পৃথিবীর প্রাচীন প্রান্তরে তানিয়া সুলতানা PDF download (সামাজিক থ্রিলার)

তানিয়া সুলতানা একজন প্রবাসী লেখিকা। বেশ কয়েক বছর ধরেই লিখে আসছেন। থ্রিলার আর সামাজিক ক্যাটাগরিতে লিখেছেন বেশ কিছু উপন্যাস। সবগুলোই পাঠকনন্দিত হয়েছে সমান ভাবে। তার একটি দারুন সামাজিক থ্রিলার টাইপ উপন্যাস হলো পৃথিবীর প্রাচীন প্রান্তরে। নামটা শুনেই দারুণ একটা অনুভূতি হয়! তো যারা এই দারুণ বইটা পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ ভালোবেসে বিয়ে হয়েছে। তবুও তারেকের সাথে ইরিনের সংসারটা আর দশটা সাধারণ সংসারের মতো নয়। অর্থ প্রাচুর্যের মধ্যে বড়ো হওয়া ইরিন যখন তারেকের হাত ধরে মধ্যবিত্তের জীবনে প্রবেশ করল, সে দেখতে পেয়েছিল এক বাস্তব জীবনের খণ্ডচিত্র। বুঝতে পেরেছিল, এমন জীবন সে চায় না। আর চাওয়া না চাওয়ার ভেদাভেদে ইরিন একদিন হারিয়ে গেল। তারেকের জীবন থেকে অনেক দূরে সে গন্তব্য। ইরিনের শোকে মূহ্যমান তারেক সিদ্ধান্ত নিল, আবারও নিজের জীবন রাঙাবে। এছাড়া কি বা করার আছে? জীবনের অনেক পথ বাকি। এই দীর্ঘ পথে একা থেকে করবেটা কী? নিজের জীবন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে অটল থাকার কারণেই তারেকের জীবনে আসে অন্য কেউ। দীপা হয়ত পারবে তারেকের জীবন নতুন করে সাজাতে। পারবে তো?
সাবেরী লাহার পরিবারে রহস্য কেউ জানে না। গ্রামের কোণে কানাঘুষা চলে, গাছের আড়ালে পাতার ফিসফিস শোনা যায়। তবুও লাহা পরিবারের ভেতরে থাকা গোপন কথা চার দেয়ালের বাইরে আসে না। সেই দেয়ালে বন্দী চারটি জীবন। সাবেরী লাহা, তার ভাই পূরব দাস, আর দুই ভৃত্য বলয় ও কাকলী। ভাইকে নিয়ে বেজায় দুঃশ্চিন্তায় আছে সাবেরী। দিনে দিনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে তার ভাই। কিছুই করা যাচ্ছে না। কোনো এক পাপের ফল, কিংবা অভিশাপের উত্তাপে ঝলসে গিয়েছে লাহা পরিবার। অতীতের সেই দিনের কথা মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠে সাবেরী লাহা। কী সেই পাপ? কার অভিশাপ লেগেছে? এ থেকে ভাইকে বাঁচাতে পারবে সাবেরী?
তারেক ভেবেছিল আবার বিয়ে করলে তার খামখেয়ালি জীবন আবার গুছিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু তার ভাবনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। দীপা মেয়েটা কেমন যেন! আড়ষ্ট হয়ে থাকে সবসময়। রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারে না। অনেক চেষ্টা করে তারেক জানতে পারল, কী সব স্বপ্ন দেখে দীপা। দীপার অতীত ইতিহাস গোপন করা হয়েছিল তারেকের কাছে। নিজেকে প্রতারিত ভাবতে শুরু করে সে। তারপরও মনের কোণে কোথায় যেন একটুখানি ভালোবাসা ঠাঁই পেয়েছে। ভালোবাসা, না-কি করুণা? দীপাকে সুস্থ করতে তারেক ছুটে চলেছে অতীতে। ভালোবাসার জন্য তো এতটুকু করাই যায়! নির্লিপ্ত দীপার কি তাতে মন গলবে? না-কি করুণা ভেবেই কাটিয়ে দেবে সবসময়? কি হবে শেষ পর্যন্ত?
আহা কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে পড়ার পর। লেখার মধ্যে একটা মাদকতা আছে। অন্যরকম মায়া আছে। যেই মায়ার আবেশে খুব সহজেই জড়িয়ে যাওয়া যায়। ভিন্নধারার লেখনী বেশ মুগ্ধ করেছে। লেখিকা শব্দচয়ন যথেষ্ট ভালো লেগেছে। সচরাচর এমন শব্দচয়ন অন্যান্য সমসাময়িক লেখকদের মাঝে দেখা যায় না, তাই প্রথম প্রথম বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল। পরে অবশ্য লেখিকার লেখার মায়ায় এতটা জড়িয়ে গিয়েছিলাম, অসুবিধে হয়নি তেমন। একদম শেষ পর্যন্ত টেনে ধরে ছিল।
লেখিকা গল্প বলার ধরণ ভালো ও স্পষ্ট। পাঠককে খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারবে। উপন্যাসের শুরুটা রহস্য দিয়ে হলেও এর পরবর্তী অংশগুলোতে ঠিক রহস্য ছিল না। আর তাই উপন্যাসটাকে ওইভাবে থ্রিলার ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না। বরংচ একটা সাদামাটা সুন্দর সাবলীল সামাজিক উপন্যাস হিসবেই বেশি মানানসই। উপন্যাসে অল্প কিছু মানসিক রোগের বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ভালো লেগেছে।
সবশেষে বলবো, অদ্ভুত কোনো মায়ায় জড়ানো গল্প পড়তে চাইলে দারুণ কিছু সময় কাটাতে চাইলে বইটা অবশ্যই পড়তে পারেন।