও জলকন্যা পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

এই ঘটনায় তার মা খুব অবাক হন। একটু ভয়ও পেতে থাকেন অলোকের আচরণ নিয়ে। এই ভয় শুধু তার মায়ের নয়। অলোকের বাবাও অলোকের এহেন উদাসীন আচরণে কিছুটা চিন্তিত। তারা কেউই অলোককে ঠিকঠাক বুঝতে পারেন না। অলোকের বাবা এটাকেই জেনারেশন গ্যাপ মনে করেন। যেকোন খেলোয়ার বা সাঁতারুর থেকেও অলোক ছিলো আলাদা।

তথাকথিত গ্ল্যামার আর অহংকার তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বরং কেউ যদি তার অটোগ্রাফ চাইতে আসে তাহলেও সে বিব্রতবোধ করে। জল দিয়ে সে নিজের খ্যাতি বাড়াতে চায় না। সে যা করে সবটাই করে জলকে ভালোবেসেই। এদিকে তার সফলতা, সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে অনেক মেয়েকেই। অনেক মেয়েই তাকে আপন করে পেতে চায়। কিন্তু অলোক কারো মাঝে নিজের আপন মানুষটাকে খুঁজে পায় না। অনেক মেয়ের সংস্পর্শেই এসেছে অলোক।

কিন্তু কাউকেই তার মনের মানুষ হিসেবে মানতে পারেনি। সে শুধু শরীর সর্বস্ব নারীকে চায় না। সে চায় জলের মতো নারী যার মধ্যে থাকবে সমুদ্রের গভীরতা, নদীর মতো সরলতা। মাঝেমাঝে সে নিজের কাঙ্ক্ষিত জলকন্যার দেখা পায় কল্পনায়। অবশেষে তার সাথে দেখা হয় বনানী নামের মেয়েটির। যে মেয়েটিকে দেখে তার মনে হয় এর মাঝেই আছে জলের গভীরতা এবং মনের মানুষের ঠিকানা ৷

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাসটিতে দুইটি আলাদা পৃথিবীকে নিয়ে এসেছেন এক প্রান্তে৷ সবার ভালোবাসা পাওয়া অলোক এবং ভালোবাসা না পাওয়া বনানীর জীবনকে এক সূত্রে বেধেছেন এই অনবদ্য উপন্যাসটিতে। অলোকের সাথে বনানীর কিভাবে দেখা হয় এবং কী হয় তাদের পরিচয়ের পরিণতি সেটা জানতে পাঠককে পড়তে হবে এই উপন্যাসটি, উপভোগ করতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ লেখনী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top