সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা। ১৯৬৫ সালে ডিসেম্বর মাসের সন্দেশ পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ফেলুদা’র গোয়েন্দাগিরি’ প্রকাশিত হয়। যা পরের আরো দুটি সংখ্যার মাধ্যমে শেষ হয়। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫ টি সম্পূর্ণ এবং ৪টি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
ফেলুদার প্রধান সহকারী তা খুঁড়তুতো ভাই তোপেস রঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে এবং লেখক লাল মোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু। ফেলুদার চরিত্র নির্মাণে সত্যজিৎ রায় তার ছোট বেলায় পড়া শার্লক হোমসের গোয়েন্দা গল্প দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তাই গল্পের অনেক জায়গায় আমরা ফেলুদার সাথে গোয়েন্দা হোমসের আর তার ভাই তোপসের সাথে ডাক্তার বন্ধু ওয়াটসনের অনেক মিল পাই।
ফেলুদা সমগ্রের মধ্যে কিছু বিখ্যাত গল্প ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি, কৈলাশ চৌধুরীর পাথর, শেয়াল দেবতা রহস্য, সমাদ্দারের চাবি, ঘুরঘুটিয়া ঘটনা ইত্যাদি। এই সমগ্রের মধ্যে আরো কিছু উপন্যাস রয়েছে যেমন- বাদশাহি আংটি, সোনার কেল্লা, গ্যাংটকে গন্ডগোল, বক্স রহস্য, কৈলাশ এ কেলেঙ্কারি, রয়েল বেঙ্গল রহস্য, জয় বাবা ফেলুনাথ ইত্যাদি রয়েছে। এসবের প্রতিটি গল্প এবং উপন্যাস এ রয়েছে রহস্য উন্মোচন, রোমাঞ্চ আর গোলকধাঁধা পূর্ণ কাহিনী।
কৈলাশ চৌধুরীর পাথর গল্পে তোপসে ও তার বাবার সাথে লখনউয়ের বড়া ইমামবাড়ার নিকট বসবাসরত তাদের এডভোকেট আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে তারা ড. শ্রীবাস্তব এর সাথে দেখা করেন, যার বাড়িতে সম্পত্তি ডাকাতির চেষ্টা করা হয়েছিল। তার বন্ধু পেয়ারেলাল কতৃক প্রদত্ত একটি অমূল্য আংটি চুরির চেষ্টা করা হয় বলেই সবার ধারণা।
আংটি টি মুঘল সম্রাট আওরোঙ্গজেব এর। আবারো ডাকাতির ভয়ে তিনি আংটিটি তার বন্ধুর বাসায় রেখে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আংটি টি সেখান থেকেও চুরি হয়ে যায়। এরই মধ্যে ফেলুদা ডাক্তারের প্রতিবেশী বনবিহারী বাবুর সাথে দেখা করেন, যিনি নিজের বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা নির্মাণ করেন। সেখানে তিনি কুমির, আফ্রিকান বাঘ, হায়েনা, রাটলস্নেক, কাঁকড়া বিছে ও ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা পোষেন।
ফেলুদা পেয়ারেলালের ছেলে মহাবিরের সাথেও দেখা করেন, তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। অনেকে মনে করেন তার বাবার মৃত্যুর পেছনে তার হাত রয়েছে। এর মধ্যে তারা লক্ষ্মণ ঝুলা মন্দির ও হরিদ্বার যান।
এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়ে যায় যে, আংটি টা আসলে ফেলুদা নিজের কাছেই রেখেছেন নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। এক যাত্রা পথে ফেলুদা ও তোপসে বনবিহারী বাবুর গাড়িতে করে যায় এবং বুঝতে পারে বনবিহারী বাবুই এর পিছনের মূল হোতা। সে ফেলুদা ও তোপসে কে আটকে ফেলে।
কিন্তু ফেলুদা তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মরিচের গুড়া অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে বনবিহারী বাবু ও তার সহকারী গনেশ গুপ্তকে আটক করে। তোপসের কমবয়সকালীন সময়ে বাদশাহি আংটির মতো আর কোন রোমাঞ্চকর উপন্যাস নেই। ফেলুদা সিরিজের সবগুলো গল্পই এমন রোমাঞ্চে ভরপুর। এমন সব রোমাঞ্চকর গল্প, উপন্যাস পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।