বিরাজ বৌ PDF Download শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বিরাজবৌ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৩২৩ বঙ্গাব্দের পৌষ ও মাঘ সংখ্যায় উপন্যাসখানি প্রকাশিত হয়। বাংলার চিরকালীন বধু বিরাজ যে তার জীবন উৎস্বর্গ করে। শরৎ সাহিত্যের মুল শাখা হল উপন্যাস। শরৎচন্দ্রের মত সফল উপন্যাসিক বাংলা সাহিত্যে আর কেউ নেই। তার উপন্যাসের পাত্র পাত্রীরা একদম গ্রামীণ লোকজন। সেখানে শহুরে মানুষদের আনাগোনা কম।
গ্রামীণ চরিত্রের এমন অসাধারণ নিখুঁত বর্ননা আর কোন লেখক বোধহয় কমই দিতে পেরেছেন। বাংলা সাহিত্যে অনেক বিখ্যাত উপন্যাস রয়েছে কিছু বিখ্যাত লেখকদের তবে শরৎচন্দ্রের প্রায় প্রতিটি উপন্যাসই বিখ্যাত।
বিরাজ বৌ বই
বিরাজ মোহীনি ছিল ছিল পীতাম্বরের বউ। নীলাম্বর ও পিতাম্বর দুই ভাই। তারমধ্যে পীতাম্বর বড় ভাই, কম বুদ্ধিসম্পন্ন, পরোপকারী। তবে সে গাঁজা সেবন করে। এরুপ ভাবে সম্পত্তি যেন নষ্ট না করে তাই ছোট ভাই বড় ভাইকে বিষয় সম্পত্তি ভাগ করে আলাদা করে দেয়। কারণ নীলাম্বর সংসারী ছিল।
বিরাজ মোহীনি এতে ভীষণ বিপদে পড়ে যায়। একে তো গাঁজা সেবন করে তার স্বামী তার ওপরে একমাত্র ননদ হরিমতির দায়িত্ব নিতে হয়। বিয়ে দেবার দায়িত্বও তাই তাদেরই দেখতে হয়। হরিমতির বিবাহের ও তার স্বামীর পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য পীতাম্বর বিষয় সম্পত্তি সবকিছু বন্ধক রেখে দেয়। ফলে দিনদিন আর্থিক সমস্যায় পড়তে থাকে তারা।
বিরাজ বৌ নাটক
এদিকে খরার কারণে পর পর কয়েক মৌসুম তাদের পর্যাপ্ত ফসল না হওয়ায় আর্থিক কষ্ট প্রকট হতে থাকে। আর ওদিকে গাঁজা সেবন কারী পীতাম্বর যে সংসারের প্রতি উদাসীন। তাই সমস্ত কষ্ট, ঋণের বোঝা একাই বইতে শুরু করে বিরাজ। তবুও সে সতী নারী। স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি সে বিক্রি করতে বাঁধা দেয়। সে সব দায় বহন করতে থাকে।
ফলে মুখের ভাত যোগানোর জন্য অন্যের বাড়িতে চাল পর্যন্ত কর্য করতে থাকে বিরাজ। এদিকে সেখানকার দমিদার রাজেন্দ্রকুমার বিরাজকে হটাৎ একদিন দেখে তার ওপর নজর পড়ে যায়। সে যে কোন মূল্যে পেতে চায় বিরাজকে। পুকুর পাড়ে সে পানি আনতে গেলে সেখানে জমিদার এসে মাছ ধরার উছিলায় বসে থাকে। সবসময়ই নজরে রাখে বিরাজকে।
বিরাজ একদিন খুব অপমান করে রাজেদ্রকুমার কে। সেইদিন রাতে বিরাজ অন্যের বাড়ি থেকে চাল এসে রান্না করে রাখে স্বামীর জন্য। গাঁজা খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা পীতাম্বর তাকে সন্দেহ করে পানের বাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। সে কষ্টে, শোকে, অপমানিত হয়ে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
বিরাজ বৌ রিভিউ
সে রাগের বশে জমিদারের বজরায় গিয়ে ওঠে। তার এই কাজের জন্য প্রথমত তার স্বামী দায়ী, তার এক পরিচিত প্রতিবেশী যে জমিদারের থেকে টাকা নিয়েছিল বিরাজকে কুমন্ত্রণা দেবার জন্য আর আরেকটি হল বিরাজের আকষ্মিক রাগ বা অভিমান। কিন্তু সে বুঝতে পারে সে ভুল করেছে। তৎক্ষনাৎ সে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে।
পড়ে সে জ্ঞান ফিরে নিজেকে ইমাম বাড়া হাসপাতালে আবিষ্কার করে। সেখান থেকে চলে গিয়ে সে খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত করতে থাকে। দিন দিন শরীর খারাপ হয়ে যায় তার। সে তারেকেশ্বর চলে এসে ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতে থাকে। স্বামীর ঘর ছেড়ে আসার জন্য সে চরম অনুতপ্ত হয়।
এভাবে বহুদিন কেটে যাবার পর পীতাম্বর কাশী আসে তার বোন হরিমতি কে নিয়ে। সেখানে সে বিরাজকে খুঁজে পায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ, বিরাজ তখন মৃত্যু প্রতীক্ষা করতে থাকে বিরাজ। শেষে স্বামীর কোলে মাথা রেখে মৃত্যু বরণ করে বিরাজ বউ। গল্পের প্রধান চরিত্র বিরাজের করুণ পরিণতি পাঠকের হৃদয়কে বিদারিত করে।
বিরাজ বৌ PDF
তার সামান্য ভুলের কারণে তাকে এত বড় শাস্তি পেতে হয়। বিরাজ চিরকালীন গ্রামীণ এক ত্যাগী বধু। স্বামী সংসারই তার কাছে সবকিছু। তার মত বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু শুধু ভুলবোঝাবুঝি তে তার এই কুরুণ পরিণতি।
তার এই উপন্যাসটি যখন প্রকাশিত হয় তখন বিবাহের উপহার হিসেবে বইটি খুব সমাদৃত হওয়ার কারণে বিশেষ ধরণের লাল কালিতে বইটি ছাপা হয়। এক কথায় বিরাজ বৌ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের একটি জলন্ত প্রদীপ। প্রতিটি বাংলা সাহিত্য প্রেমী পাঠকের বইটি পড়া উচিত।