শেষ জাহাজের আদমেরা PDF Download স্বকৃত নোমান

‘স্বকৃত নোমান’ অনেকেই হয়তো নামটা শুনে থাকবেন। তার লেখা পড়েছেন। আবার অনেকেই দেখা যাবে তাঁর নামই শুনেনি! অনেকটা আন্ডাররেটেডও না আবার অভাররেটেডও না এমনই একজন লেখক এই স্বকৃত নোমান। বর্তমানের একজন শক্তিমান লেখক হিসেবে সহজেই তাকে ধরা যায়। তাঁর অদ্ভুত গদ্যশৈলিতে যে কেউ মুগ্ধ হবে।

যারা তাঁর লেখার সাথে পরিচিত নন তাদের প্রথমে খারাপ লাগেও পড়ে প্রেমে পরে যাবেন! এমনই একটা বই হচ্ছে ‘শেষ জাহাজের আদমেরা’। নামটা কেমন যেন ভারি! এই নামের গল্পটাও হালকা ঠুনকো নয়। যাই হোক বইটা থেকে এখনও যারা বঞ্চিত তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

সে অনেক বছর আগের কথা, প্রায় ৪০০ বছর আগে উজানটেকে সিতারা বানু নামে এক তরুণী এক স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে এক মস্ত কুমির তার শিশুপুত্রকে গিলে ফেলে! দুনিয়াতে তখন প্রলয়কাণ্ড চলছে ঝড়ের। ঝড়ের চেয়ে এক বড় তাণ্ডব তখন তার বুকে সব ফেলে সে শিশুপুত্রকে কোলে করে ফেলে আসে আজন্ম পরিচিত গ্রাম।

এর ৪০০ বছর পরে নূরনিসা নামে এক কুমারী মেয়ে এক আজব স্বপ্ন দেখে। তার কোল থেকে এক শিশুপুত্র ধনেশ পাখি হয়ে আকাশে উড়াল দিচ্ছে। এই দুঃস্বপ্ন নূরনিসাকে আজীবন তাড়া করে বেড়ায়।

কেটে যায় অনেকগুলি দিন। এরপর আমরা দেখতে পাই এক জাহাজ, যাতে আছে নূরনিসার পুত্র ছাড়াও আরো অনেকে। আসলে এই পুরো উপন্যাস জুড়েই রয়েছে অজশ্র চরিত্রের মিছিল। কেউ বা বৃদ্ধ, কেউ মধ্যবয়স্ক, কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণী। ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কোথায় যেন এরা অভিন্ন। এদের সকলের মাঝেই বয়ে যাচ্ছে দুঃখী এক বিষণ্ণতা। কিন্তু কেন ?

তাদের চোখে একসময় স্বপ্ন ছিল। আজ যেন সবকিছুই এক গোলকধাঁধা। অনেকগুলি কষ্ট, অনেকখানি স্বপ্ন আর অনেকটুকু প্রত্যাশা নিয়েই তো কাটে মানবজীবন। এর বাইরে যখন অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যায়। জীবন তখন থমকে যায়। জীবনের সঙ্গা অবশ্য একেকজনের কাছে একেক রকম। একজনের সাথে অন্য জনেরটা মিলবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই জীবন যখন লহমাতেই থমকে যায় তখন কি হয়?

সব মিলিয়ে উপন্যাসটি ত্রুটিবিহীন বলা চলে! লেখকের বর্ণনাভঙ্গি উপভোগ্য। উপন্যাসের প্লটটি সময়োপযোগী। ২০৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম। প্রথমেই কথা বলা দরকার স্বকৃত নোমানের লিখনী নিয়ে। সহজ সাবলীল লিখনভঙ্গী আজকাল দেখাই যায়। কিন্তু সবাই অত গভীরে যেতে পারে না। স্বকৃত নোমানের লেখা পড়ে মনে হলো তিনি পেরেছেন।

তাঁর লেখার সাথে পূর্ব পরিচিতি না থাকলে কিংবা তাঁর সম্পর্কে না জানলে প্রথম প্রথম লিখনী একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু একবার মজে গেলে একদম বই শেষ না করা পর্যন্ত হাত থেকে বই রাখার উপায় নেই! এমনই শক্তমান লেখনশৈলী স্বকৃত নোমানের। এই বইটাতেও লেখক তার ব্যবহার করেছেন পূর্ণ রূপে। একেকটা সময়কে একেকটা চরিত্রকে এত বাস্তবিক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, অবাক হতে হয় মাঝে মাঝে।

বইয়ের প্লটটাও বেশ ইউনিক ও চমকপ্রদ। একেবারে ঐতিহাসিক উপন্যাসও নয়। আবার শুধু ম্যাড়মেড়ে জীবনকাহিনীও নয়। একটু রোমাঞ্চ লেখক সবসময় ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। চরিত্রগুলোকে ফুটিয়েছেন নিপুন দক্ষতার সাথে। এই চরিত্রগুলো যেন একেকটা আমাদের প্রতিরূপ! বিশেষ করে গ্রাম্য বুড়ো মানুষগুলোকে একেবারে বাস্তবিকতার সাথে তুলে ধরেছেন। আসলেই বলা যায় এই উপন্যাস একেবারে ত্রুটিহীন!

সবশেষে বলবো, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে একটু আলাদা কিছু ট্রাই করতে একটু ভালো কিছু উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই বইটা পড়বেন। আশাহত হবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top