উভচর মানুষ একটি সায়েন্স ফিকশন বই, বইটি লিখেছেন লেখক আলেক্সান্দার বেলায়েভ এবং বইটি অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত অনুবাদক আলতাফ হোসেন। বইটি লিখার পর লেখক সমাজে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায় এবং বইটি লেখার মাধ্যমে তিনি পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
মানব সভ্যতার নিকষ কালো আঁধারকে দূরীভূত করতে শুভ্র আলোর প্রদীপ হাতে ছুটে চলেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ডঃ সালভাতর। পৃথিবীর এক ভাগ স্থলের অপ্রতুল সম্পদকেন্দ্রিক মানবজাতির দ্বন্দ্বময় জীবন ধারার সীমারেখার সীমাহীন করতেও তিনভাগ সমুদ্রকেও বসবাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখেন ডঃ সালভাতর। সুনিপুণ সার্জারীর মাধ্যমে ফুসফুসওয়ালা মানব শিশুর শরীরে জোড়া লাগালেন শিশু হাঙরের ফুলকা। তখন সৃষ্টি হল দরিয়ার দানো খ্যাত উভচর মানুষ ইকথিয়ান্ডার।
উত্তাল সমুদ্রে ডলফিনের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ায় অদ্ভুত এক যুবক। নির্জন সমুদ্রে শঙ্খ বাজিয়ে জানান দেয় নিজের পরিচয়। আর্জেন্টিনার উপকূলে সে পরিচিতি জলের দানব দরিয়ার দানো নামে। কখনো জাল কেটে মাছ ছেড়ে দেয়, কখনো জেলেদের রক্ষা করে হাঙরের হাত থেকে, আবার কখনো ডুবতে বসা নাবিকদের তীরে তুলে আনে। সকলের কাছে তার পরিচয় অজানা।
শৈশব আর কৈশোরের সীমানা ভেঙে ইকথিয়ান্ডার চলে আসে যৌবনের পাথারে। প্রমে পড়ে যায় গুত্তেয়েরে নামক এক মেয়ের। উভচর আর স্থলচরের প্রেম হয়ে ওঠে গভীর থেকে গভীরতম। মনি মুক্তা পাওয়ার লোভে পড়ে যায় গুত্তেয়েরের পালকপিতা বালতাজার, বিশ্বাস ঘাতক ক্রিস্টো আর মুক্তালোভি জুরিতা। তারা ইকথিয়ান্ডরের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। তারা ইকথিয়ান্ডারকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে।
এই ষড়যন্ত্র ইকতথিয়ান্ডারকে বাঁচাতে সাহায্য করেন তার পিতা সালভাতর। আর তিনি ইকথিয়ান্ডারকে মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে বলে যান। ইকথিয়ান্ডার পালিয়ে যায়। গুত্তেয়েরে অত্যাচারি স্বামি জুরিতাকে ছেড়ে পালিয়ে যায় বন্ধু অলসেনের সাথে। সবশেষে ইকথিয়ান্ডার আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। সময় বয়ে যেতে থাকে, বুয়েনাস আইরেস সমুদ্রের লোকেরা আজও মাঝে মাঝে দরিয়ার দানোকে মনে করে।
পুরো বই জুড়ে লেখক গল্পের আড়ালে সমুদ্রের স্বপ্ন দেখিয়েছেন পাঠকদের। এমন সব গল্প, উপন্যাস পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন। সবশেষে কি পরিণতি হয়েছিল দরিয়ার দানোর? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন লেখক আলেক্সান্দার বেলায়েভ তার উভচর মানুষ গল্পে। বিজ্ঞান নিয়ে একটা কল্পিত কাহিনীতে লেখক মানবতা, প্রেমের সৌন্দর্য, মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও ধর্মান্ধতা সহ নানা বিষয় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
দরিয়ার দানো এই গল্পের মূল চরিত্র। তাকে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা হলেও তাকে কেউ স্বচক্ষে দেখেনি। একদিন মুক্তা ব্যবসায়ী জুরিতা ও তার শ্রমিকরা তাকে দেখে ফেলে। এই দানো মানুষের মতোই, আবার মানুষের মতো ভাষাও বলতে পারে কিন্তু সে সাগরের তলে ও উপরে সমানভাবে চলতে পারে। ব্যবসায়িক দুর্বুদ্ধিতা কাজে লাগিয়ে সে দরিয়ার দানোকে মুক্তা খোঁজার কাজে লাগানোর স্বপ্ন দেখে। তাই বিশ্বস্ত ডুবুরি বালতাজার কে দানো ধরে আনার কাজে লাগায়।
দরিয়ার দানো কোনো দানব নয়, সে একজন মানুষই। পার্থক্য বলতে তার কানকো থাকায় সে অনায়েসে পানিতে ভেসে বেড়ায়। নানা ঘটনায় গুত্তেয়েরের সাথে ইকথিয়ান্ডারের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। দামি মণি মুক্তা, ধন সম্পদের মোহমুক্ত এতো সরল অথচ জ্ঞানী ইকথিয়ান্ডারের প্রেমে পড়ে গেল গুত্তেয়েরে। তাদের প্রেম সম্পর্কে জেনে গেল জুরিতা।
একদিনের দুর্ঘটনায় ইকথিয়ান্ডার মারা গেছে ভেবে মনের দুঃখে আর জোরাজুরিতে জুরিতাকে বিয়ে করে ফেলে গুত্তেয়েরে। পরে গুত্তেয়েরের বন্ধু অলসেনের কাছে সব সত্যি জেনে গুত্তেয়েরে কে উদ্ধার করতে যায় ইকথিয়ান্ডার। আর সেখানেই ইকথিয়ান্ডারকে বন্দী করে দাস বানিয়ে ফেলে জুরিতা।
সেখান থেকে তাকে রক্ষা করে সালভাতর শেষে ইকথিয়ান্ডার সমুদ্রে পাড়ি জমায় প্রশান্ত সাগরের প্রবাল দ্বীপে। আর গুত্তেয়েরে জুরিতার বন্ধন ছিন্ন করে ইকথিয়ান্ডারের অসম প্রেম বুকে নিয়ে আর্জেন্টিনা ছেড়ে চলে যায় পাশের দেশ প্যারাগুয়েতে তার বন্ধু অলসেনের সাথে। কারাদণ্ড ভোগের মেয়াদ শেষ করে সালভাতর ফিরে আসে আপন ঠিকানায়। থমকে যায় উভচর মানুষের নাটকীয় উপ্যাখান।