শাউট অ্যাট দ্য ডেভিল উইলবার স্মিথ| অনুবাদ সুমাইয়া সিমি ও আফসানা পারভীন। (হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার)

থ্রিলার রোমাঞ্চ পাঠকরা সবাই একটা নামের সাথে বেশ পরিচিত। উইলবার স্মিথ। কতশত দারুণ সব বই লিখা পাঠকের মনে অমর হয়ে আছেন তিনি। ঐতিহাসিক থ্রিলার থেকে শুরু করে টানটান উত্তেজনাকর থ্রিলার সব। তেমনই একটি হিস্টরিকাল থ্রিলার হলো শাউট অ্যাট দ্য ডেভিল। বরাবরের মতই বেস্টসেলার বই। অনুবাদ হয়েছে নানা ভাষায়। বাংলায় অনুবাদ করেছেন আফসানা পারভীন ও সুমাইয়া সিমি। অনুবাদ কেমন তা পরে বলছি। বইটা যারা এখনো পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ব্রিটেন আর জার্মানির মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। তখন আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে শাসন চলছে জার্মানির। আর সেই উপকূলের সেরা শিকারি বলে বেশ নাম-ঢাক আইরিশ আমেরিকান ফ্লিন প্যাট্রিক ও’ফ্লিনের। পেশায় সে হাতির দাঁত শিকারি। রুফিজি ব-দ্বীপে জার্মান হাতির দাঁতের বিশাল ভান্ডারের দিকে নজর পড়ে ফ্লিনের। আর সেই নজরই তার মনের ভেতরের লোভত্বকে জাগিয়ে তোলে। বেআইনি শিকারের ধান্দায় জড়িয়ে ফেলল সেবাস্টিয়ানকে, যে একজন ইংরেজ। এবার তাদের পেছনে ছুটে আফ্রিকায় জার্মান সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি কমিশনার হারমান ফ্লেইশার।

এদিকে ফ্লিনের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে জার্মান ভূখন্ডে একের পর এক আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ চলছে। তাদের লক্ষ্য একটাই, তৎকালীন বৃহত্তম সমর শক্তির অধিকারী দেশের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ জাহাজ ব্লুখারকে ধ্বংস করে দেওয়া। তারা কি শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ জাহাজ ব্লুখারকে ধ্বংস করতে পারবে নাকি নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে?
শেষ পর্যন্ত জিতে কারা?

একদম হৃদয়ে দাগকাটা এক উপাখ্যান। যে উপাখ্যান এক মিশ্র অনুভূতিতে ভাসিয়ে দেয়। এ অনুভূতি যেমন আনন্দময়, ঠিক তেমনই বিষাদময়।

যারা টানটান উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর গতির বই পড়তে পছন্দ করেন, তারা এই বইয়ে সেটা পাবেন না। এটা এমন একটা উপাখ্যান যা রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে দেবে না, যার প্রতিটা পাতা জুড়ে টানটান উত্তেজনা, টুইস্ট কিছুই নেই। স্টোরিটেলিংও স্লো গতির কিন্তু দুর্দান্ত। তবে পাঠক ফ্লিন, সেবাস্টিয়ানের মতো লক্ষ্যের পেছনে না ছুটে লক্ষ্যের পেছনে থাকা ঘটনাগুলোর সাথে মিশে যেতে পারলে তারা যা প্রত্যাশা করবে তারচেয়েও বেশি কিছু দেবে এই উপাখ্যান। বইয়ের কিছু ঘটনা হৃদয়কে প্রবলভাবে নাড়া দেবে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও পাঠকের মন বিষাদে ছেয়ে যাবে। হৃদয়ে শূন্যতা অনুভব করবে। সেখানে শোনা যাবে হাহাকারের প্রতিধ্বনি।

দু’টি পর্ব নিয়েই গড়ে উঠেছে পুরো বইয়ের কাহিনী। প্রথম পর্বে জ্বলে ওঠা প্রতিশোধের আগুন দ্বিতীয় পর্বে এসে নিভে। দুটো পর্বই উপভোগ্য ছিল। তবে আমি বেশি উপভোগ করেছি প্রথম পর্ব আর দ্বিতীয় পর্বের শেষের দিকে। উদ্দেশ্যহীনভাবে লেখক যেদিকে নিয়ে যেতে চান সেদিকে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে উপাখ্যানটা পড়া শুরু করলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। আর শুরুতে কাহিনীতে ডুবে যেতে পারলে তো কোনো কথাই নেই। আর কাহিনীতে অন্যমাত্রা যোগ করা রিউমারগুলো দারুণ ছিল।

এ গল্পেও একটা প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প আছে। যেখানে দুজন মানুষ একজন আরেকজনকে প্রচন্ড ভালোবাসে। একে অপরের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। এটা এমন একটা ভালোবাসার গল্প, যেখানে একজন আরেকজনের জন্য মরতেও পরোয়া করে না। নিঃসন্দেহে এটাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।

যারা আগে থেকে উইলবার স্মিথের লেখনীর সাথে পরিচিত, তাদেরকে উইলবারের লেখনী শক্তি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর যারা লেখকের লেখনীর সাথে পরিচিত নন, তারা এই বইটি পড়লে লেখকের লেখনী শক্তির গভীরতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। একদম সাবলীল ভঙ্গীতে এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে কাহিনির মোড় ঘুরিয়ে দেয়া!

এবার অনুবাদ নিয়ে কিছু বলি, বইটা অনুবাদ করেছেন দুইজন অনুবাদক। অনুবাদক দুজনই নতুন আবার পুরাতন! মানে এর আগে অভিজ্ঞতা আছে তবে খুব বেশি না। এই বইয়ের অনুবাদে মুন্সিয়ানায় দেখিয়েছেন তারা। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও একবার কাহিনীতে ডুব মারার পর আর কোনো সমস্যা হয়নি।

সবশেষে বলবো, অসাধারণ আর ইতিহাস প্রেমিদের জন্য একপ্রকার মাস্টরিড বই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top