যক্ষ তাকরীম ফুয়াদ

তাকরীম ফুয়াদ একজন আন্ডাররেটেড তরুণ লেখক। বেশ কিছু বই বেড়িয়েছে তার। থ্রিলার পাঠক যারা একটু বেশি পড়েন তারা সবাই তাকে চিনে থাকবেন। দারুণ কয়েকটা বই লিখে পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ইতোমধ্যেই। নতুন একটা উপন্যাসিকা যক্ষ। বলাই বাহুল্য দারুণ একটা বই। ছোটখাটো এই বইটা যারা এখনো পড়েন নি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ পড়ে ফেলতে পারেন।

কাহিনী সংক্ষেপঃ চারিদিকে নদী দিয়ে ঘিরে রাখা নাম না জানা এক দ্বীপ-গ্রামে একটি প্রাচীন ভাঙা মন্দির দেখার জন্য বাবা আর মায়ের হাত ধরে ছোট্ট শিশু শায়ান। সঙ্গী হিসেবে তারা পায় ঘুরতে আসা তিন তরুণ বন্ধুকেও। কিন্তু পথিমধ্যে তাদেরকে গ্রামটা নিয়ে এক অদ্ভুত গল্প শোনায় আতশ নামের একজন মানুষ। নিজেকে সে পরিচয় দেয় একজন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে। তবুও তাদের যাত্রাতে কোনও ছেদ পড়লো না।

একপ্রকার পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নই এই গ্রাম কীইবা এমন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? আর প্রাণ বাঁচাতে তাদের কি কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে? কি সেই সিদ্ধান্ত?
শেষ পর্যন্ত আদতে কি হয়? জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে ছোট্ট উপন্যাসিকা ‘যক্ষ’।

শুরু থেকেই দারুণ আগ্রহ জাগানিয়া কাহিনী। বইটি পড়া শুরু থেকে যেন এক অদৃশ্য অচেতন ঘোরের মধ্যে ডুবন স্নান করছিলাম। বইটি পড়লে আপনি রহস্য থেকে শুরু করে অবিরত নানা অবাস্তব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। একেক পর এক উত্তেজনা, প্রবল রহস্যে ঘেরা বইটি পড়লে আপনারা এক কথায় আনন্দিত হবেন এবং বইটি আপনাদের উপভোগ্য করে তুলবে বলে আশা রাখি। অসাধারণ প্লট এবং রহস্য-রোমাঞ্চ- আ্যাডভেঞ্চারস ও প্রবল উত্তেজনার সংমিশ্রণে বইটি হয়েছে সুখপাঠ্য। যদি আপনিও এক ভয়ংকর অভিযাত্রার সম্মুখীন হতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে গ্রন্থটি আপনারই জন্য অপেক্ষা করছে।

অনেক সময় একটি উপন্যাসের ভালো প্লট থাকা সত্ত্বেও শেষ অবধি সেটি ভালো হয়ে উঠতে পারে না, যদি-না সেটির স্টোরি টেলিং ভালো হয়। আর এই স্টোরি টেলিং পুরোপুরি নির্ভর করে লেখকের দক্ষতার উপর। পাঠকের পড়ার গতি নির্ভর করে স্টোরি টেলিং কতটা ভালো হয়েছে তার উপর। তাই একটি ভালো উপন্যাসের প্লট নির্বাচনের পাশাপাশি স্টোরি টেলিং সুন্দর হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর সেদিক থেকে উপন্যাসটির স্টোরি টেলিং হয়েছে যথাযথ। তবুও লেখক, প্রথমদিকে কিছুটা ধীর গতি আর শেষদিকে একটু দ্রুত গতিতেই এগিয়েছেন বলে মনে হয়েছে।

আবার একটি উপন্যাসের অনেক বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট। উপন্যাসে কোন নামের সাথে কোন ক্যারেক্টার দিলে ভালো হয়, এ বিষয়টি নিয়ে লেখককে অনেক ভাবতে হয়। কোনও ক্যারেক্টারের কথা ও কাজের সাথে মিল রেখে নাম দেওয়াটাও লেখকের দক্ষতা। সাধারণত এই বিষয়ে ষোলোআনা দক্ষতা খুব কম লেখকই অর্জন করতে পারে। তবে লেখক এখানে মোটামুটি ক্যারেক্টারের সাথে মিল রেখেই নাম দিতে পেরেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।।

সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে লেখকের লেখনভঙ্গী। প্রতিটা বিষয়ের উপর লেখকের মনোরম ও সাবলীল ভাষার সাথে কাহিনি ও বিশ্লেষণের ভঙ্গিমা প্রকাশ আমার খুব চমৎকার লেগেছে। মনে হয়েছে হৃদয়ের মাধুর্যতা দিয়ে লেখাগুলো আলতো আলতো করে যত্নের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে বিশ্লেষণগুলো খুবই যত্নের সাথে সময়সাপেক্ষভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনের মতো একটা প্রচ্ছদ হয়েছে। বইয়ের লেখনশৈলী এবং মূল পটভূমি বা বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করেই প্রচ্ছদ অনেক নিপুণতার সাথে যত্নশীলভাবে তৈরী করা হয়েছে।

সবশেষে বলবো, একবসায় শেষ করার জন্য দারুণ একটা বই। একদম নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top