শুভদা PDF Download শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শুভদা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত পারিবারিক উপন্যাস। উপন্যাসটিতে একজন মাতাল স্বামী, বিধবা মেয়ে একটি অসুস্থ পুত্র নিয়ে কিভাবে একটি দরিদ্র জর্জরিত সংসারকে টেনে নেওয়া যায় সেই ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। শুভদা এক সাহসী চিরকালীন গ্রাম্য মাতা যে হাজারো কষ্ট সহ্য করে নিজের সংসার কে ধরে রাখে।

শুভদা রিভিউ

দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ও নিপীড়িত এবং সমাজের কটু কথা কে পাশ কাটিয়ে শুভদা এক মহীয়সী নারী যে অমানুষিক পরিশ্রম আর ধৈর্যের বলে সংসার কে ধরে রাখলেও সে তার অসুস্থ পুত্রের মৃত্যুর মুখোমুখি হয় এবং এক মেয়ে কে হারিয়ে ফেলেন।তারপরেও সে মিথ্যা , ন্যায়-নীতি বিসর্জন ও চরিত্র কে বর্জন করাকে সমর্থন করে না।

গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পাই একটি পরিবারের প্রধান হলেন হারান যিনি সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন যার কারণে তার পরিবারে অর্থনৈতিক দুর্দশা নেমে এসেছে। তার বিবাহযোগ্যা দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের নাম ললনা ও ছলনা। ললনার বিবাহ হয়েছিল কিন্তু মাত্র একমাস পরেই সে বিধবা হয়ে নিজের পিতৃগৃহে ফিরে এসেছে।

একটি পুত্র মাধব যে অসুস্থ এবং এক বিধবা বোন ও স্ত্রী শুভদা কে নিয়ে তার সংসার কিন্তু এত কিছুর মাঝেও হারান ছিল মাতাল এবং গাঁজা সেবনকারী যার কারণে তাদের দরিদ্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। এত কিছু সহ্য করেও শুভদা যিনি এই সংসারের মা তিনি সবকিছুকে দুই হাত দিয়ে আগলে রেখেছেন গল্পের আরেকটি বিশেষ চরিত্র হলো সদানন্দ একজন আধ পাগল যুবক ছেলে।

সে ললনাকে মনে মনে ভালোবাসে। সে সবসময় ললনাদের পরিবারকে বিভিন্ন রকম আর্থিক এবং সাহায্য করে থাকে । অপরদিকে সারদা নামে একজন যুবকের সাথে বিয়ের পূর্বে ললনার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সারোদা ললনাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায় কিন্তু , যেহেতু ললনা একজন বিধবা তাই তার নিষ্ঠুর পিতা, অর্থের লোভ, সামাজিক প্রতিপত্তি ক্ষুন্ন হবার ভয় ইত্যাদির কারণে ললনাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন।

এমনকি সে ললনার ভালোবাসা অস্বীকার করে। ললনা তাকে অনুরোধ করে, সারোদা যেন তার ছোটবোন ছলনা কে বিয়ে করে। একদিকে অর্থের কষ্ট অন্যদিকে বাড়ির কর্তা একজন মাতাল হওয়ার কারণে শুভদার সংসারের দুর্দশা কোনভাবেই কমছিল না। হঠাৎ একদিন ঘাটে গোসল করতে গিয়ে ললনা হারিয়ে যায়।

সেখানে ললনার পরনের সাদা কাপড় খুঁজে পায় কিন্তু ললনাকে খুঁজে না পাওয়ায়, সবাই ভাবে যে ললনা বোধহয় মারা গেছে। সদানন্দ যে শুভদার পরিবারের একমাত্র হিতৈষী ছিল সে ললনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চায় তাই সে তার সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে সারদার সাথে ছলনার বিয়ের ব্যবস্থা করে এবং বিয়ে দিয়ে দেয়।

অন্যদিকে নদীতে ভেসে গিয়ে এক জমিদারের নৌকায় আশ্রয় পায় ললনা। জমিদার তাকে কলকাতা নিয়ে যায়। কলকাতায় গিয়ে ললনা জমিদারের নিকট তার অসুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রার্থনা করে। ললনা পাঁচশত টাকা শুভদার নিকট পাঠিয়ে দেয় কিন্তু টাকা পৌছাবার পূর্বেই মাধব এর মৃত্যু হয়।

টাকা হাতে পাওয়ার পরে শুভদা ভাবে কলকাতায় তাদের কোনো আত্মীয় স্বজন ছিল না তাই এই টাকা কে পাঠিয়েছে প্রথমে বুঝতে না পেরে সদানন্দ কে চিঠির ঠিকানায় কলকাতা পাঠিয়ে দেয় টাকা কে পাঠিয়েছে খোজ নেবার জন্য। সদানন্দ সেখানে গিয়ে খোঁজ পায় ললনার এবং দেখে যে ললনা জীবিত আছে কিন্তু সে মনে করে যে ললনা সেখানে জমিদারের রক্ষিতা হয়ে জীবন যাপন করছে।

তাই সে কষ্টে, রাগে দুঃখে, ক্ষোভে সেখান থেকে লালার সাথে দেখা না করেই চলে আসে এবং শুভদা কে সদানন্দ জানায় । শুভদা অনেক কষ্ট পায় এবং তাদের দুঃখের জীবনে সদানন্দ কে পেয়ে তার মনে হয় যেন তার পুত্র মাধবী সদানন্দ হয়ে ফিরে এসেছে।

এভাবেই শুভদার দুঃখের জীবন চলতে থাকে তবে শুভদার স্বামী হারান নিজেকে কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না এবং সংসার নিয়ে কখনো কোনো চিন্তা করে না। সুভদা অবশ্য শেষে ললনার সত্যটা জানতে পেরেছিল এবং যে সে আসলে জমিদারের কোন রক্ষিতা নয় বরং জমিদার তাকে সসম্মানে আশ্রয় দিয়েছিল।

শুভদা PDF

পরিশেষে বলা যায় যে একটি দরিদ্র জর্জরিত পরিবারের যে নিখুঁত চিত্র উপন্যাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অনবদ্য এবং অতুলনীয় এবং একজন সাধারন গ্রাম্য নারীর চরিত্র কে এমন অসাধারণ মহিমা লেখক দান করেছেন তা সত্যিই উৎকৃষ্ট সাহিত্যের নিদর্শন । তাই প্রতিটি বাংলা সাহিত্য প্রেমীদের জন্য উপন্যাসটি একটি অবশ্য পঠনীয় উপন্যাস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top