লোলিটা PDF Download ভ্লাদিমির নভোকেভ

“লোলিটা” বইটি লিখেছেন রাশিয়ান লেখক ভ্লাদিমির নভোকেভ । বইটির যথার্থ প্রকাশকাল ১৯৫৮। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নভোকেভের খ্যাতি পৃথিবীময় ছড়িয়ে যায়। উপন্যাসটি বিংশ শতকের একটি বিতর্কিত উপন্যাস। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন হামবার্ট নামের এক মধ্যবয়সী বৃদ্ধ লোক যার যৌনলালসা নয় থেকে চৌদ্দ বছর বয়সের মেয়েদের প্রতি সীমাবদ্ধ।
তবে বইটি অনেক পাঠক পর্নোগ্রাফির সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ বইটিতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যৌনতার বিষয়গুলা ফুটে উঠেছে। কিন্তু সাধারন পর্নোগ্রাফি ও বইটির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পর্নোগ্রাফি জাতীয় বইয়ে প্রধান থাকে মধ্যবিত্ত মানসিকতা।
লোলিটা ভ্লাদিমির নভোকেভ
ব্যবসা করার তীব্র প্রবণতা, অশ্লীলতা ও যৌনতার প্লাবন এমন ভাবে ছড়িয়ে থাকে এত উলঙ্গ ভঙ্গিতে, যে যৌন সহবাসের ব্যাপক বর্ণনা থাকে যে পাঠক শেষ করার জন্য গোয়েন্দা গল্পের মত আকর্ষণ বোধ করেন। কিন্তু বইটিতে অন্য এক ধরনের ফ্লেভার আছে যা আপনাকে বইটির ভেতরে টেনে নিয়ে যাবে যা পর্নোগ্রাফি থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করে।
লোলিটা বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র হামবার্ট এর জবানবন্দিতে বলা হয়েছে। হামবার্ট এর জন্ম ১৯১০ সালে প্যারিতে। তার বাবা একজন সুইস নাগরিক। মা মারা যাবার পরে এবং বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে হামবার্ট পুরোপুরি একলা হয়ে পড়ে। তার স্বেচ্ছাচারিতা জীবনের সঙ্গে বয়স বাড়ার সাথে সাথে উঠে আসে যৌনতা।
হামবার্ট এর বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে আলাপচারিতা খুব সহজে জমে তার বাহ্যিক গঠন এর কারণে। জীবনের প্রথম প্রেমিকা অ্যানাবেল এর সাথে তার খুব সুন্দর মুহূর্ত গুলাই কাটতে শুরু করেছিল। কিন্তু এনাবলের হঠাৎ মৃত্যু তার মনে গভীর শোকের সঞ্চার করে। রাস্তার সস্তা যৌনকর্মীদের সঙ্গে হামবার্ট লিপ্ত হতে থাকে আস্তে আস্তে।
যখন হামবার্ট লক্ষ্য করলো জীবন তার এভাবে চলবে না ঠিক তখনই সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্থানীয় এক ডক্টরের মেয়ে ভ্যালেরিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। ভ্যালেরিয়ার সঙ্গে সুখের সংসার করতে থাকলেও তার মাথায় ঘুরতে থাকে নয় থেকে চৌদ্দ বছর বয়সের মেয়েদের চঞ্চলতা।
ভ্যালেরিয়ার সাথে সুখের সংসার তাঁর টিকে না কারণ ভ্যালেরিয়া মেক্সিকোভিচ নামে এক রাশিয়ান যুবকের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ভ্যালেরিয়া হামবার্ট এর থেকে বিদায় নেয় এবং সে পুরোপুরি একা হয়ে ওঠে। পরে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি কিছুটা ঘটে থাকে। তার জন্য সে একটি ক্যাম্পে যায় এবং সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে সিদ্ধান্ত নেয় দূরে কোন একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে ঠিকঠাকমতো পড়াশোনা করবে।
হামবার্ট ম্যাকুর বাড়ি ভাড়া করে। স্টেশনে যখন ম্যাকু তাকে নিতে আসে তখন জানায় যে ম্যাকুর আগুনে পুড়ে গিয়েছে। সেজন্য ম্যাকু সাহেব নামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওঠায় যেখানে পরিচিত হয় আমাদের গল্পের কেন্দ্রীয় নায়িকা লোলিটার সঙ্গে। হামবার্ট এর বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে ললিতা তার সংস্পর্শে আসতে থাকে।
একসময় লেখক লোলিটাকে ভালোবেসে ফেলে কিন্তু যখন লোলিটার মা বুঝতে পারে কোন একটা ব্যাপার তাদের মধ্যে চলেছে তখন হেজ লোলিটাকে ক্যাম্পে শিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয় এবং হামবার্টকে শার্লট হেজ বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর না হলে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। হামবার্ট ললিতাকে পাওয়ার জন্য হেজকে কে বিয়ে করে।
একসময় শার্লট জানতে পারে ললিতার ব্যাপারে। শার্লট লোলিটার থাকার ব্যবস্থা করে সাবধানতা করার জন্য একটি মেইল করতে যাই এবং দূর্ঘটনাবশত কার অ্যাক্সিডেন্টে হেজ মারা যায়। দায়িত্ব হিসেবে হামবার্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে তার মনের রানী ললিতাকে। হামবার্ট লোলিটাকে নিয়ে দুই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে থাকে।
হামবার্ট ললিতাকে ক্যাম্প থেকে তুলে নেয় এবং তার মায়ের একটা বড় ধরনের অপারেশন হবে বলে তাকে বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে হোটেল “এনচ্যান্টেড হান্টার্স” এ গিয়ে উঠে। ললিতার পুরনো প্রেম আবার জেগে ওঠে তার বাবা নামক প্রেমিকের প্রতি। ললিতা নিজেকে তার প্রেমিকের হাতের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়।
