শবনম PDF Download সৈয়দ মুজতবা আলী

“শবনম” সৈয়দ মুজতবা আলীর একটি রোমান্টিক উপন্যাস। মুজতবা আলী মুলত ভ্রমণ কাহিনী এবং রম্য রচনা রচনা করেছেন। দেশে বিদেশে তার একটি বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী। তবে তিনি যে এমন অভাবনীয় উপন্যাস লিখতে পারবে এটা অনবদ্য। কারণ” শবনম” একটি অভূতপূর্ব উপন্যাস, যা প্রচলিত প্রেম বা রোমান্টিকতার উর্ধে।

প্রচলিত উপন্যাসের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন ধরনের এটি পাঠকের মনে এক নতুন প্রেমের অনুভূতির জন্য দেবে।এটি মূলত উপন্যাস হলেও কখনো এটিকে কাব্য উপন্যাস মনে হবে, লেখন সৈয়দ মুজতবা আলী এই বইটিতে প্রচুর বিদেশী কবিতা উপন্যাসের নায়ক নায়িকার মুখে শুনিয়েছেন।

নায়িকা শবনম হলেন তুর্কী বংশোদ্ভূত আফগানিস্তানের রাজকুমারী। অন্যদিকে গল্পের নায়ক একজন সাধারণ বাঙালি যে বাংলা ইংরেজি ভাল বলতে পারে। নায়ক মজঁনূন যে সেখানে শিক্ষকতা করে। একটি নাইট ক্লাবে বল ডান্স দেখতে গিয়ে পরিচয় ঘটে নায়ক নায়িকার। সেখান থেকে কয়েকবার দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে প্রেম পরিণয়ে রুপান্তরিত হয়।

নায়ক মজনুন কিন্তু জানত না যে এ রাজকুমারী, অসম্ভব রুপবতী শবনব যে কেউ প্রথম দেখাতে প্রেমে পড়ে যাবে কিন্তু তারচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে শবনমের ব্যক্তিত্ব যাতে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারে না। শবনমের বয়স আঠার উনিশ। কিন্তু কখনো তাকে সোড়ষী মনে হয় কখনো আবার প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে মনে হয়। শবনম আর মজনুন আসলে কেন প্রেমে পড়ে একে অপরের সেটাও একটা বিষ্ময়।

নায়ক নায়িকার দুইবার বিয়ে হয় এই উপন্যাসে, তারা নিজেরা একবার করে, এবং পারিবারিক ভাবে একবার হয়। সব কিছু ঠিক থাকলেও বাঁধ সাধে সেই হাঙামা। তাদের বিয়ের পরপরই শবনমকে তুলে নিয়েযায় বিদ্রোহীরা যাবার সময় বলে যায় “বাড়িতে থেকো, আমি ফিরব” কিন্তু শবনব চিরকালের মত হারিয়ে যায়।

আর ফিরে আসেনা মজনুনের কাছে। সে আর শবনমের পরিবার পাগলের মত খুঁজতে থাকে তাকে। বহুবছর কেঁটে যায় তবু কেবল সেই কথাটি রয়েছে “বাড়িতে থেকো আমি ফিরব”। এই উপন্যাসের খুবই চমক প্রদ দুইটি বাক্য হলো “” আমার বিরহে তুমি অভস্ত হযে যেও না ” আর আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না” খুবই কঠিন কথা গুলো কত সহজে লেখক শবনমের মুখ দিয়ে বের করেছেন যা পাঠকের হটাৎ চমক লেগে যায়।

শবনম কে মজনুন হিমীকা বলে ডাকে যার অর্থ হচ্ছে শিশির কণা, সত্যি শবনম পৃথিবীর সব সৌন্দর্য আর ভালবাসা নিয়ে হাজির হলেও শিশির কণার মত হারিয়ে যায় সকালের রোদে। তেমন মজনুন কে একা করে দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত বিরহে আবগাহন করতে হয় মজনুন কে। তেমনি মজনুনও জানে কেমন করে ভালবাসতে হয়।

এই প্রেম কোন পশ্চিমা ধাচের নয় এ এক অভূতপূর্ব প্রেম, উপন্যাসের প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করতে করতে পাঠক এক অদ্ভুত মুগ্ধতায় ডুবে যাবে যা সে ইতিপূর্বে কখনো পায়নি।প্রচলিত ঢং কোনটাই অনুসরণ করে লেখা হয়নি এই উপন্যাস।

আধুনিকার মোড়কে এক অনবদ্য লেখনী যা সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। এটি গদ্য হলেও প্রতিটি লাইনে পাঠক কাব্যের ঝংকার, রং, রুপ সব খুঁজে পাবে।এক মোহনীয় জৌলুসে হারিয়ে যাবে।শবনমের কপাল, চোঁখ, চুল, নাকের যে বর্ণনা লেখক দিয়েছে এর আগে আর অন্য কোন লেখক দিয়ে গেছে কিনা সন্দেহ।

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত নায়িকারা যেমন বিনোদিনী, রোহিনী, লাবণ্য এদের সব রুপকে ছাড়িয়ে গেছে শবনব।শবনম আর মজনুনর প্রেম কোন প্রেমের সাথেই মিলে না। এ যেন রাঁধা কৃষ্ণের অমর প্রেম গাঁথা। কিন্তু যখন শবনমকে নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা মনে হয় এই বুঝি ফিরে আসবে শবনব।

কিন্তু এ প্রতীক্ষার শেষ হয় না, বহু বছর পার হয়ে যায়। পাঠক গল্পের শেষে অনেকটা অতৃপ্ত মন নিয়ে থাকবে, কারণ না পাওয়ার বেদনায় নীল হয়ে যাবে পাঠকের মন, এমন তৃপ্তি অথচ অতৃপ্তি যেন আর কোন বইতে মেলা ভার। তাই বলা যায়, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক উপন্যাস শবনম। এটি কেবল উপন্যাস নয় বরং তার চেয়েও বেশি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top