ভল্গা থেকে গঙ্গা PDF Download রাহুল সাংকৃত্যায়ন

ভল্গা থেকে গঙ্গা’ রাহুল সাংকৃত্যায়ন রচিত একটি বই। ১৯৪৪ সালে অখন্ড ভারতে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। বইটি হিন্দি ভাষায় তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল ও নাম ছিল ‘ভল্গা সে গঙ্গা’ পরে অনূদিত হবার পর বইটির নাম কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

ব্যক্তি জীবনে রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রায় ৪৫ বছর ইউরোপ, এশিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণে ফলে তার যে জ্ঞান আহরণ হয় সেই প্রভাব তার সকল লেখায় স্পষ্ট। অনেক পাঠকই তার ‘ভল্গা থেকে গঙ্গা’ গ্রন্থটিকে তার শ্রেষ্ঠ রচনা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় পর্ব হলো ‘কনৈলা কী কথা’ গ্রন্থটি।

ভল্গা থেকে গঙ্গা বইটি প্রকাশিত হবার পর গোটা ভারতবর্ষে বইটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। বইটির মূল প্রতিপাদ্য হলো আর্যদের ভারতে আসা ও তাদের কর্মকান্ডের ইতিহাস। বইটি মোট ২০টি গল্পে বিভক্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দ থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস স্থান পেয়েছে বইটিতে। মানবজাতির সম্পূর্ণ ইতিহাসের একটি খন্ড অথচ পরিপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে বইটিতে।

লেখকের মতে আজ মানবজাতি এত উন্নত হতে পেরেছে অনেকগুলো বড় বড় সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। আর এই মত প্রমাণ করার জন্য লেখক বেছে নিয়েছেন ইন্দো-ইইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীকে। উপমহাদেশীয় ইতিহাসের সবকিছু নিয়েই লেখক আলোচনা করেছেন।

সমাজ জীবনের ইতিহাস থেকে শুরু করে, ধর্মের ইতিহাস, যুদ্ধ-বিগ্রহ, পশুপালন, কৃষি সব কিছুই জায়গা পেয়েছে তার এই গ্রন্থে। লেখক ব্যক্ত করেছেন মানবজাতি প্রথমদিকে ছিল মাতৃতান্ত্রিক। ইতিহাসের সূচনা লগ্নে মেয়েরাই পরিবার, সমাজের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হত মহিলারাই। সকল ধরনের সম্পত্তির মালিক ও ছিলেন মহিলারাই।

তারপর ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠেছে। আগে মানুষ ছিল পশু নির্ভর, প্রথমে শিকার পরে পশুপালন তারপর সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি নির্ভর হলো মানুষ। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, তামার ব্যবহার, লোহার ব্যবহার, দাসপ্রথা, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, যুদ্ধ, কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, বর্ণপ্রথা, সতীদাহপ্রথা, বিভিন্ন ধরণের আন্দোলন থেকে শুরু করে মানবজাতির ইতিহাস তথা উপমহাদেশের সকল ইতিহাস বইটিতে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এমন কি ধর্ম নিয়ে সাধারণত কেউ কোন ধরণের আলোচনা না করে এড়িয়ে যেতে চান কিন্তু রাহুল সাংকৃত্যায়ন সেটা করেননি বরং ধর্মের ইতিহাস নিয়েও বিস্তর আলোচনা করেছেন। লেখক ব্যক্তিজীবনে ছিলেন একজন মার্কসবাদী, যা তার লেখায় সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

প্রত্যেকটি বিদ্রোহ বর্ণনা করতে গিয়ে, আন্দোলনের কথা আলোচনা করতে গিয়ে তার এই দিকটি ফুটে উঠেছে। বইটির অনেক সমালোচক বলেছেন লেখক তার কাল্পনিকতা দিয়ে বইটিকে রঞ্জিত করেছেন, কিন্তু বইটি পড়লে যেকোন পাঠকই বুঝতে পারবেন বইটি ঐতিহাসিক বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে রচনা করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top