বর্তমানের সনামধন্য থ্রিলার লেখকদের একনন হলে নাজিম উদ দৌলা। বেশ ভালোই জনপ্রিয় তিনি। বেড়িয়েছে বেশ কয়েকটা থ্রিলার উপন্যাস। সবগুলোই যেন জনপ্রিয়! তার লেখার ধরনটাই আলাদা! সেরকমই একটা জনপ্রিয় ঐতিহাসিক থ্রিলার ‘ব্লাডস্টোন’। যারা বইটা এখনো পড়েনি তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বইটির পিডিএফ ফাইল পড়ে ফেলতে পারেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
দিন-দুপুরে চুরি হয়ে গেলো মহামূল্যবান “ব্লাডস্টোন”। চুরির জায়গায় পাওয়া গেছে ছোট্ট একটি চিরকুট, যাতে লেখা – “অ্যামিতিস তোমাকে ভালোবাসি”। চুরিটা হলো হোটেল র্যাডিসনে প্রদর্শনী উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের চোখের সামনে! কিন্তু তারা কেউ সেটা মনে করতে পারছে না! ‘প্রফেসর ডাবল আর’ খ্যাত ইতিহাসের শিক্ষক ড. রুদ্র রাশেদের শরনাপন্ন হলেন ইন্সপেক্টর হালিম বাধ্য হয়ে। তদন্ত শুরু করলেন দু’জনে মিলে। তাঁদের দুজনের মিলিত তদন্তে খুলে গেলো আড়াই হাজার বছর আগের এক অনন্ত রহস্যের দুয়ার!
ব্লাডস্টোন হলো একটা পাথর। নাম শুনেই অবশ্য বুঝা যায়। জিনিসটা একটা অভিশাপ! অথচ সেটার পিছনে ছুটছে মানুষ! এর সাথে জড়িয়ে আছে মিডিয়ান রাজকন্য অ্যামিতিস ও ব্যাবিলন সম্রাট নেবুচাদনেজারের প্রেম কাহিনী, আরও জড়িয়ে আছে মহাবীর আলেক্সান্ডারের মৃত্যু রহস্য, জড়িয়ে আছে মুঘল সাম্রাজ্য, বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন আর কিংবদন্তি নিকোলো পাগানিনির সুরের সাধনার ইতিহাস!
যুগে যুগে এই অভিশাপের বলি হয়েছে কতোশতো মানুষ, হয়েছে যুদ্ধ, বিদ্রোহ, রয়েছে কতশত চক্রান্ত। কোথায় এসব রহস্যের সমাধান? আদেও কি আছে? যদি এসবের সমাধান জানতে চান, পড়ে ফেলতে হবে ব্লাডস্টোন! এককথায় দারুন একটা বই। এই জনরাটাও প্রিয় আমা। ঐতিহাসিক থ্রিলার। বইটা যখন পড়ছিলাম মনে হচ্ছিলো কোনো ইতিহাসের সাগরে ডুব দিয়েছি। সেখান থেকে বের হবার উপায় নেই আমার! তাছাড়া ঐতিহাসিক থ্রিলার হলেও সেরকম ইতিহাসের কোনো কাঠখোট্টা বর্ণনা দেননি। মূলত ইতিহাসের সাথে লেখক নিজের কল্পনার মিশ্রন দিয়ে আলাদা একটা ফিকশন তৈরি করে ফেলেছেন যেন। মানে অনেকটা এই টাইপেরই আর কি!
বইয়ের কাহিনী আবর্তীত হয়েছে তিনটি ধাপে। অবশ্য সব ঐতিহাসিক থ্রিলারেই ব্যাপারটা দেখা যায়। কিছু বর্তমান, কিছু ইতিহাস। তবে এখানে আছে তিনটা! আগেই বলা ভালো প্রথম ধাপে একটু বেশি ইতিহাসের বর্ণনা আছে। আমি ব্যক্তিরা ভাবে মনে করি কাহিনীর জন্য সেটা প্রয়োজনীয় ছিল। তাছাড়া যারা ইতিহাস একটু হলেও ভালোবাসে তাদেএ জন্য এটা কোনো ব্যাপার না। গোগ্রাসে গিলা যাবে সেসব!
বইয়ের মূল আকর্ষন হচ্ছে গিয়ে দ্বিতীয় ও তৃত্বীয় ধাপটা। এখানেই কাহিনীর আসল মজা। আছে হালকা প্রেম ভালোবাসাও। যা ঐতিহাসিক থ্রিলারকে যেন নতুন এক প্রান দিয়েছে! ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই বটে। তবে আমার ভালো লেগেছে! বইয়ের শেষে ছিল মোড় ঘুরানো টুইস্ট। এমন টুইস্ট যে পাঠক সেটা কল্পনাও করতে পারবে না! আর এখানেই লেখকের সার্থকতা।
চরিত্র
চরিত্রের কথা যদি বলি তাহলে এখানে ছিল অনেক অনেক চরিত্র। কারন বইটা তিনটা ধাপে এগোতে হয়েছে। এই তিনটা ধাপকে জোড়ালো ভাবে উপস্থাপন ও কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনতে হয়েছে নানা চরিত্র। এইসব চরিত্রে ভারসাম্য বজায় রেখে, প্রতিটা চরিত্র বিল্ড আপ করা কম কথা নয়। নাজিম ভাই সেটা পেরেছেন প্রতিটা চরিত্রই প্রাণ পেয়েছে তাঁর হাতের ছোঁয়ায়।
তবে উল্লেখ্য কয়েকটা চরিত্র আছে যেমন– ডিটেকটিভ মন্সুর হালিম। প্রফেসর ড. রুদ্র রাশেদ। এগুলো বর্তমানের চরিত্র। অন্যগুলো বলতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে! সবশেষে বলবো, অসাধারণ একটা বই ব্লাডস্টোন। যারা একটু হলেও ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী তাদের জন্য দারুণ একটা বই।