‘সীমান্তের দক্ষিণে, সূর্যের পশ্চিমে’ উপন্যাসটির রচয়িতক হলেন ‘হারুকি মুরাকামি’। বর্তমান সাহিত্য জগতের এক অন্যন্য নাম হলো হারুকি মুরাকামি, নান্দনিক উপস্থাপনার ধরণ, গল্পের মধ্যে বাস্তবতার সাথে পরাবাস্তবতার সংমিশ্রণ তার উপন্যাসগুলোকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়। তাই তো জাপানের সীমান্ত ছাড়িয়ে আজ সমগ্র বিশ্ব এই লেখকের কদর।
লেখালেখির জন্য এ পর্যন্ত বহু পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন এই লেখক। তার লেখা প্রায় প্রত্যেকটি বই এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সীমান্তের দক্ষিণে, সূর্যের পশ্চিমে এই উপন্যাসটিও এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে।
আমাদের দেশে এই উপন্যাসটির অনূদিত সংখ্যার প্রকাশক হলো ‘সন্দেশ প্রকাশনী’ এবং অনুবাদ করেছেন ‘তপোব্রত দাস’। উপন্যাসটির মূল পটভূমি গড়ে উঠেছে হাজিমে নামক চরিত্রকে কেন্দ্র করে। যে কিনা তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান এবং বড় হওয়ার পর সে একটি বারের মালিকানা লাভ করে পারিবারিক সূত্রে।
হাজিমে অতিসাধারণ একজন মানুষ। সে গতানুগতিক ধারায় জীবন অতিবাহিত করে। সে যতটা না জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার চেয়ে বেশি জীবনই হাজিমেকে নিয়ন্ত্রণ করে। জীবন নিয়ে কোন উচ্চাভিলাষী মনোভাব হাজিমের নেই। মধ্যবয়সে উপনীত হলে হাজিমে আর দশটা মানুষের মত একজন পরিবারিক লোক হয়ে ওঠেন।
কিন্তু হাজিমের দাম্পত্য জীবন ছিল একদমই রঙহীন, এক প্রকার লোক দেখানো একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো হাজিমে তার পরিবারের সাথে। হাজিমেকে তার তরুণ বয়সের প্রেমিকার স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়। আর এই স্মৃতির যন্ত্রণায় অধিকাংশ সময়ে হাজিমেকে কাতর থাকতে দেখা যায়। হাজিমের সেই প্রেমিকার নাম ছিলো শিমামোতো যে কিনা পোলিও রোগে আক্রান্ত ছিলো।
কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন হাজিমের বারে এক সুন্দরী মহিলা আসেন। ভালো করে লক্ষ করলে হাজিমে বুঝতে পারেন এই সেই শিমামোতো। কিন্তু তার পায়ের সমস্যা আর আগের মত নেই, সার্জারী করে তা ঠিক করে নেয়া হয়েছে। শিমামোতোকে দেখার পর থেকে হাজিমে আবার তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে এমনকি সে তার পরিবারকেও তার এই তরুণ বয়সের প্রেমের জন্য ছেড়ে দিতে পারে।
এভাবে উপন্যাসের গল্প সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। শিমামোতো যখন তখন হাজিমের বারে আসে, আবার যখন তখন হারিয়ে যায়। প্রথমদিকে গল্পটি কিছুটা ধীরগতির মনে হলেও, পরে কাহিনীটি দ্রুত মোড় বদলাতে শুরু করে। মুরাকামি সাধারণত তার উপন্যাসগুলোতে কোন এক পরাবাস্তবতার সৃষ্টি করে থাকেন।
কিন্তু এই উপন্যাসটি সে দিক থেকে কিছুটা ভিন্ন, নিতান্তই এক প্রেমের উপন্যাস এটি। তবে শুধুমাত্র প্রেমের উপন্যাস না বলে মানব জীবনের একটি সুস্পষ্ট প্রতিফলন হিসেবেও উপন্যাসটিকে অ্যাখ্যা দেয়া যায়। সুস্পষ্ট বর্ণনা ও নান্দনিক উপস্থাপনার একটি অতি উচ্চমানের উপন্যাস এটি, যা যে কোন পাঠককে বিমোহিত করতে পারে।