জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে

লেখকঃ কিশোর পাশা ইমন| PDF download (থ্রিলার)
এই যুগের একজন জনপ্রিয় যুবক এবং কমবয়সী থ্রিলার লেখকদের মাঝে এই কিশোর পাশা ইমন এর নাম উল্লেখযোগ্য। শুধু তাই না, তিনি খুব পাঠকপ্রিয়। এই পর্যন্ত অসংখ্য ছোট গল্প লেখার পাশাপাশি লিখেছেন বেশ অনেকগুলো উপন্যাস। ছোটখাটো উপন্যাসের পাশাপাশি আছে বিশাল ঢাউস সাইজের বইও। ঢাউস সাইজ বলে আবার ঘাবড়ে যায়েন না। তার লেখা বরাবরই দারুন উপভোগ্য। তেমনই একটা ঢাউস সাইজের থ্রিলার হলো এই জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে- বইয়ের নামটাও নেহাৎ ছোট নয়! অসাধারণ এই বইটা যারা এখনও পড়তে পারেন নি তারা দেরি না করে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন অনায়েসে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ ধরুন আপনি পুরোনো জীর্ণশীর্ণ একটা বাড়ির জায়গায় নতুন বাড়ি তুলবেন, সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি? প্রথমে পুরানো বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলতে হবে, সেই জায়গায় স্থাপন করতে হবে নতুন বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর। এই তো?
আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থার দিকে এক নজর দিলে সমাজের মধ্যকার বিদ্যমান অন্যায় অনাচার চোখে পড়তে বাধ্য। খোলামেলা ভাবেই চলছে সেটা। ভালো কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে আপনার? পদে পদে বাধার সম্মুখীন হবেন। ঘুষ কিংবা বখরা নেয়া নিত্যকার ব্যাপার। এমতাবস্থায় সমাজ এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অনেকের অনেক মত। কেউ বলে এপথ ভালো, তো আরেকজন বলে ঐপথ ভালো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্র মনে করলাে অন্য কিছু। তারা বিশ্বাস করে নষ্ট হয়ে যাওয়া সিস্টেমকে একেবারে ধ্বংস করেই গড়ে তুলতে হবে নতুন কিছু! সিস্টেমকে ধ্বংস করার জন্য তারা গড়ে তুলল এক গুপ্তসংঘ – ‘জাদুঘর’। রাজধানীর দেওয়ালে লেখা হলাে বিখ্যাত শিশুতােষ ছড়ার বিকৃতরূপ।
জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে
রক্তের ঝিকিমিকি
আঁকা যেখানে…!
কি রহস্য এই পিছনে?
বইটিতে কাহিনী এগিয়েছে দুটি টাইমলাইনে এবং একই সাথে। একটিতে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের কাহিনি যারা চলতি সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ, আরেকটিতে দেখা যায় রকিব নামের এক সন্ত্রাসীকে যে কি না অপকর্ম ঘটিয়ে রাঙামাটিতে এসে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে আর উন্মোচিত হতে থাকে গুপ্তসংঘ জাদুঘরের কীর্তিকলাপ এবং রকিবের রাঙামাটির পাহাড়ে ও বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর রহস্য।
তরুণ লেখক কিশোর পাশা ইমন যে ধারায় লিখেন এ ধারায় তিনি সমাজের বিভিন্ন অন্ধকার দিক তুলে ধরেন নিজের লেখায়। এই বইটিতেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি কয়েকটা বিষয়ে নতুন দিক তুলে ধরেছেন উপন্যাসে। বিশেষ করে পাহাড়ের বাঙালি ও আদিবাসীদের বিরোধের বিষয় আমাদের মুলধারার সাহিত্য উপেক্ষা করা হয়। যদিওবা লেখায় কোনক্রমে এসে পড়লে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ পদ্ধতিতে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিষয়টা তুলে ধরার জন্য। উপন্যাসের একটা দিক অনেকের চোখে দৃষ্টিকটু লাগতে পারে সেটা হল অধিক পরিমানে এডাল্ট বিষয় এর ব্যবহার। কাহিনীর খাতিরে সেটা মেনে নেয়া যায় তবে বিষয়টি সবার পক্ষে হজম করার মত না। কিছু জিনিস বেশি ছিল কিনা!
চরিত্রগুলোকে যথাযথ রূপ দিতে লেখক অনেক প্রচেষ্টা করেছেন। সেটা সফল হয়েছে। কাহিনীর জন্য অনেক পার্শ্বচরিত্রও ছিল। সেগুলোকেও বেশ ভালোভাবে ফুটিয়েছেন।
সর্বোপরি বলব যে এমন একটা প্লটে উপন্যাস লেখা হয়েছে যেখানে অধিকাংশ পাঠক উপন্যাসের জাদুঘরের লোকজনের সাথে সহমত প্রকাশ করতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখা ভালো এটা ফিকশন। এটাকে বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করতে গিয়ে যাতে আবার বিপদ ডেকে না আনেন!
সবশেষে বলবো, অসাধারণ একটা উপভোগ্য বই এটি। নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলা যায়।