পাঠকদের মনে অনেকেই বিরক্তি জাগতে পারে যে একজন সৎ বাবার সঙ্গে একটা মেয়ের সম্পর্ক কেন্দ্র করে। এটি এমন একটা ব্যাপার যে অনেকের গায়ে রি রি করতে পারে। কিন্তু আরো চমক আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে তাই বইটি পড়ার জন্য আপনাদের আরো গভীরে যেতে হবে।
দুই বছরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাতে লোলিটা অনেক হাঁপিয়ে ওঠে। অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়ে যায় লোলিটা। একসময় সে তার পিতা নামক প্রেমিকের সঙ্গে বিরক্ত বোধ করতে থাকে। সে বাইরের অন্যান্য বন্ধুবান্ধব এবং পুরুষ সঙ্গীদের সাথে মিশতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হামবার্ট একজন প্রেমিকা এবং বাবা হিসেবে বিষয়টি মেনে নিতে পারে না।
সবাই যেন লোলিটার রুপসুধা গিলে খাচ্ছে এমনটাই হামবার্ট তার চোখে প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু লোলিটা একগুঁয়ে এবং জেদি হওয়ায় হামবার্ট এর কোনো চাওয়া-পাওয়াকে মূল্যায়ন করেনা। হামবার্ট এর এই কয়েক বছরে বিভিন্ন হোটেলে থাকা, বিভিন্ন ধরনের খাবার দাবার, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী,লোলিটার চাওয়া-পাওয়া পূরণে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পরিমাণে খরচ করতে থাকে তার মন জয়ের জন্য।
লোলিটাকে একটি নির্দিষ্ট স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয় সেখানে ললিতা পড়াশোনা করতে থাকে এবং নাটক করতে থাকে। যখন সে জায়গাতেও বিরক্ত হয়ে যায় তখন তারা সেই জায়গা পরিবর্তন করে। পথিমধ্যে দেখতে পাই তাদেরকে কেউ যেন অনুসরণ করছে। হামবার্ট আস্তে আস্তে বুঝতে পারে যে সত্যি তাদেরকে কেউ একজন অনুসরণ করছে।
তারা নতুন এক জায়গায় গিয়ে উঠে এবং সেই নতুন আবহাওয়াতে ভ্রমণের কারণে লোলিটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লোলিটা যখন সুস্থ হয়ে যায় তখন সেখান থেকে তার প্রেমিক বাবাকে না জানিয়ে পালিয়ে চলে যাই। এতে হামবার্ট নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। প্রায় তিন বছর পর চিঠি আসে ললিতার চিঠি আসে যে সে সন্তানসম্ভবা।
তার কিছু টাকার প্রয়োজন যা লেখা চিঠিতে উল্লেখ করে। হামবার্ট লোলিটার স্বামীর ঠিকানা ধরে খুঁজে ললিতার ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছায় এবং ললিতাকে আর্থিক সহায়তা করে। হামবার্ট জানতে চাই কে সেই ব্যক্তি যে তার লোলিটাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
ললিতা প্রথমদিকে বলতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে জানাই ক্লেয়ার কুইল্টি নামক এক নারী ব্যবসায়ী যিনি শিশুদেরকে ভালোবাসেন,বিশেষ করে লোলিটার বয়সী মেয়েদের। তিনি তাকে এই জীবন থেকে বের করে নিয়ে যেতে চাই বলে কুইলটি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যায়।আর লোলিটাও সেই জীবনে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল।
কুইলটি ভালো লোক হলেও যৌনতার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান সাংঘাতিক। লোলিটা তা বুঝতে পেরে সেই পরিবেশ থেকে পালিয়ে আসে এবং একটি হোটেলের কাজ করে। সেখানে পরিচয় হয় ডিক এর সঙ্গে। তারপরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লোলিটার সাথে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেই লোলিটা যখন হামবার্টকে স্পর্শ করতে যায় তখন হামবার্ট তাকে নিষেধ করে।
ললিতার স্বামী একজন ভালো মানুষ ছিলেন। পেশায় একজন প্রকৌশলী। তাই তার স্বামীর উপরে কোন অভিযোগ না থাকায় হামবার্ট সেখান থেকে বিদায় নিয়ে ক্লেয়ার কুইলটির বাড়িতে যাই এবং সেখানে সে তাকে হত্যা করে। হামবার্ট যখন হত্যা করে ফিরছিল তখন তার মনের মধ্যে লোলিটার প্রতি যে ভালোবাসা তা পুনরায় জেগে উঠে।
লোলিটা PDF
যে ভালোবাসা তাকে ভালবেসে ছিল সেই ভালোবাসার লোলিটার শৈশব যে হামবার্ট কিভাবে নষ্ট করেছে তার জন্য তার ভেতর দুঃখ হতে থাকে। তার জন্য তার ভেতরে অনুশোচনা জাগে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং জেলখানাতে থাকা অবস্থায় হামবার্ট তার জবানবন্দিতে বইটি লেখেন এমনটি বলা হয়েছে বইটিতে।
বইটি একটি অসমাপ্ত প্রেমের উপন্যাস যা একটি ক্লাসিক উপন্যাস হিসেবে সেই সময়ে প্রচলিত হয়েছিল। বইটি বর্তমান সময়েরও একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। তাই বইটির প্রতিটি ক্ষেত্রে যে চমক আছে তা থেকে বঞ্চিত না এখনই পড়ে ফেলুন এই বইটি।